ETV Bharat / bharat

"কংগ্রেসের নেতৃত্ব থাকা উচিত কোনও গান্ধির হাতেই, বন্ধু খুঁজে লড়া উচিত BJP-র সঙ্গে"

আমার পছন্দ যে কোনও একজন গান্ধি, পরিবার যাঁকে খুশি বাছতে পারে। ভারতীয় জনতা পার্টিকে হারানোর জন্য জোটই একমাত্র রাস্তা। বললেন মণিশংকর আইয়ার৷ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অমিত অগ্নিহোত্রী৷

author img

By

Published : Sep 4, 2020, 6:13 AM IST

Updated : Sep 4, 2020, 10:19 AM IST

A Gandhi should lead Congress
মণিশংকর আইয়ার

কংগ্রেসের অন্দরে নবীন বনাম প্রবীণ বিতর্ক এবং নেতৃত্ব নিয়ে সংকট এখন সংবাদের শিরোনামে । সমস্যাটা আসলে কী?

আসলে সমস্যাটা নেতৃত্ব নিয়ে নয়। ঘটনাচক্রে সেটা প্রকাশ্যে এসেছে। এমনকী যে 23 জন প্রবীণ নেতাও (মত বিরোধের কথা জানিয়ে যাঁরা সম্প্রতি সোনিয়া গান্ধিকে চিঠি লিখেছিলেন ) এই কথা কখনও বলেননি যে কংগ্রেসের সমস্যার মৌলিক সমাধান নেতৃত্বের বদলের মধে্যই রয়েছে। যদিও যদি তাঁরা মনে করেন যে, সমস্ত সমস্যার মূলে রয়েছে সেই নেতৃত্বের ইশুই, তাহলে তাঁদের যে কেউ প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতে পারে যখন AICC-র অধিবেশন হবে। আমি শুধু এইটুকু আশা করতে পারি যে, জিতেন্দ্র প্রসাদের মতো পরিণতি তাঁদের হবে না৷ সোনিয়া গান্ধির 9400 ভোটের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যিনি মাত্র 94টি ভোট পেয়েছিলেন।

আসলে সমস্যাটা রয়েছে অন্য জায়গায়। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় এবং স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম 20 বছরে যে সামাজিক দলগুলি কংগ্রেসের সঙ্গে একজোট হয়ে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল, 1967 সাল থেকে তারা নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই গড়ে তোলার তাগিদে মূল দল থেকে বিচ্ছিন্ন তথা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, 1990 সালে মণ্ডলের পর সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণিগুলির মধে্য বেশ কিছু শ্রেণি একত্রিত হয়ে আলাদা আলাদা দল গড়ে তোলে। আর তখনই জানা যায় পিছিয়ে পড়া শ্রেণিগুলির মধে্য সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে যাদবরা। আর তপশিলি জাতির শ্রেণিদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে যাতাভারা। বাবরি মসজিদের (1992) পতনের পরও যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, তার জেরে বহু মুসলিম কংগ্রেসের সঙ্গ ত্যাগ করেছে।

কংগ্রেস নেতা মণিশংকর আইয়ারের সঙ্গে কথা বললেন সিনিয়র সাংবাদিক অমিত অগ্নিহোত্রী

তাই নেতৃত্বকে সমস্যার নজরে দেখা ঠিক হবে না। আসলে সমস্যাটা অনেক গভীরে বিস্তৃত ৷ আমার মতে এর সমাধান কেবলমাত্র ওই সব সামাজিক দলগুলিকে কংগ্রেসের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনাই নয়। বরং আরও গুরুত্বপূর্ণ হল যে দলগুলি হয় ধর্ম বা ভাষা বা সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে আলাদা আলাদাভাবে গড়ে তোলা হয়েছে, তাদের ফের একজোট করা। কিন্তু তা করতে হলে অনুসরণ করতে হবে কেরল মডেল৷ যেখানে জোটের সদস্যপদ ঠিক করা হয় পূর্ববর্তী নির্বাচন শেষ হওয়ার পর পরই। এই দলগুলি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে এবং এটাও জানে যে, জোট ক্ষমতায় এলে কে, কোন পোর্টফোলিও পাবে।

কিন্তু জোট কেন দরকার? এই আঞ্চলিক দলগুলি কি কংগ্রেসের ছাতার তলায় থেকে কাজ করতে রাজি হবে?

ভারতীয় জনতা পার্টিকে হারানোর জন্য জোটই একমাত্র রাস্তা। আমার পরামর্শ, আঞ্চলিক দলগুলি কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে কাজ করুক। যদি আমরা একটুখানি ঝুঁকতে পারি আমরা জয় করতে পারব। আমরা যদি তাদের বলতে শুরু করি যে, তোমরা আমাদের নেতৃত্বের ছাতার তলায় আসো, তাহলে হতেই পারে যে তারা সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাবে না। কিন্তু আমরা যদি একটা সাধারণ বোঝাপড়া নিয়ে এগোই যে, কাজ শেষ হলে, এই জোটের নেতৃত্ব তারা দেবে, যারা সবচেয়ে বেশি আসন পাবে বা সেই সময় যে ফর্মুলা সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হবে, তা প্রয়োগ করি, তাহলে আমরা এই জোটের নেতৃত্বের বিবাদ দূরে সরিয়ে রেখে অন্তত এটুকু নিশ্চিত করতে পারি যে জোটটা হচ্ছেই। আমি বলছি, এখন প্রধান সদস্যপদ চেয়ে দাবিদাওয়া কোরো না। কাজ শেষ হলে যদি তা মেলে তবে তো ভালোই। কিন্তু এখন কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা নিয়ে বাদানুবাদ ঠিক নয়। আমার মনে হয়, BJP-র সঙ্গে লড়াই করার জন্য আমাদের কেরল স্টাইলে অল-ইন্ডিয়া-ইউনাইটেড ডেমোক্র‌্যাটিক ফ্রন্ট তৈরি করা প্রয়োজন।

পর পর দু’টো জাতীয় নির্বাচনে দল লোকসভায় নূন্যতম 10 শতাংশ (54) আসনও পায়নি৷ যাতে করে তারা বিরোধী দলের পদ পেতে পারে। কী বলবেন?

নিঃসন্দেহে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এমন আগে একাধিক বার হয়েছে৷ যে আমরা ব্যাকফুটে থেকেছি। আমাদের ক্ষেত্রে কাজ শেষ হওয়ার পর আমাদের নেতৃত্ব নিয়ে ভাবা উচিত। আমার জন্মরাজ্য তামিলনাড়ুতে 1967 সাল থেকে আমরা ক্ষমতায় নেই৷ আগামী 600 বছরেও আসতে পারব না। কিন্তু তামিলনাড়ুতে এমন কোনও গ্রাম নেই, যেখানে কেউ কংগ্রেসকে সমর্থন করতে প্রস্তুত নয়। সেই কারণেই আমাদের DMK এবং AIADMK-র মধে্য ভারসাম্যরক্ষাকারী হিসাবে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ এভাবেই আমরা অস্তিত্ত্ব টিকিয়ে রেখেছি। আমি যখন সংসদে 1991 সালে এসেছিলাম তখন আমাদের সঙ্গে AIADMK-র জোট তামিলনাড়ুতে 39টি আসনই জিতেছিল। সংসদীয় রাজনীতিতে কসরত করতে হয়। আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, আগে আমাদের সেটা চিহ্নিত করতে হবে৷ তার পর সমস্ত সামাজিক দলগুলিকে কংগ্রেসে ফিরিয়ে আনতে হবে।

এটা দীর্ঘমেয়াদী সমাধানসূত্র। এখন কি কংগ্রেসের কোনও নির্বাচিত সভাপতি প্রয়োজন?

এখন যে নেতৃত্ব আছে তাঁরা যদি দলের কর্মকাণ্ডে আরও বেশি উদে্যাগী হয় তাহলে তো ভালোই। আমি মনে করি না, যেখান থেকে যার উৎস, তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বেচারা রাহুল গান্ধি কংগ্রেসকে বিকল্প খুঁজে নেওয়ার সমস্ত সুযোগ দিয়েছেন। তিনি দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে বলেছেন যে আমি নেতৃত্ব থেকে সরে আসছি৷ আমি আমার মা (সোনিয়া গান্ধি) বা বোন (প্রিয়াঙ্কা গান্ধি ওয়াধেরা)-কে এই পদের ভার গ্রহণ করতে দেব না। কিন্তু তা সত্ত্বেও কংগ্রেসে কেউ তাঁর স্থান নিতে, কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেনি। BJP-র লক্ষ্য হল কংগ্রেস-মুক্ত ভারত৷ গান্ধি-মুক্ত কংগ্রেস সম্ভব হলেই তারা তাদের লক্ষে্য সফল হতে পারবে। কাজেই নেতৃত্বের ইশু নিয়ে আমাদের সময় নষ্ট করা উচিত নয়।

তাহলে আপনি বলতে চাইছেন, গান্ধিরা কংগ্রেসে অপরিহার্য? তাহলে দলকে মজবুত করার কী হবে?

