হায়দরাবাদ, 25 ডিসেম্বর : "আমরা শত্রুদের গুলির মুখোমুখি হব, আমরা স্বাধীন এবং স্বাধীন থাকব", এটা চন্দ্রশেখর তিওয়ারির (Chandra Shekhar Tiwari) জনপ্রিয় স্লোগান ৷ যিনি চন্দ্রশেখর আজাদ (Chandra Shekhar Azad) নামে বেশি জনপ্রিয় ৷ এই স্লোগান দেশের তরুণদের মধ্যে স্বাধীনতা আন্দোলনের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল ৷ শুধুমাত্র তাঁর জীবনই নয়, তাঁর মৃত্যুও বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে (Chandra Shekhar Azad lit the spirit among the youth to fight for the country with his slogan) ৷
বহু বিপ্লবী দেশকে ব্রিটিশদের দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে তাঁদের জীবন দিয়েছেন ৷ আর তাঁদের এই আত্মত্যাগের ফলে আমরা এখন একটা স্বাধীন এবং গণতান্ত্রিক দেশে বাস করছি ৷
1906 সালের জুলাইতে মধ্যপ্রদেশের আলিরাজপুর জেলায় (Alirajpur district of Madhya Pradesh) জন্মগ্রহণ করেন আজাদ ৷ তিনি মাত্র 15 বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে (non-cooperation movement) অংশ নেন ৷
আরও পড়ুন : 75 Years of Independence : হারদায় গান্ধিজির রুপোর ট্রে আজও রয়েছে সৌকল বোনেদের কাছে
1920-22 সাল পর্যন্ত চলেছিল মহাত্মা গান্ধির অসহযোগ আন্দোলন ৷ এতে অংশ নেওয়ার অপরাধে বেনারস বা আজকের বারাণসীতে (now Varanasi) চন্দ্রশেখর আজাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হয় তাঁকে ৷ সেখানে তিনি জানান তাঁর নাম 'আজাদ', উর্দুতে যার অর্থ 'মুক্ত অথবা স্বাধীন' (which in Urdu translates to 'Free or Liberated') ৷ আর তাঁর ঠিকানা 'জেল' (prison), জানান আজাদ ৷ যদিও চন্দ্রশেখরের বয়সের কথা ভেবে তাঁকে জেলে পাঠানো হয়নি ৷ কিন্তু পুলিশ নির্মম ভাবে চাবুক দিয়ে পিটিয়েছিল আজাদকে ৷
এই ঘটনার পর ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস (Indian National Congress) তাঁকে গৌরবান্বিত করে ৷ আর আজাদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ৷ চন্দ্রশেখর তিওয়ারি হয়ে ওঠেন চন্দ্রশেখর আজাদ (Chandra Shekhar Azad) ৷
1922 সাল, ফেব্রুয়ারি ৷ চৌরিচৌরায় (Chauri Chaura) বহু বিপ্লবী পুলিশদের হত্যা করে ৷ এর ফলে মহাত্মা গান্ধী তাঁর অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন ৷ আজাদ গান্ধির এই সিদ্ধান্তে হতাশ হয়ে পড়েন ৷ তিনি তখন ব়্যাডিক্যাল হিন্দুস্তান রিপাবলিক অ্যাসোসিয়েশন-এ (Hindustan Republican Association, HRA) যোগ দেন ৷
আরও পড়ুন : Independence Special : দেশের জন্য বীর বিক্রমে আত্মবলিদান কাশ্মীরের যুবকের
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে অস্ত্র লাগবে ৷ আর তা কিনতে লাগবে অর্থ ৷ তাই হিন্দুস্তান রিপাবলিক অ্যাসোসিয়েশন 1925 সালের 9 অগস্ট ট্রেনে ডাকাতি করে ৷ যা ইতিহাসে কাকোরি ট্রেন লুট (Kakori Train Robbery) নামে পরিচিত ৷ 10 জন এইচআরএ সদস্যের সঙ্গে আজাদও এই ট্রেন ডাকাতিতে অংশ নিয়েছিলেন ৷
রেল স্টেশনগুলি থেকে টাকা সংগ্রহ করে ট্রেনটি লখনউর দিকে যাচ্ছিল ৷ পথে ডাকাতি করে এইচআরএ সদস্যরা ৷ আচমকা এই কাণ্ডে হতবাক হয়ে যায় ব্রিটিশ সরকার ৷ পরে অবশ্য বেশ কয়েকজন ষড়যন্ত্রাকারীকে ধরে ফেলেছিল ব্রিটিশ সরকার ৷
1931 সালের 27 ফেব্রুয়ারি, আজাদকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলে ব্রিটিশ বাহিনী ৷ সেই সময় তিনি প্রয়াগরাজের আলফ্রেড পার্কে (Alfred Park, Prayagraj) তাঁর সঙ্গীদের আন্দোলনের পরিকল্পনা করছিলেন ৷
আজাদ তাঁর পিস্তল বের করে তাঁর সঙ্গীদের পালিয়ে যেতে বলেন ৷ পুলিশি এনকাউন্টার শুরু হয় ৷ আজাদ কয়েক ঘণ্টা গুলিগোলা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছিলেন ৷ গুলি শেষ হয়ে আসছিল, মাত্র একটাই বাকি ছিল তাঁর পিস্তলে ৷ পালানোর আর কোনও পথ নেই ৷ আর ব্রিটিশদের হাতে বন্দি হতে রাজি ছিলেন না আজাদ ৷ তাই তিনি বাকি গুলিটি দিয়ে তাঁর জীবন শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন ৷
চন্দ্রশেখর আজাদ ভালবেসে তাঁর পিস্তলটির নাম দিয়েছিলেন 'বামতুল বুখারা' (Bamtul Bukhara) ৷ এটা কোল্ট মডেল 1903 পকেট হ্যামারলেস সেমি অটো (Colt Model 1903 Pocket Hammerless semi-auto) পিস্তল ছিল ৷ পিস্তলের শেষ গুলিটি দিয়ে আজাদ নিজেকে গুলি করেন এবং মারা যান ৷ এনকাউন্টারের পর ব্রিটিশ আধিকারিকেরা পিস্তলটি ইংল্যান্ডে নিয়ে যান ৷
আরও পড়ুন : 75 Years of Independence : জীবনে একবারই গুলি ছুড়েছিলেন ভগৎ সিং
ভারত স্বাধীন হওয়ার পর 1976 সালের 3 জুলাই পিস্তলটি দেশে ফিরিয়ে আনা হয় ৷ সেটি এখন আলফ্রেড পার্কে এলাহাবাদ মিউজিয়ামে (Allahabad Museum built-in Alfred Park) সুরক্ষিত অবস্থায় রাখা আছে ৷ বীর চন্দ্রশেখর আজাদকে নিয়ে বহু গল্প আছে ৷ আজও যা তরুণদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে ৷
তাঁর সাহসিকতার জন্য আজাদ মানুষের মনে অমর হয়ে থাকবেন ৷ আর ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসেও ৷ দেশ এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর জন্য সব সময় গর্বিত ৷