ETV Bharat / bharat

শুনতে ভালো লাগলেও অ-গান্ধি কংগ্রেস প্রধান নির্বাচন মোটেই সহজ নয় - A non-Gandhi Congress

প্রতিবেদনটি লিখেছেন অমিত অগ্নিহোত্রী ৷

কংগ্রেস়
কংগ্রেস়
author img

By

Published : Aug 27, 2020, 9:19 PM IST

Updated : Aug 29, 2020, 8:08 PM IST

দিল্লি, 26 অগাস্ট: অশোক গেহলত, মল্লিকার্জুন খাড়গে, গুলাম নবি আজাদ, মুকুল ওয়াসিনিক এমনকি সুশীলকুমার সিন্ডের মতো নেতার নাম উঠে আসছে অ-গান্ধি কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে । কিন্তু, তাঁরা কতটা সফল হবেন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে । এই পরীক্ষাটি করা কেন কঠিন, তার বেশ কিছু কারণ রয়েছে । যদি এর সুযোগও আসে, তাহলে তা কতটা কার্যকর হবে, তাও প্রশ্নাতিত ।

অ-গান্ধি কংগ্রেস প্রধান চিন্তাভাবনাটি মোটেই নতুন নয় । সোনিয়া গান্ধি 1198 সালে দলের প্রধান নির্বাচিত হওয়ার আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাও এবং সীতারাম কেশরী পর্যায়ক্রমে এই পদে ছিলেন। 2019 সালে লোকসভা ভোটে খারাপ ফলের দায় নিয়ে সভাপতির পদ ছেড়েছিলেন রাহুল গান্ধি । তার পরই অন্তবর্তী সভাপতি হিসেবে গেহলত, সিন্ডে, ওয়াসিনিক এবং খাড়গের নাম আলোচনায় উঠে এসেছিল । প্রাথমিক ভাবে কথা হচ্ছিল, যতদিন না রাহুল পদত্যাগ প্রতাহার করে সভাপতির দায়িত্ব নেন, ততদিন এঁদের মধ্যে কেউ একজন দায়িত্ব সামলাবেন ।

দলের কর্ম পদ্ধতিতে এই বর্ষীয়ান নেতাদের প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন । কিন্তু, দেশের নানা প্রান্তের দলীয় কর্মীদের কাছ থেকে মতামত গ্রহণের সময় এঁদের সম্পর্কে কোনও সর্ব-সম্মত মত পাওয়া যায়নি, যার দ্বারা পূর্ণ সময়ের বা স্বল্প সময়ের জন্য তাঁদের কাউকে নির্বাচন করা যায় । স্বাভাবিক ভাবেই রাহুল গান্ধির প্রস্তাবিত অ-গান্ধি কংগ্রেস প্রধান ভাবনায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি ।

ভাগ্যক্রম সোনিয়া গান্ধি অন্তবর্তীকালীন সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে সম্মত হন । তবে 19 বছর কংগ্রেসের দায়িত্ব সামলানোর পর একটি শর্তেই তিনি অন্তবর্তী সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন । শর্তটি ছিল এক বছরের মধ্যে পূর্ণ সময়ের একজন সভাপতি বেছে নেবে দল । 12 মাস কেটে গেল । কিন্তু, পূর্ণ সময়ের সভাপতি নির্বাচন বা রাহুল গান্ধির প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে স্পষ্ট রূপরেখা তৈরি করা সম্ভব হল না । রাহুল যেমন তাঁর মায়ের কাছ থেকে ব্যাটন নিতে অনিচ্ছুক, ঠিক তেমনই কিছু সোনিয়া-পন্থীর অভিমত, আগামী কিছুদিন অন্তবর্তীকালীন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব সামলান সোনিয়া গান্ধি ।

গত এক বছরে কংগ্রেস নেতারা অসহায় ভাবে দেখছেন BJP-র খেলা । তরুণ কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দলত্যাগ BJP-র অন্যতম বড় সাফল্য । তার পর মার্চ 2020-তে মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ সরকারের পতন । মধ্যপ্রদেশের মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল রাজস্থানেও । কংগ্রেসকে আঘাত এবং অশোক গেহলতের পতনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল । ‘অলস-বিরোধী’ এবং কংগ্রেসের দ্বিধাবিভক্ত রূপকেই প্রকাশ্যে আনে এই দুটি ঘটনা । এর পর 23 জন আশঙ্কিত-আতঙ্কিত প্রবীন নেতা সোনিয়া গান্ধিকে চিঠি দেন । আবেদন করেন একজন পূর্ণ সময়ের সভাপতি নির্বাচনের, যিনি দলের এই পতনকে রুখতে পারেন ।

