দার্জিলিং ও গ্যাংটক, ৬ এপ্রিল: তুষারধসের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার সতর্ক সিকিম সরকার। এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে প্রাথমিক পর্যায়ে করণীয় কী হবে, তা ঠিক করতেই এবার কোমর বোঁধে নামল রাজ্য় প্রশাসন ৷ জানা গিয়েছে, এখন থেকেই কার্যত তার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। তুষারধসের ঘটনার জেরে ধস প্রবণ এলাকাগুলিকে দ্রুত চিহ্নিত করার কথাও জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে। ধসপ্রবণ এলাকাগুলিতে কোনও রকম যানবাহন পার্কিং করা যাবে না। যত্রতত্র ছবি তোলার উপরও নিষেধাজ্ঞা জারির কথা ভাবা হচ্ছে ৷ এখন থেকে আর ইচ্ছামতো জায়গায় গাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছবি তোলা সহ একাধিক বিষয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে প্রশাসন ৷ সেলফি তোলার হিড়িকও কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, সাম্প্রতিক তুষারপাতের জেরে মঙ্গলবার থেকে চলা উদ্ধারকাজ বৃহস্পতিবার রাতে শেষ হয়েছে ৷ সরকারিভাবে উদ্ধারকার্য শেষ হওয়ার কথা জানানো হয় ভারতীয় সেনা ও সিকিম সরকারের তরফে। বরফের নীচে আর কেউ চাপা পড়ে নেই বলে নিশ্চিত করেছে প্রশাসন ৷ ইতিমধ্য়েই আচমকা তুষারধসে প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন ৷ আহত প্রায় 13 জনের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে ৷
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, সতর্কবার্তা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হবে সাইনবোর্ড। গ্যাংটকের জেলাশাসক তুষার জি নিখারে ও পুলিশ সুপার তেনজিং শেরপা সাংবাদিক বৈঠক করে তুষারধসের ঘটনার পর রাজ্য সরকার ও প্রশাসনের তরফে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সেই বিষয়ে এদিন খোলাসা করেন। উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে গ্যাংটকের জেলাশাসক তুষার জি নিখারে বলেন, "ভারতীয় সেনা, বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন গোটা এলাকা ও বরফের নীচে খতিয়ে দেখেছে । তিরঙ্গা মাউন্টেন রেসকিউ টিম তাদের অত্যাধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে খতিয়ে দেখে নিশ্চিত করেছে যে আর কেউ বরফের নীচে চাপা পরে নেই।" পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, তিরঙ্গা মাউন্টেন রেসকিউ টিমের ওই বিশেষ র্যাডার 20 মিটার গভীর পর্যন্ত কেউ আটকে থাকলে তা খুঁজে বের করতে সক্ষম। সব দিক থেকে নিশ্চিত হওয়ার পরই উদ্ধারকাজ ও তল্লাশি অভিযান বন্ধ করেছে প্রশাসন।
আরও পড়ুন: তুষারধসে সিকিমে মৃত্যু দিঘার যুবকের
পাশাপাশি জেলা শাসক জানান, এখনই হেল্প লাইন নম্বর বন্ধ করা হচ্ছে না ৷ তা সক্রিয় থাকবে। এখনও যদি কোন পর্যটক নিখোঁজ থাকেন, তা জানালে পুলিশ প্রশাসন নিশ্চিতভাবে তার খোঁজ নেবে। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, তুষারধসে মৃত সাতজনের মধ্যে পাঁচজনের দেহই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দু'জনের দেহ এসটিএনএম হাসপাতালের মর্গে রাখা রয়েছে। সেইসঙ্গে, এই ঘটনায় মোট 73 জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরপরই জেলাশাসক বার্তা দিয়ে বলেন, "এইধরনের ঘটনা সিকিমে প্রথম হল। তবে এর থেকে আমরা শিক্ষা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি। সিকিম পর্যটকদের জন্য সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত।" প্রসঙ্গত, বুধবার পূর্ব সিকিমের সোমোগো লেকের কাছে 17 মাইলে তুষারধসের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় বাংলার দুই পর্যটক সহ সাতজনের মৃত্যু হয়।