ETV Bharat / bharat

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ খনি এলাকার পরিবেশ রক্ষায় এক বিশেষ পদক্ষেপ - সুপ্রিম কোর্ট

প্রযুক্তিগতভাবে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে গেছি ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে কাজ করার ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষদের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছি । সুপ্রিম কোর্ট দেশের খনি অঞ্চলগুলিকে লিজ় দেওয়ার ক্ষেত্রে সবুজায়নের জন্য বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে । এই নির্দেশ অনুসারে কোনও খনি অঞ্চলকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর সেটিকে সঠিকভাবে ভরাট করে সেই এলাকায় নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সবুজায়ন করতে হবে ।

ফোটো সৌজন্য়ে- @Pixabay
ফোটো সৌজন্য়ে- @Pixabay
author img

By

Published : Jan 18, 2020, 1:23 AM IST

সুপ্রিম কোর্ট দেশের খনি অঞ্চলগুলিকে লিজ় দেওয়ার ক্ষেত্রে সবুজায়নের জন্য বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে । এই নির্দেশ অনুসারে কোনও খনি অঞ্চলকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর সেটিকে সঠিকভাবে ভরাট করে সেই এলাকায় নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সবুজায়ন করতে হবে । শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশকে অবশ্যই সমস্ত পরিবেশ সচেতন ভারতীয়র স্বাগত জানানো উচিত । কিন্তু এটাও দেখার যে, সঠিকভাবে যেন সবুজায়ন হয় । কারণ সঠিক পদ্ধতি মেনে সবুজায়ন না হলে তাতে উলটে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি ।

সভ্যতার সেই আদিকাল থেকে ভূগর্ভ থেকে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ উত্তোলনের কাজ চলছে । আফ্রিকায় এমন কিছু খনির সন্ধান পাওয়া গেছে যেগুলোর বয়স প্রায় 43 হাজার বছর । কিন্তু, সভ্যতার আদিকালে মানুষ প্রকৃতির কোনও ক্ষতি না করে খনিজ পদার্থ উত্তোলন করত । সেজন্য তারা নিজেদের হাত ও পাথরের সরঞ্জাম ব্যবহার করত । এটা ঘটনা যে, খনিজ পদার্থ সভ্যতার উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় । কিন্তু, আদিকালের মানুষের মতো আমরাও যদি প্রকৃতির ক্ষতি না করে ভূগর্ভ থেকে খনিজ পদার্থ উত্তোলন করি, তবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব ।

আমাদের পূর্বপুরুষদের ব্যবহৃত পাথরের সরঞ্জামের তুলনায় এখন খনিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আকারে ও ক্ষমতায় অনেক বড় ও শক্তিশালী । সেগুলির ক্ষমতা এতটাই বেশি যে, সেগুলির সাহায্যে আমরা খুব সহজেই পাহাড় কেটে ফেলতে পারি বা ভূগর্ভের অনেক নিচ থেকে খনিজ তুলে আনতে পারি । প্রযুক্তিগতভাবে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে গেছি ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে কাজ করার ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষদের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছি । তাই শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশকে অবশ্যই আমাদের স্বাগত জানানো উচিত । কারণ, এই নির্দেশ যদি আমরা ঠিক মতো পালন করি, তাহলে দেশ পরিবেশ রক্ষায় সঠিক পথে এগোতে পারবে ।

কিন্তু প্রথমে যেটা বলার তা হল, শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশ পালন করতে হলে আমাদের প্রয়োজন সঠিক পদ্ধতিতে সেই কাজ করা । ভারতে কয়লা থেকে বক্সাইট- বিভিন্ন ধরনের খনি রয়েছে । সেগুলির মধ্যে অনেকগুলি গভীর খনি, কিছু আবার অগভীর খনি । তাই পরিবেশ রক্ষার কাজটি যদি সঠিকভাবে করতে হয়, তবে সবুজায়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের খনির ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়ম মেনে চলতে হবে । বিভিন্ন ধরনের খনিজের জন্য খনি অঞ্চলের মাটিতে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর 'রাসায়নিক অবশেষ' (টক্সিক ওয়েস্ট) থেকে যায়, যা সেই অঞ্চলের মাটি ও জলের উৎসের ক্ষতি করে । ভূমির সবচেয়ে উপরের যে স্তর, যা গাছের বেড়ে ওঠার তথা পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয়, সেই স্তরটি এই ধরনের রাসায়নিক অবশেষের জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় । যে দেশগুলি পরিবেশ রক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেয়, সেখানে খনি থেকে খনিজ উত্তোলনের সময় যে মাটি তোলা হয়, তা নষ্ট না করে অন্যত্র জমিয়ে রাখা হয় । পরে খনি পরিত্যক্ত ঘোষণা হলে সেই মাটি দিয়ে খনিটি ফের ভরাট করা হয় । তবে সেটা অন্য প্রসঙ্গ, যা নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে ।

