কালিকট (কেরল), 8 মার্চ: ম্যুরাল পেইন্টিংয়ে সাজানো ছোট্ট ঘরে বসেই সূক্ষ্মভাবে একটি ছোট সাদা মাটির প্লটে পেন্সিল চালিয়ে যান সনম ফিরোজ । ক্রমে কৃষ্ণের হাস্যোজ্জ্বল মুখের কালো স্কেচ যেন মূর্ত হয়ে ওঠে । হিন্দু দেবতাদের ম্যুরাল পেইন্টিং আঁকার জন্য তাঁর আবেগ বা শিল্পকর্মে তাঁর ধর্মীয় পরিচয় কখনও বাধা হয়ে ওঠেনি (Muslim Woman Draws Hindu Gods Picture)৷ তাঁর প্রিয় আঁকাগুলির মধ্যে অন্যতম হল হিন্দু দেবতা গণেশের পেইন্টিং (Art Beyond Religion)৷
শুরুটা হয়েছিল সেই ছোটবেলা থেকেই ৷ বাবা শাবির জান এবং মা জুহরাকেও চিত্রকলার মাধ্যমে তাঁদের সৃজনশীলতাকে জীবন্ত করে তুলতে দেখে বড় হয়েছেন সনম ৷ তবে বিয়ের পরই সনমের এই ইচ্ছে প্যাশনে রূপান্তরিত হয় ৷ তিনি প্রখ্যাত শিল্পী সতীশ থায়াতের কাছ থেকে ম্যুরাল পেইন্টিংয়ের আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেন । তাঁর সৃজনশীলতা শুধু ক্যানভাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং বাঁশের ডালপালা ও মাটির হাঁড়ির পাশাপাশি শাড়ি, চুড়িদার, শার্ট এবং ধুতির মতো অন্যান্য জিনিসেও ছড়িয়ে পড়েছে । তাঁর বেশিরভাগ সৃষ্টি হিন্দু দেবতা কৃষ্ণ এবং গণেশের মুখ ও মূর্তি দ্বারা সজ্জিত ।
কৃষ্ণ আঁকার কাজটি তাঁর কাছে একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা বলে জানালেন সনম ৷ ইটিভি ভারতকে তিনি বলেন, "আমি এই আঁকা খুব উপভোগ করি ৷ আমি কৃষ্ণের বিভিন্ন রূপ এঁকেছি এবং বুঝতে পেরেছি যে, এটি আমাকে ইতিবাচক শক্তি দেয় ।" তিনি আনন্দিত যে তাঁর ধর্মীয় পরিচয় তাঁর সৃষ্টিতে কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি ৷
তিনি খ্যাতি বা অর্থ নিয়ে আদৌ চিন্তিত নন । সৃজনশীল সৃষ্টিতে সন্তুষ্ট থাকা এবং অন্যদের কাছে সেই শিল্প ছড়িয়ে দেওয়াকেই তিনি অগ্রাধিকার দেন । বর্তমানে তিনি কয়েকটি ছবির মাধ্যমে ভগবান কৃষ্ণের অবতার চিত্রিত করার পরিকল্পনা করছেন । তিনি তাঁর ইনস্টাগ্রাম পেজের মাধ্যমে নেটিজেনদের সঙ্গে তাঁর সৃজনশীলতা শেয়ার করে নেন ও খুব ইতিবাচক সাড়া পান ৷
আরও পড়ুন: 'তিনি আমার বাবার মতো ছিলেন...', হিন্দু কর্মচারীর শব বহনের পর মন্তব্য মুসলিম ব্যবসায়ীর
কেন্দ্রীয় সরকারের একজন আইডি কার্ড ধারক শিল্পী সনম তাঁর শিল্পকর্মের জন্য ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ভারত জুড়ে প্রদর্শনীতে অংশ নেন । তিনি শুধু উচ্চমানের শিল্পকর্ম বিক্রি করেন না, মধ্যবিত্তের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের কাজও তৈরি করেন ।
কারুশিল্প সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান অন্যদের কাছে ছড়িয়ে দিতে আগ্রহী সনম মহিলাদের জন্য ম্যুরাল পেইন্টিং ক্লাসের আয়োজন করে থাকেন । ছয় মাসের কোর্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় । দুই সপ্তাহের ছোট কোর্সের বিকল্পও রয়েছে । মায়ের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সনমের মেয়ে সানুফার খান তাঁর অবসর সময়ে ম্যুরাল পেইন্টিংয়ে হাত পাকানোর চেষ্টা করছেন । ধর্মীয় সীমানা অতিক্রম করে ছবি আঁকার জন্য তিনি সবসময় পাশে পেয়েছেন তাঁর ছেলে ফারদিন খান এবং স্বামী ফিরোজ খানকে ৷