শ্রীনগর, 30 জুন : সন্ত্রাস মামলায় দীর্ঘ 12 বছর জেল খাটার পর নির্দোষ প্রমাণিত হলেন শ্রীনগরের বাসিন্দা 44 বছরের বসির আহমেদ বাবা ৷ জুন মাসে গুজরাতের আমেদাবাদের জেলা দায়রা আদালত তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে ৷ তাঁকে ইউএপিএ ধারার সব অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস করা হয়েছে ৷ যার পরেই তিনি শ্রীনগরে পরিবারের কাছে ফিরে গিয়েছেন ৷ প্রায় এক দশক সন্ত্রাসবাদী অভিযোগে জেলে বন্দি থাকার পরেও জীবনে ইতিবাচক বসির আহমেদ বাবা ৷ দীর্ঘ 12 বছর পর তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হতে পেরে খুশি বলে জানিয়েছেন তিনি ৷
দীর্ঘ এই জেলযাত্রার মাঝে, তাঁর বাবা এবং এক কাকাকে হারিয়েছেন বসির আহমেদ ৷ তাঁর বাবা গুলাম নবি একজন কনট্রাক্টর ছিলেন ৷ 2014 সালে কোলন ক্যানসার ধরা পড়ার পর 2017 সালে তাঁর মৃত্যু হয় ৷ এমনকি তাঁর বাবার মৃত্যুর খবরও সঠিক সময়ে পাননি তিনি ৷ তাঁকে আদালতে শুনানির জন্য পেশ করা হলে, আইনজীবীর থেকে বাবার মৃত্যুর খবর পান বসির ৷
বসির আহমেদ শ্রীনগরের রায়নাওয়ারি এলাকায় একটি কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউ চালাতেন ৷ সেই সঙ্গে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন বসির আহমেদ বাবা ৷ নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর এবার বসির শিক্ষকতার কাজ করবেন বলে ঠিক করেছেন ৷ প্রসঙ্গত, বসির আহমেদ একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি ৷ তিনটি বিষয়ের উপর তিনি পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন পাশ করেছেন ৷ রাষ্ট্র বিজ্ঞান, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং ইন্টেলেকচুয়াল প্রপারটি অ্যাক্টের উপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েশেন করেছেন তিনি ৷ আর এই পুরো পড়াশোনা তিন শেষ করেছেন জেলে বসেই ৷ ইটিভি ভারতকে বসির আহমেদ বাবা জানিয়েছেন, জেলে থাকাকালীন বেশিরভাগ সময় তিনি পড়াশোনা করে কাটিয়েছেন ৷ আর তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল একদিন তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মুক্তি পাবেন ৷
আরও পড়ুন : জম্মুর বায়ুসেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ কাণ্ডের অনুসন্ধানে এনআইএ
বসির আহমেদ বাবা 2010 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমেদাবাদে একটি কর্মশালায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন ৷ শ্রীনগরে ফেরার একদিন আগে তাঁকে গ্রেফতার করে গুজরাত পুলিশের সন্ত্রাসবাদ দমন শাখার গোয়েন্দারা ৷ হিজবুল মুজাহিদিনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় ৷ গুজরাত এটিএস বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল যে, তিনি যুবকদের সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ দেওয়ার একটি নেটওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা করছেন ৷ সেই সময় বসির আহমেদ বাবার পরিবার সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিল ৷
বসির আহমেদ বাবা জানিয়েছেন, তিনি তাঁর আইনজীবী জাভেদ পাঠানের কাছে সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন ৷ কারণ তাঁর জেলে থাকার সময়, সবচেয়ে বড় ভরসার মানুষ হয়ে উঠেছিলেন জাভেদ পাঠান ৷ তাঁর মামলার বিস্তারিত জানার পর এবং পরিবারের অবস্থা দেখার পর তিনি এই মামলা লড়তে কোনও পারিশ্রমিক নেননি বলে জানিয়েছেন বসির আহমেদ ৷ আশ্চর্যজনকভাবে বসির সমস্ত অভিযোগ থেকে বেকসুর প্রমাণিত হওয়ার একদিন আগে জাভেদ পাঠানের মৃত্যু হয় ৷