কোনও এলাকায় খনির কাজ হলে সেখানে ভূমির উপরের স্তরটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় । তাই সেই এলাকায় সবুজায়নের জন্য অনেক বেশি পরিশ্রম ও পরিকল্পনা প্রয়োজন । খনি এলাকায় মাটিতে গাছের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় পদার্থের (নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম) পরিমাণ অনেকটাই কমে যায় । তার জেরে সবুজায়নে সমস্যা হয় । তা ছাড়া ওই এলাকায় মাটির জলধারণ ক্ষমতাও কমে যায় । আরও একটি সমস্যা হল, খনি এলাকার মাটিতে অ্যাসিড-ক্ষার মাত্রা (pH লেভেল)-র সামঞ্জস্য একেবারেই ঠিক থাকে না । এছাড়া সেই এলাকার মাটিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ভারি ধাতু । এসবের জেরে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় জীবাণু (মাইক্রো অর্গানিজ়ম) ওই মাটিতে বাঁচতে পারে না । এই সমস্ত কারণে খনি এলাকায় সবুজায়নে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় । কয়লাখনি অঞ্চলগুলিতে মাটিতে লবণের পরিমাণ কমে যায় এবং মাটি ভঙ্গুর হয়ে পড়ে - যা সবুজায়নের ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা ।

এই লেখায় আগেই বলেছি যে, খনি এলাকায় সবুজায়নের ক্ষেত্রে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ যদি ঠিক মতো পালিত হয়, তবে সঠিকভাবে সবুজায়ন সম্ভব হবে । আর যদি তা নয়, তবে সবুজায়নের নামে আগাছার বাড়বাড়ন্ত হবে আর সেক্ষেত্রে ওই এলাকার মাটি তার উর্বরতা আরও হারাবে । তাই খনি এলাকায় কীভাবে সবুজায়ন করা হবে, তা নিয়ে সঠিক পথ নির্দেশ করার জন্য শীর্ষ আদালতের তরফে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দিলে ভালো হয় । কোন রাজ্যের কোন খনি এলাকায় সবুজায়ন কীভাবে হবে, সেই বিষয়ে সঠিক পদ্ধতি বাতলে দিতে সেখানকার ভূবৈচিত্র, পরিবেশ, কোন ধরনের গাছপালা সেখানে বেশি হয় - এই বিষয়গুলি মাথায় রেখে বিশেষজ্ঞ কমিটির কাজ করা উচিত । এই কমিটিতে অবশ্যই স্থানীয় বাসিন্দা বা সেখানকার আদিবাসীদের রাখা উচিত । কারণ, তাদের সঙ্গে সেই এলাকায় প্রকৃতি ও পরিবেশের নিবিড় যোগ রয়েছে । তাই সেখানে সবুজায়নের ক্ষেত্রে তাদের পরামর্শকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত ।

কোনও খনি এলাকায় সবুজায়নের ক্ষেত্রে শীর্ষ আদালত ও বিশেষজ্ঞ কমিটির অবশ্যই দেখা উচিত যে, স্থানীয় গাছপালা অর্থাৎ স্থানীয় উদ্ভিদের বৈচিত্র্যকে যেন গুরুত্ব দেওয়া হয় । সবুজায়নের ক্ষেত্রে ওই এলাকায় সেভাবে হয় না এমন গাছপালাকে যেন গুরুত্ব না দেওয়া হয় । খনি এলাকায় সবুজায়ন বিভিন্নভাবে হতে পারে, তবে স্থানীয় পরিবেশের কথা মাথায় রেখে সেখানে বনসৃজনের জন্য ন্যূনতম 50 শতাংশ এলাকায় স্থানীয় গাছপালাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত । পাশাপাশি ওই এলাকায় বনসৃজনের ক্ষেত্রে 10 শতাংশ জমিকে আলাদা করে সেখানে স্থানীয় বিপন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপণে গুরুত্ব দেওয়া উচিত । পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয় উদ্ভিদ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় । তাই খনি এলাকায় বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে সেই বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন । যে সমস্ত উদ্ভিদের পাতা বড়, বনসৃজনে সেগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত । কারণ, ওই ধরনের উদ্ভিদ মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে । এইভাবে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিয়ে খনি এলাকায় বনসৃজন করলে সেখানে পরিবেশ তথা জৈববৈচিত্র্য রক্ষার কাজটি অনেকটাই ঠিকভাবে করা সম্ভব । এক্ষেত্রে খনি কম্পানিগুলি আদিকালের 'হাম্মুরাবি' পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে । এই পদ্ধতির মূল কথা হল 'অরণ্যকে অরণ্য ফিরিয়ে দাও' । স্থানীয় বাসিন্দারা পরিবেশ রক্ষায় এই পদ্ধতি মূলত অনুসরণ করে । পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় তারা জনপ্রিয় 'মিয়াওয়াকি' পদ্ধতিও অনুসরণ করে ।

বনসৃজনের ক্ষেত্রে কৃষি ও বাস্তুতন্ত্রের কথা মাথায় রাখা উচিত, যাতে মাটিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ না মেশে । বৃক্ষরোপণ এমনভাবে করা উচিত, যাতে সেই এলাকায় পরিবেশ পশুপাখিদের জীবনধারণের চাহিদা মেটায় । পাশাপাশি ঔষধি গাছ রোপণে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি জীবজগতের অন্যান্য প্রাণীদেরও উপকার হয় । কোনও এলাকায় বনসৃজনের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস রোপণ করা উচিত, তাহলে পরবর্তী পর্যায়ে ওই এলাকায় বনসৃজনের কাজটি সুবিধাজনক হয় ।

শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুসারে কম্পানিগুলিকে বনসৃজন প্রকল্পের জন্য 'জৈববৈচিত্র্য আধিকারিক' বা 'পরিবেশ সংরক্ষক আধিকারিক'-দের দিয়ে কাজ করতে হবে । তা ছাড়া এই প্রকল্পের পরিকল্পনা তৈরি করাতে হবে বাইরের কোনও সংস্থাকে (থার্ড পার্টি) দিয়ে । যদি প্রকল্পের কাজে কম্পানির তরফে কোনও গাফিলতি হয়, সেক্ষেত্রে জরিমানার কড়া নিয়ম থাকা প্রয়োজন । তবে একইসঙ্গে কম্পানির স্বার্থের কথা মাথায় রেখে CSR কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের এই প্রকল্পে আংশিক অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া উচিত ।

ভূমিক্ষয় গোটা দেশের সমস্যা । তবে যে এলাকায় ভূমিক্ষয় হয়, সেই এলাকার বাসিন্দারা এর জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় । কারণ, ভূমিক্ষয়ের ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা ও বাসস্থানের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে । আশা করা যায়, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি সেই পরিবেশের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনধারণের নতুন সুযোগ তৈরি করবে । যখন কোনও এলাকায় এভাবে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বনসৃজন হবে তখন সেই এলাকার বাসিন্দারা ফের তাদের জীবন-জীবিকার জন্য অরণ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারবে ।

আমাদের 'বসুধৈব কুটুম্বকম' নীতির কথাও মনে রাখা উচিত । মাটি, গাছ ও প্রাণিজগতের প্রতি আমাদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে । নিজেদের স্বার্থের জন্য পরিবেশের ক্রমাগত ক্ষতিসাধন করে চলেছি আমরা । ইতিমধ্যে, আমরা পরিবেশের যতটা ক্ষতি করেছি, তা মেরামত করার দায়িত্ব নেওয়ার সময় এসেছে । কারণ প্রকৃতির কাছে আমরা সন্তানের মতো । তার দান আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে । আমরা প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ ও জয় করার চেষ্টা করি এবং ভাবি যে, সেটা আমরা করতে পারব । আসলে প্রকৃতির উদারতা ও ধৈর্য্য আমাদের সেটা ভাবতে সাহায্য করে । কিন্তু একটা সময় প্রকৃতির সেই ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙবে । তাই প্রকৃতির ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেওয়া উচিত নয় আমাদের ।

সুপ্রিম কোর্ট দেশের খনি অঞ্চলগুলিকে লিজ় দেওয়ার ক্ষেত্রে সবুজায়নের জন্য বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে । এই নির্দেশ অনুসারে কোনও খনি অঞ্চলকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর সেটিকে সঠিকভাবে ভরাট করে সেই এলাকায় নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সবুজায়ন করতে হবে । শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশকে অবশ্যই সমস্ত পরিবেশ সচেতন ভারতীয়র স্বাগত জানানো উচিত । কিন্তু এটাও দেখার যে, সঠিকভাবে যেন সবুজায়ন হয় । কারণ সঠিক পদ্ধতি মেনে সবুজায়ন না হলে তাতে উলটে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি ।

সভ্যতার সেই আদিকাল থেকে ভূগর্ভ থেকে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ উত্তোলনের কাজ চলছে । আফ্রিকায় এমন কিছু খনির সন্ধান পাওয়া গেছে যেগুলোর বয়স প্রায় 43 হাজার বছর । কিন্তু, সভ্যতার আদিকালে মানুষ প্রকৃতির কোনও ক্ষতি না করে খনিজ পদার্থ উত্তোলন করত । সেজন্য তারা নিজেদের হাত ও পাথরের সরঞ্জাম ব্যবহার করত । এটা ঘটনা যে, খনিজ পদার্থ সভ্যতার উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় । কিন্তু, আদিকালের মানুষের মতো আমরাও যদি প্রকৃতির ক্ষতি না করে ভূগর্ভ থেকে খনিজ পদার্থ উত্তোলন করি, তবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব ।

আমাদের পূর্বপুরুষদের ব্যবহৃত পাথরের সরঞ্জামের তুলনায় এখন খনিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আকারে ও ক্ষমতায় অনেক বড় ও শক্তিশালী । সেগুলির ক্ষমতা এতটাই বেশি যে, সেগুলির সাহায্যে আমরা খুব সহজেই পাহাড় কেটে ফেলতে পারি বা ভূগর্ভের অনেক নিচ থেকে খনিজ তুলে আনতে পারি । প্রযুক্তিগতভাবে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে গেছি ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে কাজ করার ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষদের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছি । তাই শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশকে অবশ্যই আমাদের স্বাগত জানানো উচিত । কারণ, এই নির্দেশ যদি আমরা ঠিক মতো পালন করি, তাহলে দেশ পরিবেশ রক্ষায় সঠিক পথে এগোতে পারবে ।

কিন্তু প্রথমে যেটা বলার তা হল, শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশ পালন করতে হলে আমাদের প্রয়োজন সঠিক পদ্ধতিতে সেই কাজ করা । ভারতে কয়লা থেকে বক্সাইট- বিভিন্ন ধরনের খনি রয়েছে । সেগুলির মধ্যে অনেকগুলি গভীর খনি, কিছু আবার অগভীর খনি । তাই পরিবেশ রক্ষার কাজটি যদি সঠিকভাবে করতে হয়, তবে সবুজায়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের খনির ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়ম মেনে চলতে হবে । বিভিন্ন ধরনের খনিজের জন্য খনি অঞ্চলের মাটিতে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর 'রাসায়নিক অবশেষ' (টক্সিক ওয়েস্ট) থেকে যায়, যা সেই অঞ্চলের মাটি ও জলের উৎসের ক্ষতি করে । ভূমির সবচেয়ে উপরের যে স্তর, যা গাছের বেড়ে ওঠার তথা পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয়, সেই স্তরটি এই ধরনের রাসায়নিক অবশেষের জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় । যে দেশগুলি পরিবেশ রক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেয়, সেখানে খনি থেকে খনিজ উত্তোলনের সময় যে মাটি তোলা হয়, তা নষ্ট না করে অন্যত্র জমিয়ে রাখা হয় । পরে খনি পরিত্যক্ত ঘোষণা হলে সেই মাটি দিয়ে খনিটি ফের ভরাট করা হয় । তবে সেটা অন্য প্রসঙ্গ, যা নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে ।

