অযোধ্যা, 16 জানুয়ারি: আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে সূচনা হচ্ছে অযোধ্যায় রামলালার অভিষেক অনুষ্ঠান ৷ সাতদিন বৈদিক আচার মেনে হবে পুজোপাঠ ৷ এমনটাই শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্টের তরফে জানানো হয়েছে ৷ আজ থেকে শুরু হয়ে সাত দিনের বৈদিক আচারগুলি শেষ হবে 22 জানুয়ারি রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ৷ ওই দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজের হাতে রাম মন্দিরের গর্ভগৃহে রামলালাকে স্থাপন করবেন ৷ শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, আগামী সোমবার রাম মন্দিরের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন দেশে বিদেশের হাজারও অতিথিরা ৷ তাঁদের সকলের উপস্থিতিতে 22 জানুয়ারি এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে।
'দশবিধ' স্নান
'দশবিধ' স্নান হল রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা আচারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ৷ প্রয়াসচিতা এবং কর্মকুটি পুজো ছাড়াও সরযু নদীর তীরে 'দশবিধ' স্নান অনুষ্ঠিত হবে । বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি গুজরাতের সোমনাথ থেকে রথযাত্রায় রওনা দিয়েছিলেন ভগবান রামকে উত্সর্গীকৃত একটি মন্দির নির্মাণের আন্দোলনের জন্য জনসমাগম করতে । নরেন্দ্র মোদি ছিলেন তাদের মধ্যে একজন যাঁরা আদবানির এই যাত্রায় সঙ্গী হয়েছিলেন ।
মোদির প্রশংসা আদবানির
রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের জন্য সাজসাজ রব অযোধ্যায় ৷ এরই মধ্যে হিন্দি সাহিত্য পত্রিকা, রাষ্ট্রধর্মের বিশেষ সংস্করণে প্রকাশিত 'রাম মন্দির নির্মাণ, এক দিব্য স্বপ্ন কি পূর্তি' একটি নিবন্ধ লিখেছেন লালকৃষ্ণ আদবানি ৷ সেই লেখায় তাঁকে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে ৷ এই লেখায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন তিনি । আদবানি লিখেছেন, "যখন নরেন্দ্র মোদি মন্দিরে ভগবান রামের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করবেন, তখন তিনি আমাদের ভারতের প্রতিটি নাগরিকের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন । আমি প্রার্থনা করি যে এই মন্দিরটি সমস্ত ভারতীয়কে শ্রী রামের গুণগুলিকে গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করে ৷"
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আচার পালন
1990 সালে যখন রাম মন্দির আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়তে থাকে সেসময় নরেন্দ্র মেদি গুজরাত বিজেপির সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন ৷ তিনি যাত্রা সংগঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন । এরপর ত্রিশ বছর পর 2020 সালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদি রাম মন্দিরের ভূমিপুজোয় যোগ দিয়েছিলেন । শুক্রবার নরেন্দ্র মোদি জানান, তিনি 11 দিনের বিশেষ আচার পালন করছেন । তারপরেই 22 জানুয়ারি রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন ৷
শংকরাচার্যদের বিরোধিতা
এদিকে চার শংকরাচার্যের মোদির হাতে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে সরব হয়েছেন ৷ চার শংকরাচার্য জানিয়েছেন, তাঁরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না । পুরীর শংকরাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী মহারাজ প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরোধিতা করে বলেন, তিনি এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চান না । তিনি পরে জানান, রামলালার মূর্তি স্থাপনের সময় ধর্মগ্রন্থের নিয়ম মানা হচ্ছে না ৷ তাই শংকরাচার্যরা অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷
অনুষ্ঠানের সূচি:
- 16 জানুয়ারি: প্রয়াসচিতা ও কর্মকুটি পুজো
- 17 জানুয়ারি: মূর্তি পরিসর প্রবেশ
- 18 জানুয়ারি: (সন্ধেতে) তীর্থ পুজো, জলযাত্রা এবং গান্ধাধিবাস
- 19 জানুয়ারি: (সকালে) ঔষধধিবাস, কেশরাধিবাস, ঘৃতধিবাস
- 20 জানুয়ারি: (সকালে) শর্করাধিবাস, ফলধিবাস
- 21 জানুয়ারি:(সকালে) মধ্যধিবাস, শৈয়াধিবাস (সন্ধ্যায়)
মন্দির ট্রাস্ট জানিয়েছে, 121 জন আচার্য এই অনুষ্ঠানগুলি পরিচালনা করবেন । ট্রাস্ট বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, "সাধারণত প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে সাতটি অধিবাস থাকে এবং ন্যূনতম তিনটি অধিবাস অনুশীলনে থাকে । এখানে 121 জন আচার্য অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন । শ্রী গণেশ্বর শাস্ত্রী দ্রাবিড় সমস্ত প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান, সমন্বয়, বাকি বিষয়গুলি পরিচালনা করবেন । অনুষ্ঠানের প্রধান আচার্য হলেন কাশীর শ্রী লক্ষ্মীকান্ত দীক্ষিত ৷"
অতিথিদের তালিকা নিয়ে শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট বলেছে, "ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের পুজোনীয় সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত, উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দীবেন পাতেল, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিতিতে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠিত হবে ।"
মন্দির ট্রাস্ট আরও জানিয়েছে, ভারতীয় আধ্যাত্মবাদ, ধর্ম, সম্প্রদায়, উপাসনা পদ্ধতি এবং ঐতিহ্যের সমস্ত স্কুলের আচার্যদের এই অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রতিনিধিত্ব থাকবে । 150টিরও বেশি ঐতিহ্যের সাধক, মহামণ্ডলেশ্বর, মণ্ডলেশ্বর, শ্রীমহন্ত, মহন্ত, নাগা এবং সেইসঙ্গে 50টিরও বেশি আদিবাসী, গিরিবাসি, তাতাবাসী, দ্বীপবাসী উপজাতি ঐতিহ্যের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে উপস্থিত থাকবেন ।
আরও পড়ুন: