কলকাতা, 26 নভেম্বর : সংবিধানের শপথ নিয়ে ক্ষমতায় এলেও অনেক সরকারই তা ঠিক মতো মেনে চলে না । সংবিধানের 70 বছরের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে এ ভাবেই ক্ষোভ উগরে দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় । একই সঙ্গে প্রাক্তন বিচারপতির মত, শুধু সরকার নয়, দেশের প্রতিটি মানুষের কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে সংবিধান রক্ষায় ।
ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের ভোটের দ্বারা নির্বাচিত হয় একটি সরকার । সেই সরকারকে সংবিধানের শপথ নিতে হয় । সংবিধানের শপথ না নিয়ে কোনও সরকার ( রাজ্য এবং কেন্দ্র উভয়ই) ক্ষমতায় আসতে পারে না । ভারতের এই গণতান্ত্রিক কাঠামোর কথা স্মরণ করিয়ে প্রাক্তন বিচারপতি সংশয় প্রকাশ করেছেন, আজকের দিনে অনেক ক্ষেত্রেই মান্য করা হচ্ছে না । অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ''অনেক কষ্ট, পরিশ্রম, সংগ্রামের ফলে সংবিধান রচিত হয়েছিল । জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাসের গোড়ার দিকে সকলে মিলে সংবিধান রচনায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন । সমগ্র জাতির সংগ্রামের, আত্মত্যাগের, বলিদানের ফসল 70 বছরের সংবিধান ।'' এর পরই তিনি মনে করিয়ে দেন, এই সংবিধান রক্ষা করার মূল দায়িত্ব প্রতিটি শাসকদলের । কোনও কারণে সরকার পিছিয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের উচিত সংবিধানের রীতিনীতি রক্ষায় এগিয়ে আসা, মত অশোকের ।
সংবিধানের মূল স্তম্ভ তিনটি । গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র । এই কাঠামোর উপরেই রচিত হয়েছে ভারতীয় সংবিধান । বর্তমান সময় কেন্দ্র এবং রাজ্যের সাংবিধানিক-গণতান্ত্রিক ভাবধারার সঠিক প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি । সরকার যদি কোনও কারণে তার দায়িত্ব থেকে সরে আসে তাহলে আমজনতা কঠোর পদক্ষেপ করতে পারেন । তিনি বলেন, ''সাধারণের উচিত সরকারকে বাধ্য করা সাংবিধানিক রীতিনীতি মেনে চলার জন্য । প্রয়োজনে আগামী দিনে আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে শাসকদলের পরিবর্তনও করতে পারেন এ দেশের মানুষ । এটাই এ দেশের সংবিধানের অভিনবত্ব ।''
সংবিধানে খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানকে মৌলিক অধিকার বলে উল্লেখ করা হয়েছে । যদিও কোনও সরকার সংবিধান না মানে চলে, তাহলে তার বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ বৃদ্ধি স্বাভাবিক । এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ''সংবিধান সংশোধনের কোনও প্রয়োজন নেই । যথোপযুক্ত রয়েছে সংবিধান ।''
আজকের দিনে জাতিগত সংরক্ষণ সংবিধানে কতটা প্রাসঙ্গিক তা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন অশোক গঙ্গোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "জাতীয় সংরক্ষণ কমিশন বা ন্যাশনাল রিজ়ার্ভেশন কমিশন গঠন করে দেখা উচিত সংবিধানে সংরক্ষণের কোনও প্রয়োজনীয়তা আছে কি না । ভোট ব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে সংরক্ষণকে বৃদ্ধি করা হচ্ছে । যে সময়ে সংবিধানে সংরক্ষণের কথা সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তখন সমাজের পরিস্থিতি ছিল অন্য রকম ।" বর্তমান সামাজিক কাঠামোয় সংরক্ষণ কতটা প্রাসঙ্গিক, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি ।