ওয়াশিংটন, 30 জুন : আলফা ও ডেলটা প্রজাতির করোনা ভাইরাসকে নষ্ট করতে কার্যকর ভারত বায়োটেক এবং ইন্ডিয়ান মেডিক্য়াল রিসার্চের যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি কোভ্যাকসিন ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে ৷ যাঁরা ভারতীয় ভ্যাকসিন কোভ্যাকসিন নিয়েছেন এমন কয়েকজনের রক্তের নমুনার দু’টি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে মার্কিন জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা বা এনআইএইচ ৷ যেখানে বলা হয়েছে, কোভ্যাকসিন মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম ৷ সেই সঙ্গে কার্যকরীভাবে বি.1.1.7. অর্থাৎ, আলফা প্রজাতি এবং বি.1.617 বা ডেলটা প্রজাতির সার্স-কোভ-2 ভাইরাসকে নষ্ট করতে পারে ৷ যা প্রথম পাওয়া গিয়েছিল ইংল্যান্ড এবং পরবর্তী সময়ে ভারতে ৷
আমেরিকার এই শীর্ষস্তরের স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা, যাদের সঙ্গে অতীতে ভারতের শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক চুক্তি ছিল ৷ তারা জানিয়েছে, অত্যন্ত কার্যকরী কোভ্যাকসিনের সাফল্যের পিছনে এই গবেষণা অত্যন্ত সাহায্য করেছে ৷ যার ফলে এখনও পর্যন্ত ভারত সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রায় 25 মিলিয়ন অর্থাৎ, আড়াই কোটি মানুষকে কোভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে ৷ এই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ভ্যাকসিনের সাহায্যে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে ৷ যা ভ্যাকসিনের কার্যকরিতাকে বাড়িয়ে তুলছে ৷ কোভ্যাকসিন সার্স-কোভ-2 ভাইরাসকে অক্ষম করে দিতে পারে ৷ ফলে ভাইরাসটি মানব শরীরে বিস্তার ঘটাতে পারে না ৷ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে এটি মানব শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ৷
মার্কিন গবেষণা সংস্থা এনআইএইচ জানিয়েছে, ভ্যাকসিনটির দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়ালের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে ৷ সেই রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ভ্যাকসিনটি নিরাপদ এবং সহনশীল ৷ সেই সঙ্গে তারা এও জানিয়েছে কোভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের গবেষণা রিপোর্ট থেকে ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ তাও জানা যাবে ৷ যা এ বছরের শেষে প্রকাশ হবে ৷
এনআইএইচ তাদের গবেষণায় জানিয়েছে, লক্ষণজনিত রোগের ক্ষেত্রে কোভ্যাকসিনের কার্যকরিতা 78 শতাংশ বলে তৃতীয় ধাপের অপ্রকাশিত রিপোর্টে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে ৷ সেখানেই করোনার গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের কার্যকরিতা একশো শতাংশ ৷ আর লক্ষণবিহীন রোগীদের ক্ষেত্রে কোভ্যাকসিনের কার্যকরিতা প্রায় 70 শতাংশ বলে তৃতীয় ধাপের গবেষণায় ইঙ্গিত পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা ৷
আরও পড়ুন : ভারত বায়োটেকের ফেজ-3 ট্রায়ালের তথ্য জমা পড়ল
বিশ্বের এই অতিমারিকে বিনাশ করতে গোটা বিশ্বকে এক সঙ্গে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন এনআইএইচ এর এলার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন বিভাগের ডিরেক্টর অ্যান্টনি এস ফাউসি ৷ কোভ্যাকসিনে সহায়ক ওষুধ হিসেবে যে ড্রাগ ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হল অ্যালহাইড্রক্সিকিম-2 ৷ যেটি কানসাসের ভাইরোভ্যাকস এলএলসি নামে মেডিক্যাল সংস্থা গবেষণা করে তৈরি করেছে ৷ যে প্রকল্পে ওই সংস্থাকে সাহায্য করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এলার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিপার্টমেন্ট ৷ অ্যালহাইড্রক্সিকিম-2 প্রথম সহায়ক ড্রাগ যেটিকে সংক্রামক ভাইরাসের জন্য তৈরি ভ্যাকসিনে ব্যবহার করতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ৷
আরও পড়ুন : ভারত বায়োটেকে হাই কমিশনারদের বৈঠকে কৃষ্ণা এলা
এনআইএইচ এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এলার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিপার্টমেন্টের এই সহায়ক ড্রাগ প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন ভাইরোভ্যাকসের প্রতিষ্ঠাতা তথা গবেষক সুনীল ডেভিড ৷ 2019 সালে ডক্টর সুনীল ডেভিডের সঙ্গে হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেকের চুক্তি হয়েছিল ৷ যখন ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এলার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিপার্টমেন্টের যৌথ উদ্যোগে ভ্যাকসিন অ্যাকশন নামের একটি সেমিনার আয়োজিত হয়েছিল ভারতে ৷