ভুবনেশ্বর, 6 জুন: শুক্রবার ওড়িশার বালাসোরে তিন ট্রেনের সংঘর্ষে ঘটা ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে 278 জনের ৷ এর মধ্যে কম করে 40 জনের মৃত্যু হয়েছে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে ৷ এরা প্রত্যেকেই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন ৷ রেল পুলিশ বা জিআরপি এর তরফে এমনটাই জানানো হয়েছে ৷ বালাসোরের রেল পুলিশ যে এফআইআর দায়ের করেছে সেখান থেকেই উঠে এসেছে এই তথ্য ৷
এফআইআর-এ বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত কামরাগুলির উপর ছিঁড়ে পরে রেল লাইনের ওভারহেড তার ৷ তা জড়িয়ে যায় বেশকিছু বগির সঙ্গে ৷ আর এর ফলেই ওই বগিগুলিতে আটকে পড়া অনেকের মৃত্যু হয় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে ৷ এই প্রসঙ্গে পি কুমার নায়েক নামে এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় মৃতদের অনেকের দেহেই আঘাতের চিহ্ন রয়েছে ৷ কিন্তু অনেকের শরীরেই আঘাতের কোনও চিহ্ন নেই, ওভারহেড লো টেনশন লাইনের বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়াতেই বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয় ৷ সংখ্যাটা প্রায় 40 ৷
রেল পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার অভিঘাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বহু কামরা কার্যত দেশলাইয়ের খোলের মতো রেললাইন থেকে পাল্টি খেয়ে দূরে ছিটকে পড়ে, কোনওটি উঠে যায় পাশের ডাউন লাইনে ৷ যার ফলে ট্রেনের ওভারহেড তারও ছিঁড়ে জড়িয়ে যায় কয়েকটি কামড়ার সঙ্গে ৷ উল্লেখ্য, বালাসোরের ট্রেন দুর্ঘটনায় 278 জনের মৃত্যু হয়েছে ৷ আহত প্রায় 1200 ৷ মৃতদের মধ্যে এখনও 101টি দেহ সনাক্ত করা বাকি ৷ মৃতদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের 101 জন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এরাজ্যের আহতের মধ্যে 97 জনের চিকিৎসা চলছে ওড়িশার বিভিন্ন হাসপাতালে ৷ নিখোঁজ রয়েছেন 31 জন ৷
আরও পড়ুন: ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে কটকের হাসপাতালে মমতা, জানালেন মৃতদের মধ্যে রাজ্যের 103 জন
উল্লেখ্য, রেল মন্ত্রকের নির্দেশে ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই ৷ শুক্রবারের ঘটনায় গাফিলতির বিষয়টি ইতিমধ্যেই রেলের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে ৷ এইদিন হাওড়া থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডলগামী আপ এক্সপ্রেসকে ওই লাইন দিয়ে যাওয়ার সময় গ্রিন সিগনাল দেওয়া হলেও, লাইনের পয়েন্ট করা ছিল লুপ লাইনের দিকে ৷ ফলে ঘণ্টায় 128 কিমি বেগে ওই লুপ লাইনে ঢুকে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ৷ লুপ লাইনে তখন দাঁড়িয়ে ছিল ইস্পাত আকরিক বোঝাই একটি মালগাড়ি ৷ সজোরে গিয়ে ওই মালগাড়ির পিছনে ধাক্কা মারে করমণ্ডলের ইঞ্জিন ৷ তার জেরে আপ করমণ্ডলের 24টির মধ্যে 21টি কামরাই লাইনচ্যুত হয় ৷ ট্রেনটির ইঞ্জিন উঠে যায় মালগাড়ির উপরে ৷ সেই সময় ডাউন লাইন দিয়ে যাচ্ছিল হাওড়াগামী যশবন্তপুর এক্সপ্রেস ৷ করমণ্ডলের দুর্ঘটনাগ্রস্ত কামরা গড়িয়ে গিয়ে ধাক্কা মারে ওই ট্রেনটির শেষ দুটি কামরায় ৷ এই দুর্ঘটনার পিছনে অন্তর্ঘাত রয়েছে বলে মনে করছে রেল, তাই তদন্তভার দেওয়া হয়েছে সিবিআইকে ৷