দেরাদুন, 27 নভেম্বর: সারাদেশের নজর এখন উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা টানেলের দিকে। কারণ এই টানেলে গত 16 দিন ধরে আটকে রয়েছেন 41 জন শ্রমিক। তাঁদের সেখান থেকে বের করতে জোরকদমে চলছে উদ্ধার কাজ । তবে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা টানেল দুর্ঘটনার পর উত্তরাখণ্ডে আগামিদিনে প্রস্তাবিত বাকি টানেলগুলির নির্মাণ কাজ নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ।
10 বছরে রাজ্যে প্রায় 66টি প্রস্তাবিত টানেল: পার্বত্য রাজ্য উত্তরাখণ্ডে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য দ্রুত গতিতে কাজ করা হচ্ছে । যার মধ্যে প্রধানত নতুন রেল প্রকল্প, সড়ক প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে । এই কাজের আওতায় পাহাড়ি এলাকায় বেশিরভাগ জায়গায় টানেল নির্মাণ করা হবে । আগামী দশ বছরে উত্তরাখণ্ড হবে দেশের প্রথম রাজ্য যেখানে সর্বাধিক সংখ্যক রেল ও সড়ক টানেল তৈরি হবে। বর্তমানে ছোট-বড় মোট 18টি টানেল রয়েছে এই রাজ্যে । এর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় আরও 66টি টানেল নির্মাণের কথা রয়েছে । যার জেরে উত্তরাখণ্ডে বাড়বে সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ।
দেরাদুন থেকে তেহরি পর্যন্ত হবে বড় টানেল: ঋষিকেশ-কর্ণপ্রয়াগ রেল প্রকল্পে 17টি টানেল তৈরি করা হবে । যার অধীনে দেবপ্রয়াগ থেকে জনসু পর্যন্ত প্রায় 14 কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলের নির্মাণ কাজ চলছে, যা হবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম টানেল । এছাড়াও, দেরাদুন এবং তেহরির মধ্যে 30 কিলোমিটার দীর্ঘ বিশ্বের বৃহত্তম সড়ক টানেলও প্রস্তাবিত রয়েছে । এটি নির্মাণের সঙ্গে দেরাদুন এবং তেহরির মধ্যে দূরত্ব প্রায় 105 কিলোমিটার কমে যাবে ।
তেহরি জেলায় দেশের বৃহত্তম রেল টানেল: গঙ্গোত্রীকে যমুনোত্রী ধামের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য একটি 121 কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন প্রকল্পেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে । এই প্রকল্পের অধীনে, তেহরি জেলার জাজাল এবং মারোরের মধ্যে প্রায় 17 কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেলওয়ে টানেল তৈরি করা হবে । এই প্রকল্পে প্রায় 20টি টানেল নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে । এরপর চারধাম উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে বদ্রীনাথকে গৌরীকুন্ড জাতীয় সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করতে রুদ্রপ্রয়াগে একটি 902 মিটার টানেল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা প্রায় 200 কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে ।
বিজ্ঞানীদের পরামর্শ: ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ডক্টর কালাচাঁদ সাই বলেছেন, "যখন একটি টানেল তৈরি করা হয় তখন সেই স্থানে পরীক্ষা করে দেখা হয় যে ভূতাত্ত্বিক শিলা কতটা শক্ত এবং কতটা নরম রয়েছে । নরম পাথরের উপর কাজ করতে নিষেধ করা হয় ৷ জিওফিজিক্যাল স্টাডিও টানেল নির্মাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । কাজের ক্ষেত্রে ভূমি সম্পর্কে তথ্য জানা গুরুত্বপূর্ণ । তাই হিমালয় অঞ্চলে কোনও উন্নয়ন কাজ করা হলে ভূতাত্ত্বিক ও ভূ-ভৌতিক গবেষণা প্রয়োজন । নরম পাথরের উপর কাজ করা হলে সমস্যা দেখা দেয় ।"
তিনি জানান, উত্তরাখণ্ড অঞ্চলের সমগ্র হিমালয় ভঙ্গুর নয়, এর কিছু অংশ ভঙ্গুর এবং কিছু অংশ অত্যন্ত ভঙ্গুর । এই তথ্য ভূতাত্ত্বিক এবং ভূ-ভৌতিক গবেষণা থেকে পাওয়া যায় ৷ রাজ্যের হিমালয় নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছে ৷ যেখানে কোন এলাকায় কতটা লোড থাকা উচিত এবং কাঠামো কেমন হওয়া উচিত, তার একটি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে । হিমালয়ের নরম অংশে কাজ করা উচিত নয় । সব দিক বিবেচনা করে রাজ্যে উন্নয়নমূলক কাজ করা দরকার ।
উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা টানেলে আটকে পড়া 41 শ্রমিককে উদ্ধারের কাজ অব্যাহত রয়েছে । এর পাশাপাশি উত্তরাখণ্ড সরকার ভূমি ধসের কারণ জানতে ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউটকে একটি সমীক্ষা করার দায়িত্ব দিয়েছে । তারপর থেকে ওয়াদিয়ার দল ঘটনাস্থলে রয়েছে ৷ যারা সেখানকার ভূপৃষ্ঠের অবস্থা জানার চেষ্টা করছে । জল ও পাথরের অবস্থা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে । দলটি প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং টমোগ্রাফি অধ্যয়নের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও তথ্য পাবে । সেই তথ্য টানেলের কাজে নিয়োজিত দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীকে দেওয়া হবে ৷
আরও পড়ুন: