দিল্লি, 26 নভেম্বর : ১৯৪৯ সালে গণপরিষদের দ্বারা ভারতের সংবিধান গ্রহণের স্মরণে 26 নভেম্বর সংবিধান দিবস উদযাপন করা হয় । দিন দিন আমাদের সাধারণতন্ত্রে রাজ্য সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উদ্বেগ বাড়ছে । তাহলে কি আমাদের সংবিধানের সারবত্তা সংকটে ? এ প্রসঙ্গে মুখ খুললেন দেশের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার । ব্যাখ্যা করলেন সংবিধানের বর্তমান অবস্থা ।
আপনি কি মনে করেন বিগত কয়েক বছরে দেশের সংবিধানের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে ? অশ্বিনী কুমার বলেন, "এখনও ভারতের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ সংবিধানকে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করে, তবে সংবিধানের মানের ক্ষেত্রে কিছু বিকৃতি রয়েছে । সংবিধানের মূল্যবোধের বাস্তবায়নের বিষয়ে এখনও কিছুটা হতাশার ঘটনা ঘটেছে । তবে সেটা পবিত্রতার অভাবের কারণে নয়, কিছু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বিকৃতিকরণের জন্য । এক্ষেত্রে মূল নীতিতে দৃঢ় বা ঋজু থাকার চেয়ে যে কোনও মূল্যে নির্বাচনী লড়াইয়ে জয়লাভই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । বিশ্বের কোনও দেশের সংবিধান তার নাগরিকদের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার দিতে পুরোপুরি সক্ষম নয় । সেই পরিস্থিতি বাস্তবায়িত করতে হলে আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে । "
সংবিধান ও দেশের বৈচিত্র
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংবিধানের সংশোধনগুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষে জোর দিয়ে অশ্বিনী কুমার বলেন, "জীবন্ত দলিলের মতো হওয়া উচিত সংবিধান । যা অতীতের ঘেরাটোপে আটকে থাকবে না ।" তিনি বলেন, "সংবিধানের মূল লক্ষ্য ছিল ভারতের বৈচিত্রকে রক্ষা করা । যদি 70 বছর পরও আমরা একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, এবং অনেকাংশে উদারবাদী থাকতে পারি, তাহলে বলা যাবে সংবিধান তার উদ্দেশ্য পূরণ করেছে।"
কুমারের বক্তব্য, "সংবিধানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হ'ল ভারতের পঙ্গু রাজনীতি, যেখানে সাংবিধানিক নীতিগুলিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে । ব্যক্তিগতভাবে আমার একটা হতাশা হল বর্ণপ্রথার স্থায়িত্ব ।"
সংবিধান ও গণতন্ত্র
দেশের গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অশ্বিনী কুমার বলেন, "জনগণের গণতান্ত্রিক মনোভাবকে প্রশ্ন করা যায় না এবং গণতন্ত্র সংবিধানের একটি অংশ যা আলোচনা সাপেক্ষ নয় । "
প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ আরও বলেন, "আমাদের গণতন্ত্র তার গুণগতমান বজায় রাখে, তার স্থিতিস্থাপকতা অব্যাহত রাখে, না কি অভ্যন্তরেই ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় তা শুধু সময়ই বলে দেবে । আসলে এক পর্যায়ে আমাদের দেশে গণতন্ত্রকে আরও গভীর করা হয়েছে এবং অন্য পর্যায়ে এটি বড্ড ফাঁপা ।"
অশ্বিনী কুমারের বক্তব্য, "গণতন্ত্রকে বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার পরিবর্তে শুধুমাত্র নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখেই দেখা হচ্ছে । নির্বাচনের ফলাফল যা নির্ধারিত হয় শুধুমাত্র প্রার্থীদের অর্থ ও পেশিশক্তির জোরে । আমার মন হয় না, আমরা ন্যায়সঙ্গত ও বৈধভাবে একথা দাবি করতে পারি যে, আমরা আমাদের রাজনৈতিক গণতন্ত্রের মানোন্নয়ন করতে পেরেছি।"
ভারতীয় রাজনীতির মূল্যবোধকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার উপর জোর দিয়ে প্রাক্তন মন্ত্রী বলেন, " ষাট-সত্তরের দশকে ভারতের রাজনৈতিক গণতন্ত্রের যে গুনগত মান ছিল, ভবিষ্যতে তা হ্রাস পাবে ।"