তিন জন গান্ধির মধ্যে একজনকে যে শীর্ষে থাকতেই হবে, তা নিয়ে আমার মনে কোনও শঙ্কাই নেই। রাহুল যদি চান, তিনি থাকতেই পারেন। তিনি আগেও বলেছেন, দলের জন্য তিনি সব সময় হাজির থাকবেন। তাছাড়া কত সময় ধরেই বা আমরা কোনও অনিচ্ছুক ব্যক্তিকে নেতৃত্ব গ্রহণ করার জন্য জোর করতেই থাকব! হতে পারে কখনও তিনি নিজে মন পরিবর্তন করে ফেললেন বা প্রিয়াঙ্কা দায়িত্ব নিলেন অথবা নিজের অসুস্থতা সত্ত্বেও সোনিয়া গান্ধিই শীর্ষ পদ ধরে রাখলেন৷ সেটাও হতে পারে। দল হিসাবে আমাদের এটা নিয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে যে আমাদের শত্রু হল BJP৷ তাদের গেরুয়া ভাইয়েরা। বাকি সব কিছু আপেক্ষিক। যে সামাজিক দলগুলি আমরা হারিয়ে ফেলেছি তা ফিরে পাওয়ার জন্য আমাদের মজবুত জোট বাঁধতে হবে। কোনও একজন গান্ধির নেতৃত্বেই আমাদের পরবর্তী চার বছর লড়াই করতে হবে৷ দেখতে হবে, যদি এতে আশানুরূপ কোনও ফল পাওয়া সম্ভব হয়। লোকসভায় মাত্র 52 আসনে আমাদের নেমে আসার পিছনে কারণ এটা নয় যে আমাদের দল দুর্বল। বরং কারণ হল অ-BJP ভোট, যা 2019 সালে ছিল 63 শতাংশ কিন্তু বর্তমানে একেবারে ভগ্নাংশের হারে নেমে গিয়েছে। আমাদের আবার তা ফিরিয়ে আনতে হবে। কংগ্রেসে বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে আসবে যদি আমাদের কোনও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের আওতায় মজবুত এবং একজোট রাজনৈতিক দল হিসাবে দেখা শুরু হয়। আমি মনে করি, কোনও গান্ধিই তা করতে পারবেন। কংগ্রেসকে এতদিন ধরে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে গান্ধিদের পাঁচ প্রজন্মই৷ দলে যদি তা নিয়ে কোনও ঐক্য না থাকে তাহলে মনে হয়, এটাই সময় নতুন কাউকে বেছে নেওয়ার, যে এতদিন এই শীর্ষ পদে ছিল না।

অর্থাৎ প্রিয়াঙ্কা গান্ধি ওয়াধেরাই আপনার পছন্দ?

না। আমার পছন্দ যে কোনও একজন গান্ধি, পরিবার যাকে খুশি বাছতে পারে।

মাঝে কথা হয়েছিল, 2019 থেকে কোনও অ-গান্ধি কংগ্রেস সভাপতি হবেন। আপনার কী মনে হয়, তা ভালো বিকল্প হত ?

আমার তারুণে্য ইচ্ছে ছিল জনপ্রিয় হিন্দি ছবির অভিনেত্রী মধুবালা আমার হবেন। কিন্তু তা হয়নি। কংগ্রেসের প্রধান কোনও অ-গান্ধি হবেন, অনেকটা সেই ভাবনারই সমতুল। এমন কোনও অ-গান্ধি নেই যে এই পদের ভার সামলাতে পারবে৷ অন্তত যতদিন গান্ধিদের অস্তিত্ত্ব রয়েছে।

আর অন্তবর্তীকালীন নির্বাচন নিয়ে আপনার কী অভিমত?