কোনও এলাকায় খনির কাজ হলে সেখানে ভূমির উপরের স্তরটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় । তাই সেই এলাকায় সবুজায়নের জন্য অনেক বেশি পরিশ্রম ও পরিকল্পনা প্রয়োজন । খনি এলাকায় মাটিতে গাছের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় পদার্থের (নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম) পরিমাণ অনেকটাই কমে যায় । তার জেরে সবুজায়নে সমস্যা হয় । তা ছাড়া ওই এলাকায় মাটির জলধারণ ক্ষমতাও কমে যায় । আরও একটি সমস্যা হল, খনি এলাকার মাটিতে অ্যাসিড-ক্ষার মাত্রা (pH লেভেল)-র সামঞ্জস্য একেবারেই ঠিক থাকে না । এছাড়া সেই এলাকার মাটিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ভারি ধাতু । এসবের জেরে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় জীবাণু (মাইক্রো অর্গানিজ়ম) ওই মাটিতে বাঁচতে পারে না । এই সমস্ত কারণে খনি এলাকায় সবুজায়নে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় । কয়লাখনি অঞ্চলগুলিতে মাটিতে লবণের পরিমাণ কমে যায় এবং মাটি ভঙ্গুর হয়ে পড়ে - যা সবুজায়নের ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা ।

এই লেখায় আগেই বলেছি যে, খনি এলাকায় সবুজায়নের ক্ষেত্রে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ যদি ঠিক মতো পালিত হয়, তবে সঠিকভাবে সবুজায়ন সম্ভব হবে । আর যদি তা নয়, তবে সবুজায়নের নামে আগাছার বাড়বাড়ন্ত হবে আর সেক্ষেত্রে ওই এলাকার মাটি তার উর্বরতা আরও হারাবে । তাই খনি এলাকায় কীভাবে সবুজায়ন করা হবে, তা নিয়ে সঠিক পথ নির্দেশ করার জন্য শীর্ষ আদালতের তরফে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দিলে ভালো হয় । কোন রাজ্যের কোন খনি এলাকায় সবুজায়ন কীভাবে হবে, সেই বিষয়ে সঠিক পদ্ধতি বাতলে দিতে সেখানকার ভূবৈচিত্র, পরিবেশ, কোন ধরনের গাছপালা সেখানে বেশি হয় - এই বিষয়গুলি মাথায় রেখে বিশেষজ্ঞ কমিটির কাজ করা উচিত । এই কমিটিতে অবশ্যই স্থানীয় বাসিন্দা বা সেখানকার আদিবাসীদের রাখা উচিত । কারণ, তাদের সঙ্গে সেই এলাকায় প্রকৃতি ও পরিবেশের নিবিড় যোগ রয়েছে । তাই সেখানে সবুজায়নের ক্ষেত্রে তাদের পরামর্শকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত ।

কোনও খনি এলাকায় সবুজায়নের ক্ষেত্রে শীর্ষ আদালত ও বিশেষজ্ঞ কমিটির অবশ্যই দেখা উচিত যে, স্থানীয় গাছপালা অর্থাৎ স্থানীয় উদ্ভিদের বৈচিত্র্যকে যেন গুরুত্ব দেওয়া হয় । সবুজায়নের ক্ষেত্রে ওই এলাকায় সেভাবে হয় না এমন গাছপালাকে যেন গুরুত্ব না দেওয়া হয় । খনি এলাকায় সবুজায়ন বিভিন্নভাবে হতে পারে, তবে স্থানীয় পরিবেশের কথা মাথায় রেখে সেখানে বনসৃজনের জন্য ন্যূনতম 50 শতাংশ এলাকায় স্থানীয় গাছপালাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত । পাশাপাশি ওই এলাকায় বনসৃজনের ক্ষেত্রে 10 শতাংশ জমিকে আলাদা করে সেখানে স্থানীয় বিপন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপণে গুরুত্ব দেওয়া উচিত । পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয় উদ্ভিদ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় । তাই খনি এলাকায় বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে সেই বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন । যে সমস্ত উদ্ভিদের পাতা বড়, বনসৃজনে সেগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত । কারণ, ওই ধরনের উদ্ভিদ মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে । এইভাবে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিয়ে খনি এলাকায় বনসৃজন করলে সেখানে পরিবেশ তথা জৈববৈচিত্র্য রক্ষার কাজটি অনেকটাই ঠিকভাবে করা সম্ভব । এক্ষেত্রে খনি কম্পানিগুলি আদিকালের 'হাম্মুরাবি' পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে । এই পদ্ধতির মূল কথা হল 'অরণ্যকে অরণ্য ফিরিয়ে দাও' । স্থানীয় বাসিন্দারা পরিবেশ রক্ষায় এই পদ্ধতি মূলত অনুসরণ করে । পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় তারা জনপ্রিয় 'মিয়াওয়াকি' পদ্ধতিও অনুসরণ করে ।