24 অগাস্ট কংগ্রেস কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক বসে । সেই বৈঠকও নিয়ন্ত্রিত হয় গান্ধিদের দ্বারাই । সেই পটভূমিতে অ-গান্ধি প্রধান নির্বাচন ততক্ষণ অর্থহীন, যতক্ষণ না বিরোধী-মত জোটবদ্ধ হচ্ছে । কিন্তু, তার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম ।অ-গান্ধিকে দলের প্রধান হিসেবে রাখা এবং তাঁকে তাঁর যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ দেওয়ার পিছনে যুক্তি অত্যন্ত স্পষ্ট । কিন্তু, তা কার্যকর করা অত্যন্ত কঠিন ।

মোদ্দা কথাটি হল, কোনও একক নাম অতীতে উঠলেও এই প্রাচীন দলটিকে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ কখনই সম্ভব হয়নি । এটা সত্য যে, সব পক্ষকে এক সঙ্গে রাখা আজাদ, খাড়গে, সিন্ডে, সিবাল বা ওয়াসিনিকদের পক্ষে একদমই সহজ কাজ হবে না ।

অন্যদিকে, গান্ধিদের একাধিক ত্রুটি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন আগ্রাসী ভারতীয় জনতা পার্টির সমানে নিজেদের প্রতিবাদীমুখকে তুলে ধরতে পেরেছে কংগ্রেস । আর একটা কথা । কংগ্রেস সংগঠনটি কয়েক দশক ধরে এমনভাবেই গঠন করা হয়েছে যে, দলের কোনও অ-গান্ধি প্রধানকে যদি গান্ধিরা সমর্থন না করেন, তাহলে তিনি কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম হন না । এটা ঘটেছে তার কারণ, গান্ধিরা দলের কর্মী এবং নেতাদের উপর একটা প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন । আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, প্রধানমন্ত্রী মোদি বা কোনও প্রবীন BJP নেতাদের রাজনৈতিক আক্রমণের প্রথম লক্ষ্যই হচ্ছেন গান্ধিরা । অন্য কোনও বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা নন ।

যাই হোক, এটা কোনও দিনই সমর্থন যোগ্য নয়, যে গান্ধিরা আজীবন কংগ্রেসের নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন । কিন্তু, দলের সংগঠনের আমূল পরিবর্তন আনার কাজে অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করাটা তাঁদের প্রধান কর্তব্য । দ্রুত ক্ষত মেটানো অত্যন্ত জরুরি । যত দেরি হবে, ততই বিতর্ক তৈরি হবে এবং বর্তমানে সুপ্ত থাকলেও ভবিষ্যতে তা আবার নেতৃত্বের কাছে সংকট তৈরি করতে পারে । এর আভাস পাওয়া গিয়েছে আজাদের (23 জন স্বাক্ষকারীদের মধ্যে অন্যতম) মধ্যে । বিষয়টি নিয়ে তাঁকে যথাযথ পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে । স্বাভাবিক ভাবেই গান্ধীদের কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা রয়েছে ।

দিল্লি, 26 অগাস্ট: অশোক গেহলত, মল্লিকার্জুন খাড়গে, গুলাম নবি আজাদ, মুকুল ওয়াসিনিক এমনকি সুশীলকুমার সিন্ডের মতো নেতার নাম উঠে আসছে অ-গান্ধি কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে । কিন্তু, তাঁরা কতটা সফল হবেন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে । এই পরীক্ষাটি করা কেন কঠিন, তার বেশ কিছু কারণ রয়েছে । যদি এর সুযোগও আসে, তাহলে তা কতটা কার্যকর হবে, তাও প্রশ্নাতিত ।

অ-গান্ধি কংগ্রেস প্রধান চিন্তাভাবনাটি মোটেই নতুন নয় । সোনিয়া গান্ধি 1198 সালে দলের প্রধান নির্বাচিত হওয়ার আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাও এবং সীতারাম কেশরী পর্যায়ক্রমে এই পদে ছিলেন। 2019 সালে লোকসভা ভোটে খারাপ ফলের দায় নিয়ে সভাপতির পদ ছেড়েছিলেন রাহুল গান্ধি । তার পরই অন্তবর্তী সভাপতি হিসেবে গেহলত, সিন্ডে, ওয়াসিনিক এবং খাড়গের নাম আলোচনায় উঠে এসেছিল । প্রাথমিক ভাবে কথা হচ্ছিল, যতদিন না রাহুল পদত্যাগ প্রতাহার করে সভাপতির দায়িত্ব নেন, ততদিন এঁদের মধ্যে কেউ একজন দায়িত্ব সামলাবেন ।

দলের কর্ম পদ্ধতিতে এই বর্ষীয়ান নেতাদের প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন । কিন্তু, দেশের নানা প্রান্তের দলীয় কর্মীদের কাছ থেকে মতামত গ্রহণের সময় এঁদের সম্পর্কে কোনও সর্ব-সম্মত মত পাওয়া যায়নি, যার দ্বারা পূর্ণ সময়ের বা স্বল্প সময়ের জন্য তাঁদের কাউকে নির্বাচন করা যায় । স্বাভাবিক ভাবেই রাহুল গান্ধির প্রস্তাবিত অ-গান্ধি কংগ্রেস প্রধান ভাবনায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি ।