প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি 1990-র দশকে এ নিয়ে বলতেন আর রাহুল এটা 2007 সাল থেকে বলে আসছেন। ভারতীয় যুব কংগ্রেস এবং ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রেও ও এটা কার্যকর করার চেষ্টা করেছিল। এটা নিয়ে কিছু বিতর্ক হয়েছিল তবে তা গৌণ ব্যাপার। সেখানে নানা ধরনের উদ্ভাবনী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমি আশা করি, 23 জন শীর্ষ নেতা এবং দলের বাকিরা যে যে প্রস্তাব দিয়েছেন, দল তার মধ্যে কিছু নিশ্চয়ই গ্রহণ করবে।

কংগ্রেসের অন্দরে নবীন বনাম প্রবীণ বিতর্ক এবং নেতৃত্ব নিয়ে সংকট এখন সংবাদের শিরোনামে । সমস্যাটা আসলে কী?

আসলে সমস্যাটা নেতৃত্ব নিয়ে নয়। ঘটনাচক্রে সেটা প্রকাশ্যে এসেছে। এমনকী যে 23 জন প্রবীণ নেতাও (মত বিরোধের কথা জানিয়ে যাঁরা সম্প্রতি সোনিয়া গান্ধিকে চিঠি লিখেছিলেন ) এই কথা কখনও বলেননি যে কংগ্রেসের সমস্যার মৌলিক সমাধান নেতৃত্বের বদলের মধে্যই রয়েছে। যদিও যদি তাঁরা মনে করেন যে, সমস্ত সমস্যার মূলে রয়েছে সেই নেতৃত্বের ইশুই, তাহলে তাঁদের যে কেউ প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতে পারে যখন AICC-র অধিবেশন হবে। আমি শুধু এইটুকু আশা করতে পারি যে, জিতেন্দ্র প্রসাদের মতো পরিণতি তাঁদের হবে না৷ সোনিয়া গান্ধির 9400 ভোটের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যিনি মাত্র 94টি ভোট পেয়েছিলেন।

আসলে সমস্যাটা রয়েছে অন্য জায়গায়। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় এবং স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম 20 বছরে যে সামাজিক দলগুলি কংগ্রেসের সঙ্গে একজোট হয়ে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল, 1967 সাল থেকে তারা নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই গড়ে তোলার তাগিদে মূল দল থেকে বিচ্ছিন্ন তথা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, 1990 সালে মণ্ডলের পর সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণিগুলির মধে্য বেশ কিছু শ্রেণি একত্রিত হয়ে আলাদা আলাদা দল গড়ে তোলে। আর তখনই জানা যায় পিছিয়ে পড়া শ্রেণিগুলির মধে্য সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে যাদবরা। আর তপশিলি জাতির শ্রেণিদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে যাতাভারা। বাবরি মসজিদের (1992) পতনের পরও যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, তার জেরে বহু মুসলিম কংগ্রেসের সঙ্গ ত্যাগ করেছে।

কংগ্রেস নেতা মণিশংকর আইয়ারের সঙ্গে কথা বললেন সিনিয়র সাংবাদিক অমিত অগ্নিহোত্রী

তাই নেতৃত্বকে সমস্যার নজরে দেখা ঠিক হবে না। আসলে সমস্যাটা অনেক গভীরে বিস্তৃত ৷ আমার মতে এর সমাধান কেবলমাত্র ওই সব সামাজিক দলগুলিকে কংগ্রেসের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনাই নয়। বরং আরও গুরুত্বপূর্ণ হল যে দলগুলি হয় ধর্ম বা ভাষা বা সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে আলাদা আলাদাভাবে গড়ে তোলা হয়েছে, তাদের ফের একজোট করা। কিন্তু তা করতে হলে অনুসরণ করতে হবে কেরল মডেল৷ যেখানে জোটের সদস্যপদ ঠিক করা হয় পূর্ববর্তী নির্বাচন শেষ হওয়ার পর পরই। এই দলগুলি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে এবং এটাও জানে যে, জোট ক্ষমতায় এলে কে, কোন পোর্টফোলিও পাবে।

কিন্তু জোট কেন দরকার? এই আঞ্চলিক দলগুলি কি কংগ্রেসের ছাতার তলায় থেকে কাজ করতে রাজি হবে?