বনসৃজনের ক্ষেত্রে কৃষি ও বাস্তুতন্ত্রের কথা মাথায় রাখা উচিত, যাতে মাটিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ না মেশে । বৃক্ষরোপণ এমনভাবে করা উচিত, যাতে সেই এলাকায় পরিবেশ পশুপাখিদের জীবনধারণের চাহিদা মেটায় । পাশাপাশি ঔষধি গাছ রোপণে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি জীবজগতের অন্যান্য প্রাণীদেরও উপকার হয় । কোনও এলাকায় বনসৃজনের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস রোপণ করা উচিত, তাহলে পরবর্তী পর্যায়ে ওই এলাকায় বনসৃজনের কাজটি সুবিধাজনক হয় ।

শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুসারে কম্পানিগুলিকে বনসৃজন প্রকল্পের জন্য 'জৈববৈচিত্র্য আধিকারিক' বা 'পরিবেশ সংরক্ষক আধিকারিক'-দের দিয়ে কাজ করতে হবে । তা ছাড়া এই প্রকল্পের পরিকল্পনা তৈরি করাতে হবে বাইরের কোনও সংস্থাকে (থার্ড পার্টি) দিয়ে । যদি প্রকল্পের কাজে কম্পানির তরফে কোনও গাফিলতি হয়, সেক্ষেত্রে জরিমানার কড়া নিয়ম থাকা প্রয়োজন । তবে একইসঙ্গে কম্পানির স্বার্থের কথা মাথায় রেখে CSR কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের এই প্রকল্পে আংশিক অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া উচিত ।

ভূমিক্ষয় গোটা দেশের সমস্যা । তবে যে এলাকায় ভূমিক্ষয় হয়, সেই এলাকার বাসিন্দারা এর জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় । কারণ, ভূমিক্ষয়ের ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা ও বাসস্থানের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে । আশা করা যায়, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি সেই পরিবেশের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনধারণের নতুন সুযোগ তৈরি করবে । যখন কোনও এলাকায় এভাবে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বনসৃজন হবে তখন সেই এলাকার বাসিন্দারা ফের তাদের জীবন-জীবিকার জন্য অরণ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারবে ।

আমাদের 'বসুধৈব কুটুম্বকম' নীতির কথাও মনে রাখা উচিত । মাটি, গাছ ও প্রাণিজগতের প্রতি আমাদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে । নিজেদের স্বার্থের জন্য পরিবেশের ক্রমাগত ক্ষতিসাধন করে চলেছি আমরা । ইতিমধ্যে, আমরা পরিবেশের যতটা ক্ষতি করেছি, তা মেরামত করার দায়িত্ব নেওয়ার সময় এসেছে । কারণ প্রকৃতির কাছে আমরা সন্তানের মতো । তার দান আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে । আমরা প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ ও জয় করার চেষ্টা করি এবং ভাবি যে, সেটা আমরা করতে পারব । আসলে প্রকৃতির উদারতা ও ধৈর্য্য আমাদের সেটা ভাবতে সাহায্য করে । কিন্তু একটা সময় প্রকৃতির সেই ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙবে । তাই প্রকৃতির ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেওয়া উচিত নয় আমাদের ।

Ranchi (Jharkhand), Jan 17 (ANI): Jharkhand Chief Minister Hemant Soren on January 17 paid tribute to Shaheed Pandey Ganpat Rai on the occasion of his 211th birth anniversary at Ranchi's district school campus. On being asked on the revolutionary leaders and martyrs not getting recognition, he said, "Things will change now." Pandey Ganpat Rai was a revolutionary leader in the Indian Rebellion of 1857.
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.