ভাগ্যক্রম সোনিয়া গান্ধি অন্তবর্তীকালীন সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে সম্মত হন । তবে 19 বছর কংগ্রেসের দায়িত্ব সামলানোর পর একটি শর্তেই তিনি অন্তবর্তী সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন । শর্তটি ছিল এক বছরের মধ্যে পূর্ণ সময়ের একজন সভাপতি বেছে নেবে দল । 12 মাস কেটে গেল । কিন্তু, পূর্ণ সময়ের সভাপতি নির্বাচন বা রাহুল গান্ধির প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে স্পষ্ট রূপরেখা তৈরি করা সম্ভব হল না । রাহুল যেমন তাঁর মায়ের কাছ থেকে ব্যাটন নিতে অনিচ্ছুক, ঠিক তেমনই কিছু সোনিয়া-পন্থীর অভিমত, আগামী কিছুদিন অন্তবর্তীকালীন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব সামলান সোনিয়া গান্ধি ।

গত এক বছরে কংগ্রেস নেতারা অসহায় ভাবে দেখছেন BJP-র খেলা । তরুণ কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দলত্যাগ BJP-র অন্যতম বড় সাফল্য । তার পর মার্চ 2020-তে মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ সরকারের পতন । মধ্যপ্রদেশের মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল রাজস্থানেও । কংগ্রেসকে আঘাত এবং অশোক গেহলতের পতনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল । ‘অলস-বিরোধী’ এবং কংগ্রেসের দ্বিধাবিভক্ত রূপকেই প্রকাশ্যে আনে এই দুটি ঘটনা । এর পর 23 জন আশঙ্কিত-আতঙ্কিত প্রবীন নেতা সোনিয়া গান্ধিকে চিঠি দেন । আবেদন করেন একজন পূর্ণ সময়ের সভাপতি নির্বাচনের, যিনি দলের এই পতনকে রুখতে পারেন ।

24 অগাস্ট কংগ্রেস কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক বসে । সেই বৈঠকও নিয়ন্ত্রিত হয় গান্ধিদের দ্বারাই । সেই পটভূমিতে অ-গান্ধি প্রধান নির্বাচন ততক্ষণ অর্থহীন, যতক্ষণ না বিরোধী-মত জোটবদ্ধ হচ্ছে । কিন্তু, তার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম ।অ-গান্ধিকে দলের প্রধান হিসেবে রাখা এবং তাঁকে তাঁর যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ দেওয়ার পিছনে যুক্তি অত্যন্ত স্পষ্ট । কিন্তু, তা কার্যকর করা অত্যন্ত কঠিন ।

মোদ্দা কথাটি হল, কোনও একক নাম অতীতে উঠলেও এই প্রাচীন দলটিকে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ কখনই সম্ভব হয়নি । এটা সত্য যে, সব পক্ষকে এক সঙ্গে রাখা আজাদ, খাড়গে, সিন্ডে, সিবাল বা ওয়াসিনিকদের পক্ষে একদমই সহজ কাজ হবে না ।

অন্যদিকে, গান্ধিদের একাধিক ত্রুটি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন আগ্রাসী ভারতীয় জনতা পার্টির সমানে নিজেদের প্রতিবাদীমুখকে তুলে ধরতে পেরেছে কংগ্রেস । আর একটা কথা । কংগ্রেস সংগঠনটি কয়েক দশক ধরে এমনভাবেই গঠন করা হয়েছে যে, দলের কোনও অ-গান্ধি প্রধানকে যদি গান্ধিরা সমর্থন না করেন, তাহলে তিনি কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম হন না । এটা ঘটেছে তার কারণ, গান্ধিরা দলের কর্মী এবং নেতাদের উপর একটা প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন । আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, প্রধানমন্ত্রী মোদি বা কোনও প্রবীন BJP নেতাদের রাজনৈতিক আক্রমণের প্রথম লক্ষ্যই হচ্ছেন গান্ধিরা । অন্য কোনও বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা নন ।

যাই হোক, এটা কোনও দিনই সমর্থন যোগ্য নয়, যে গান্ধিরা আজীবন কংগ্রেসের নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন । কিন্তু, দলের সংগঠনের আমূল পরিবর্তন আনার কাজে অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করাটা তাঁদের প্রধান কর্তব্য । দ্রুত ক্ষত মেটানো অত্যন্ত জরুরি । যত দেরি হবে, ততই বিতর্ক তৈরি হবে এবং বর্তমানে সুপ্ত থাকলেও ভবিষ্যতে তা আবার নেতৃত্বের কাছে সংকট তৈরি করতে পারে । এর আভাস পাওয়া গিয়েছে আজাদের (23 জন স্বাক্ষকারীদের মধ্যে অন্যতম) মধ্যে । বিষয়টি নিয়ে তাঁকে যথাযথ পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে । স্বাভাবিক ভাবেই গান্ধীদের কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা রয়েছে ।

Last Updated : Aug 29, 2020, 8:08 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.