ভারতীয় জনতা পার্টিকে হারানোর জন্য জোটই একমাত্র রাস্তা। আমার পরামর্শ, আঞ্চলিক দলগুলি কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে কাজ করুক। যদি আমরা একটুখানি ঝুঁকতে পারি আমরা জয় করতে পারব। আমরা যদি তাদের বলতে শুরু করি যে, তোমরা আমাদের নেতৃত্বের ছাতার তলায় আসো, তাহলে হতেই পারে যে তারা সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাবে না। কিন্তু আমরা যদি একটা সাধারণ বোঝাপড়া নিয়ে এগোই যে, কাজ শেষ হলে, এই জোটের নেতৃত্ব তারা দেবে, যারা সবচেয়ে বেশি আসন পাবে বা সেই সময় যে ফর্মুলা সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হবে, তা প্রয়োগ করি, তাহলে আমরা এই জোটের নেতৃত্বের বিবাদ দূরে সরিয়ে রেখে অন্তত এটুকু নিশ্চিত করতে পারি যে জোটটা হচ্ছেই। আমি বলছি, এখন প্রধান সদস্যপদ চেয়ে দাবিদাওয়া কোরো না। কাজ শেষ হলে যদি তা মেলে তবে তো ভালোই। কিন্তু এখন কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা নিয়ে বাদানুবাদ ঠিক নয়। আমার মনে হয়, BJP-র সঙ্গে লড়াই করার জন্য আমাদের কেরল স্টাইলে অল-ইন্ডিয়া-ইউনাইটেড ডেমোক্র‌্যাটিক ফ্রন্ট তৈরি করা প্রয়োজন।

পর পর দু’টো জাতীয় নির্বাচনে দল লোকসভায় নূন্যতম 10 শতাংশ (54) আসনও পায়নি৷ যাতে করে তারা বিরোধী দলের পদ পেতে পারে। কী বলবেন?

নিঃসন্দেহে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এমন আগে একাধিক বার হয়েছে৷ যে আমরা ব্যাকফুটে থেকেছি। আমাদের ক্ষেত্রে কাজ শেষ হওয়ার পর আমাদের নেতৃত্ব নিয়ে ভাবা উচিত। আমার জন্মরাজ্য তামিলনাড়ুতে 1967 সাল থেকে আমরা ক্ষমতায় নেই৷ আগামী 600 বছরেও আসতে পারব না। কিন্তু তামিলনাড়ুতে এমন কোনও গ্রাম নেই, যেখানে কেউ কংগ্রেসকে সমর্থন করতে প্রস্তুত নয়। সেই কারণেই আমাদের DMK এবং AIADMK-র মধে্য ভারসাম্যরক্ষাকারী হিসাবে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ এভাবেই আমরা অস্তিত্ত্ব টিকিয়ে রেখেছি। আমি যখন সংসদে 1991 সালে এসেছিলাম তখন আমাদের সঙ্গে AIADMK-র জোট তামিলনাড়ুতে 39টি আসনই জিতেছিল। সংসদীয় রাজনীতিতে কসরত করতে হয়। আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, আগে আমাদের সেটা চিহ্নিত করতে হবে৷ তার পর সমস্ত সামাজিক দলগুলিকে কংগ্রেসে ফিরিয়ে আনতে হবে।

এটা দীর্ঘমেয়াদী সমাধানসূত্র। এখন কি কংগ্রেসের কোনও নির্বাচিত সভাপতি প্রয়োজন?

এখন যে নেতৃত্ব আছে তাঁরা যদি দলের কর্মকাণ্ডে আরও বেশি উদে্যাগী হয় তাহলে তো ভালোই। আমি মনে করি না, যেখান থেকে যার উৎস, তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বেচারা রাহুল গান্ধি কংগ্রেসকে বিকল্প খুঁজে নেওয়ার সমস্ত সুযোগ দিয়েছেন। তিনি দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে বলেছেন যে আমি নেতৃত্ব থেকে সরে আসছি৷ আমি আমার মা (সোনিয়া গান্ধি) বা বোন (প্রিয়াঙ্কা গান্ধি ওয়াধেরা)-কে এই পদের ভার গ্রহণ করতে দেব না। কিন্তু তা সত্ত্বেও কংগ্রেসে কেউ তাঁর স্থান নিতে, কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেনি। BJP-র লক্ষ্য হল কংগ্রেস-মুক্ত ভারত৷ গান্ধি-মুক্ত কংগ্রেস সম্ভব হলেই তারা তাদের লক্ষে্য সফল হতে পারবে। কাজেই নেতৃত্বের ইশু নিয়ে আমাদের সময় নষ্ট করা উচিত নয়।

তাহলে আপনি বলতে চাইছেন, গান্ধিরা কংগ্রেসে অপরিহার্য? তাহলে দলকে মজবুত করার কী হবে?

