কলকাতা , 17 অক্টোবর : অতি-গুরুত্বপূূর্ণ 2020 বিহার বিধানসভা ভোটের দামামা বাজতে যেখানে আর মাত্র দিন কয়েক বাকি, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার চতুর্থ বারের জন্য রাজ্য প্রশাসনকে নেতৃত্ব দেওয়ার উদ্যোগে একাধিক এবং বিপজ্জনক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে ।
নীতীশ কুমারের JD(U)-র জন্য RJD , কংগ্রেস, CPI(ML) , CPI(M) এবং CPI-এর বিরোধী জোটের থেকেও চ্যালেঞ্জ আরও বেশি করে এসেছে NDA-র পূর্বতন জোটসঙ্গী LJP-র তরফ থেকে।
যদিও JD(U) এবং LJP-র BJP-র সঙ্গে নিজ নিজ জোট অক্ষুণ্ণ রয়েছে । বর্তমানে লোক জনশক্তি পার্টি (LJP) সুপ্রিমো চিরাগ পাসওয়ান স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি শুধুমাত্র JD(U)-এর বিরুদ্ধেই প্রার্থী দেবেন । BJP-র বিরুদ্ধে নয় । এমন একটা সময় যখন নীতীশ কুমার বিহারের মতো জাতি-বর্ণের রাজনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রাজ্যে নিচু বর্ণের মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছিলেন । তখন আলাদা করে ‘মহাদলিত’ ক্ষেত্র গড়ে তোলা সত্ত্বেও LJP প্রতিষ্ঠাতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ানের আকস্মিক প্রয়াণ, মুখ্যমন্ত্রীকে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে । দলিত পরিবার থেকে উঠে আসা পাসওয়ানের মৃত্যুতে যে সহানুভূতির ঢেউ বইতে শুরু করেছে, তাতে JD(U)-র দলিত অনুগামীদের একটি বড় অংশের ভোট ভেঙে LJP-র ঝুলিতে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত । এই ঢেউয়ে হয় LJP-র সুবিধা হবে বা বিরোধী জোটের । দ্বিতীয়টি অবশ্য JD(U) এবং LJP-র দলিত ভোট ভাগাভাগি থেকে সুবিধা লুটবে বলেই আশা করছে ।
দু’নম্বর যে বিষয়টি নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে যেতে পারে, তা হল তাঁর দলে কোনও বিশ্বস্ত রাজপুত মুখের অভাব । এমনকী, বিহারে BJP-কেও এই একই সমস্যা ভাবাচ্ছে । রাজ্যে 243 টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত 45টিতেই রাজপুত ভোট ব্যাঙ্ক একটা বড় ফ্যাক্টর । অন্যদিকে, RJD-তে এখনও জগদানন্দ সিং—এর মতো একজন বিশ্বস্ত রাজপুত মুখ রয়েছে । যদিও সম্প্রতি RJD-র প্রাক্তন সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজপুত মুখ, প্রয়াত রঘুবংশপ্রসাদ সিংয়ের বড় ছেলে সত্যপ্রকাশ সিং JD(U)-তে যোগ দিয়েছেন । তাও এত তাড়াতাড়ি এটা বলা ঠিক হবে না যে কুমার, রাজপুত ভোট আহরণে সিংয়ের ভাবমূর্তি ছাপিয়ে যেতে পারবেন ।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আরও একটি চ্যালেঞ্জের বিষয় হল রাজ্যের অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়া অবস্থা , শিল্পের দুর্দশা আর কর্মসংস্থানের অভাব । যা সমস্ত রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে RJD মুখ্য নির্বাচনী ইশু করে তুলেছে । RJD নেতা এবং বিহার বিধানসভায় বিরোধী দলের বর্তমান নেতা , তেজস্বীপ্রসাদ যাদব, যিনি লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র, নিজের সমস্ত নির্বাচনী প্রচারে বিহারের বেকারত্বের হার (46.6 শতাংশ) তুলে ধরেছেন । যা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি । তিনি নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে রাজ্যে শূন্যপদ ভরার চেষ্টা না করে রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়াতে মদত দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন এবং এবার বিরোধী জোট রাজ্য়ে ক্ষমতায় এলে 10 লাখ স্থায়ী সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন । নীতীশের নিষেধ কার্যকর করার ফলে যেভাবে রাজ্যের নিজস্ব রাজস্ব কর ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং তার ফলে রাজ্যের পর্যটন শিল্প প্রায় ধসে পড়েছে এবং বহু হোটেল বন্ধ হওয়ার ফলে হাজার হাজার রাজ্যবাসী বেকার হয়ে পড়েছেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
এমনকী , নীতীশ নিজেও সম্ভবত বুঝেছেন যে , বেকারত্বের ইশু তাঁর পক্ষে আসন্ন নির্বাচনে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে । কারণ 14 অক্টোবর ভার্চুয়াল মাধ্যমে 11টি বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দাদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, দেশের মধ্যে কোনও রাজ্য নেই এবং বিশ্বের মধ্যে এমন কোনও দেশ নেই , যেখানে প্রত্যেককে চাকরি দেওয়া সম্ভব ।
শেষ পর্যন্ত JD(U) শিবিরকে চাপে রাখছে গ্র্যান্ড ডেমোক্র্যাটিক সেকিউলার ফ্রন্টও , যা সম্প্রদায়ভিত্তিক দল যেমন হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসির অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদ-উল-মুসলামিন (AIMIM) এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উপেন্দ্র কুশওয়াহার রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টি (RLSP), মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি (BSP), প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবেন্দ্র প্রসাদের সমাজবাদী জনতা দল (SJD), ড. সঞ্জয় চৌহানের জনবাদী পার্টি (সোশালিস্ট) এবং ওমপ্রকাশ রাজভারের সুহেলদেও ভারতীয় সমাজ পার্টির জোট । ওয়াইসি যদি JD(U)-র মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে এবং RLSP কুশওয়াহা—কোয়েরি—কুর্মি সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাঙ্কে ফাটল ধরাতে পারেন, তাহলে JD(U)—র বিরুদ্ধে ভোটের অনেক সমীকরণই বদলে যাবে । কারণ নীতীশ কুমার নিজেই কুর্মী সম্প্রদায়ের মানুষ ।
নীতীশের কাছে এগুলিই যখন বড় চ্যালেঞ্জ, তখন বিরোধীদেরও তেমনই কিছু ভয়ানক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে । প্রথম চ্যালেঞ্জ হল তেজস্বী প্রসাদ এবং চিরাগ পাসওয়ান, দু’জনেরই সরকার চালানোর কোনও অভিজ্ঞতা নেই । আর ঠিক এই বিষয়টিকেই নীতীশ কুমার আর তাঁর দল প্রচারে তুলে ধরার চেষ্টা করছে ।
দ্বিতীয় যে নেগেটিভ ফ্যাক্টরটি রয়েছে, যা কুমারের জন্য ইতিবাচক হতে পারে তা হল, বিরোধী জোট এবং LJP, দুইয়েরই সবচেয়ে জনপ্রিয় দু’টি মুখ এবার থাকছে না । RJD সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদব যিনি 2017 সালে পশুখাদ্য দুর্নীতির একাধিক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে বর্তমানে জেলে 27.5 বছরের জেলের মেয়াদ অতিবাহিত করছেন , তিনি এবার নির্বাচনী প্রচারে থাকছেন না । আবার রামবিলাস পাসওয়ানের প্রয়াণের কারণে তিনিও এবার নেই । এ সবের জেরে নির্বাচনী সমরে বিরোধীদের থেকে নীতীশ কুমার যে নিশ্চিতভাবেই কয়েক কদম এগিয়ে থাকবেন, তা বলাই যায় ।