আগ্রা , 20 এপ্রিল : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে তাজমহল এবং আগ্রার রেড-ফোর্ট সহ দেশের সব স্মৃতি সৌধ আগামী 15 মে পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে । এএসআই এই সুযোগটিকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেছে । এই সময় তাজমহলের রয়্যাল গেটের সামনে ক্ষয়ে যাওয়া পাথরগুলি সারানো হবে । বসানো হবে নতুন পাথর । মূল গম্বুজটি পরিষ্কার করা হবে । কাদা মাটি মাখিয়ে গম্বুজের হলদেটে রং তোলা হবে । এত কিছু সংস্কারের পর যখন তাজমহলটি খোলা হবে, তখন তা নিঃসন্দেহে দর্শকদের কাছে আরও কয়েকগুণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে ।
15 মে পর্যন্ত বন্ধ
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ফের একবার বাড়তে শুরু করেছে । এ কারণেই 13 মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার তাজমহল, আগ্রার রেড-ফোর্ট সহ সব স্মৃতিসৌধ 15 মে পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । এর আগে 2020 সালের 17 মার্চ তাজমহল সহ দেশের সব স্মৃতিসৌধ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল । 188 দিনের লকডাউনের পর 21 সেপ্টেম্বর খোলা হয় তাজমহল ।
গেটের সামনে ক্ষয়ে যাওয়া পাথরগুলো সরানো হবে
এএসআইয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক বসন্তকুমার স্বর্ণকার জানিয়েছেন, বন্ধ থাকার সময় মূল গেটের সামনে পাথর বসানোর কাজটা সম্পূর্ণ করা হবে । এই কাজ করতে প্রায় 19 লাখ টাকা খরচ হবে । এর পাশাপাশি তাজমহলের দক্ষিণ-পশ্চিম টাওয়ারটিরও সংস্কার করা হবে । যার বেশ কিছু অংশ ভেঙে গিয়েছে ।
মূল গেটের সামনে আরও ঝকমকে পাথর লাগানো হবে
তাজমহলের ঐতিহ্যশালী মূল ফটকের স্মৃতিসৌধটি এর সৌন্দর্যকে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলে । লাল এবং অন্যান্য রঙের পাথরগুলি ক্রমেই জীর্ণ হয়ে গিয়েছে । ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া ম্যাজাইন পাথরগুলিও বদল করা হবে । এই সব পাথর ক্ষয়ে ক্ষয়ে অনেক ক্ষেত্রেই জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে । মূল ফটকে ভাষ্কর্যের কাজ করা হবে । এই গেটের ইতিহাস তাজমহলের মতই পুরানো । গেটটি নির্মাণ করেছিলেন স্বয়ং শাহজাহান ।
চারটি টাওয়ারের সংস্কার করা হবে
তাজমহল তৈরির সময় তার চার কোণে চারটি টাওয়ার তৈরি করা হয়েছিল । প্রতিটি টাওয়ারের উচ্চতা ভূমি থেকে 42.95 মিটার বা 140.91 ফিট । তাজমহল তৈরিতে যে মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছে, এই টাওয়ারগুলি তৈরিতেও সেই মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছে । আর এই কারণে টাওয়ারগুলি তাজমহলের সৌন্দর্যকে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলেছে । স্বর্ণকার জানান, তাজমহলের দক্ষিণ-পশ্চিমের টাওয়ার সংস্কারের কাজ চলছে । সেখানকার বেশ কিছু জায়গায় পাথর বসানোর কাজ করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন ।
টাওয়ার মেরামতে খরচ হবে 23 লাখ টাকা
টাওয়ারগুলির সংস্কারের কাজে প্রায় 23 লাখ টাকা খরচ হবে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে । এখানকার ক্ষয়ে যাওয়া পাথরগুলোর পরিবর্তন করা হবে । কালো পাথরগুলির পরিবর্তন করা হবে । বেশ কিছু পাথর খুলে গিয়েছে বা ভেঙে গিয়েছে । সেগুলির সংস্কার করা হবে । লকডাউনের এই এক মাসের মধ্যে পুরো সংস্কারের কাজটা সম্পূর্ণ করতে হবে । যাতে লকডাউন খোলার পর দর্শকরা এর আনন্দ উপভোগ করতে পারেন ।
কাদা মাটি মাখিয়ে হলদেটে ভাবটা তোলা হবে
তাজমহলের মূল গম্বুজটি বিশ্বের বহু মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে । গম্বুজটিতে একটা হলদেটে ভাব তৈরি হয়েছে । এটা পরিষ্কার করার জন্য কাদা মাটি মাখিয়ে ঔজ্জ্বল্য ফেরানোর চেষ্টা করা হবে । এর ফলে গম্বুজটির ঔজ্জ্বল্য বাড়বে । দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে । তবে একই সঙ্গে একটি আশঙ্কাও রয়েছে । করোনা ভাইরাসের ফলে দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত শ্রমিকের অভাব রয়েছে । যদিও চেষ্টা করা হচ্ছে এই সমস্যা সমাধানের ।
ক্ষয়ে যাওয়া পাথর পরিবর্তনের পরিকল্পনা এএসআইয়ের
আগ্রার টুরিজম গিল্ডের সহ সভাপতি রাজীব সাক্সেনা বলেন, এই স্মৃতিসৌধ সংস্কারের বিষয়ে এএসআইয়ের সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয় । গত বছর লকডাউন চলার সময় রেলমন্ত্রক এইভাবে রেললাইনের সংস্কার করে প্রশংসিত হয়েছিল । সেইভাবে এএসআই যদি লকডাউনের সময় স্মৃতিসৌধগুলি মেরামত এবং সংস্কারের কাজ করতে সক্ষম হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে তা ভাল উদ্যোগ হবে ।
টোডরমলের বারাদারি সংরক্ষণ করা হবে
মুঘল সম্রাট আকবরের অর্থমন্ত্রী টোডরমল ছিলেন নবরত্নের অন্যতম । রাজা টোডরমলের জন্ম 1 জানুয়ারি, 1500 বলে মনে করা হয় । তিনি আকবরের সময়কালে জমি জরিপ পদ্ধতি চালু করেছিলেন । টোডরমলের বারাদারি ফতেপুর সিক্রিতে সংরক্ষিত আছে । বারাদারি হচ্ছে চার পাশ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা । আগে এটা অবহেলিত ছিল । সম্প্রতি সেখানে বড় জলাধার পাওয়া গিয়েছে, যা প্রায় 450 বছর পুরানো বলে মনে করা হচ্ছে । এর স্থাপত্য আজও বিস্ময় উদ্রেক করে ।
টোডরমল ভাগবত পুরাণের অনুবাদ করেছিলেন
জলাশয়ের প্রতিটি দেওয়ালে নয় রকমের নকশা অঙ্কিত আছে । এই জলাধারের ঝর্ণাটি লাল বেলেপাথর দিয়ে তৈরি । ঝর্ণার পাইপ তৈরিতে ব্যবহৃত ধাতুটি কী, তা এখনও স্পষ্ট করে জানা যায়নি । পুরো জায়গার সংস্কারের কাজ শুরু করেছে এএসআই । কথিত আছে রাজা টোডরমল ভাগবত পুরাণ ফার্সিতে অনুবাদ করেছিলেন ।
মেডপ্যাক পদ্ধতি কী ?
এই পদ্ধতি মূলত পাথরের উপর প্রয়োগ করা হয় । প্রথমে পাথরের উপর মাটির প্রলেপ লাগানো হয় । তারপর তা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয় । এই ধরনের পরিষ্কারের সময় কোনওরকম রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয় না । তাই এতে পাথরের ক্ষতির কোনও সম্ভাবনা নেই । পাথরের তৈরি জিনিসের উপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় । আশা করা হচ্ছে, এই পদ্ধতিতে তাজমহলটিকে আরও ঝলমলে করা সম্ভব হবে । প্রসঙ্গত, এর আগেও এই পদ্ধতি তাজমহলে প্রয়োগ করা হয়েছিল ।
আরও পড়ুন : হাতে দু'দিনের ছুটি, ঘুরে আসতে পারেন এইসব জায়গা