তিন জন গান্ধির মধ্যে একজনকে যে শীর্ষে থাকতেই হবে, তা নিয়ে আমার মনে কোনও শঙ্কাই নেই। রাহুল যদি চান, তিনি থাকতেই পারেন। তিনি আগেও বলেছেন, দলের জন্য তিনি সব সময় হাজির থাকবেন। তাছাড়া কত সময় ধরেই বা আমরা কোনও অনিচ্ছুক ব্যক্তিকে নেতৃত্ব গ্রহণ করার জন্য জোর করতেই থাকব! হতে পারে কখনও তিনি নিজে মন পরিবর্তন করে ফেললেন বা প্রিয়াঙ্কা দায়িত্ব নিলেন অথবা নিজের অসুস্থতা সত্ত্বেও সোনিয়া গান্ধিই শীর্ষ পদ ধরে রাখলেন৷ সেটাও হতে পারে। দল হিসাবে আমাদের এটা নিয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে যে আমাদের শত্রু হল BJP৷ তাদের গেরুয়া ভাইয়েরা। বাকি সব কিছু আপেক্ষিক। যে সামাজিক দলগুলি আমরা হারিয়ে ফেলেছি তা ফিরে পাওয়ার জন্য আমাদের মজবুত জোট বাঁধতে হবে। কোনও একজন গান্ধির নেতৃত্বেই আমাদের পরবর্তী চার বছর লড়াই করতে হবে৷ দেখতে হবে, যদি এতে আশানুরূপ কোনও ফল পাওয়া সম্ভব হয়। লোকসভায় মাত্র 52 আসনে আমাদের নেমে আসার পিছনে কারণ এটা নয় যে আমাদের দল দুর্বল। বরং কারণ হল অ-BJP ভোট, যা 2019 সালে ছিল 63 শতাংশ কিন্তু বর্তমানে একেবারে ভগ্নাংশের হারে নেমে গিয়েছে। আমাদের আবার তা ফিরিয়ে আনতে হবে। কংগ্রেসে বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে আসবে যদি আমাদের কোনও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের আওতায় মজবুত এবং একজোট রাজনৈতিক দল হিসাবে দেখা শুরু হয়। আমি মনে করি, কোনও গান্ধিই তা করতে পারবেন। কংগ্রেসকে এতদিন ধরে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে গান্ধিদের পাঁচ প্রজন্মই৷ দলে যদি তা নিয়ে কোনও ঐক্য না থাকে তাহলে মনে হয়, এটাই সময় নতুন কাউকে বেছে নেওয়ার, যে এতদিন এই শীর্ষ পদে ছিল না।

অর্থাৎ প্রিয়াঙ্কা গান্ধি ওয়াধেরাই আপনার পছন্দ?

না। আমার পছন্দ যে কোনও একজন গান্ধি, পরিবার যাকে খুশি বাছতে পারে।

মাঝে কথা হয়েছিল, 2019 থেকে কোনও অ-গান্ধি কংগ্রেস সভাপতি হবেন। আপনার কী মনে হয়, তা ভালো বিকল্প হত ?

আমার তারুণে্য ইচ্ছে ছিল জনপ্রিয় হিন্দি ছবির অভিনেত্রী মধুবালা আমার হবেন। কিন্তু তা হয়নি। কংগ্রেসের প্রধান কোনও অ-গান্ধি হবেন, অনেকটা সেই ভাবনারই সমতুল। এমন কোনও অ-গান্ধি নেই যে এই পদের ভার সামলাতে পারবে৷ অন্তত যতদিন গান্ধিদের অস্তিত্ত্ব রয়েছে।

আর অন্তবর্তীকালীন নির্বাচন নিয়ে আপনার কী অভিমত?

প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি 1990-র দশকে এ নিয়ে বলতেন আর রাহুল এটা 2007 সাল থেকে বলে আসছেন। ভারতীয় যুব কংগ্রেস এবং ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রেও ও এটা কার্যকর করার চেষ্টা করেছিল। এটা নিয়ে কিছু বিতর্ক হয়েছিল তবে তা গৌণ ব্যাপার। সেখানে নানা ধরনের উদ্ভাবনী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমি আশা করি, 23 জন শীর্ষ নেতা এবং দলের বাকিরা যে যে প্রস্তাব দিয়েছেন, দল তার মধ্যে কিছু নিশ্চয়ই গ্রহণ করবে।

Last Updated : Sep 4, 2020, 10:19 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.