নয়াদিল্লি, 13 ডিসেম্বর : 20 বছর আগে আজকের দিনেই পাক সন্ত্রাসবাদী হানার শিকার হয়েছিল ভারতের সংসদ ভবন ৷ 2001 সালে 13 ডিসেম্বর অধিবেশন চলাকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ভুয়ো স্টিকার লাগানো গাড়ি নিয়ে সংসদ চত্বরে প্রবেশ করেছিল 5 জঙ্গি ৷ জঙ্গিদের এলোপাথাড়ি গুলিতে 9 জনের মৃত্যু হয়েছিল ৷ জখম হয়েছিলেন 18 জন ৷ যে ঘটনা আজও স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় ক্ষত হিসেবে রয়ে গিয়েছে ৷ ভয়াবহ সেই দিনের স্মৃতিকে মনে করে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷
রাষ্ট্রপতি এ দিন টুইটে লেখেন, ‘‘2001 সালে আজকের দিনে নিরাপত্তা বাহিনীর যে সকল সৈন্যরা সাহসিকতার সঙ্গে নিজেদের জীবনের বলিদান দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি (President Ram Nath Kovind Pay Homage to Parliament Attack Martyrs) ৷ জঘন্য সন্ত্রাসবাদী হামলার হাত থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের সংসদ ভবনকে তাঁরা রক্ষা করেছিলেন ৷ দেশ সবর্দা তাঁদের এই সর্বোচ্চ আত্মবলিদানের জন্য চির কৃতজ্ঞ থাকবে ৷’’
প্রধানমন্ত্রীও দিনটিকে স্মরণ করে একটি টুইট করেন ৷ তিনি লেখেন, ‘‘2001 সালে সংসদ হামলায় কর্তব্যরত নিহত সকল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি (Prime Minister Narendra Modi Pay Homage to Parliament Attack Martyrs) ৷ দেশের প্রতি তাঁদের সেবা এবং সর্বোচ্চ বলিদান দেশবাসীকে সবসময় অনুপ্রাণিত করবে ৷’’ সেই দিনের সংসদ হামলার সময় শীতকালীন অধিবেশনে ভবনের ভিতরে শতাধিক মন্ত্রী এবং সাংসদ উপস্থিত ছিলেন ৷ নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গিরা সংসদ ভবনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি সেদিন ৷ তা না হলে মৃত্যুর সংখ্যাটা সেদিন আরও বড় হতে পারত (Horrific Memories of Parliament Attack Still Fresh) ৷
2001 সালের 13 ডিসেম্বরের সেই সন্ত্রাসবাদী হানা কেবল সংসদ ভবনে নয় ৷ গোটা দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত করেছিল ৷ পাক মদত পুষ্ট জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবা এবং জইশ-ই-মহম্মদের 5 জঙ্গি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভুয়ো স্টিকার লাগানো সাদা অ্যাম্বাস্যাডর গাড়িতে সংসদ ভবনের 1নং গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছিল ৷ সেই সময় রাজধানীতে নিরাপত্তার তেমন কড়াকড়ি না থাকার সুযোগ নিয়েছিল সন্ত্রাসবাদীরা ৷ একে-47 রাইফেল, গ্রেনেড লঞ্চার, পিস্তল এবং হ্যান্ড গ্রেনেড নিয়ে সংসদ চত্বরে ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা ৷
আরও পড়ুন : Bipin Rawat Video Message : বিজয় পরবের ভিডিয়ো বার্তায় জীবন্ত হয়ে উঠলেন প্রয়াত রাওয়াত
তবে সংসদ চত্বর সম্পর্কে ধারণা না থাকায় মন্ত্রী, সাংসদদের ভবনের ভিতরে প্রবেশের পথ হারিয়ে ফেলে জঙ্গিরা ৷ গাড়ি নিয়ে সংসদ ভবন চত্বরে ঘুরতে থাকে তারা ৷ সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করেন 1নং গেটের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দিল্লি পুলিশের মহিলা কনস্টেবল কমলেশ কুমারি যাদব ৷ তিনিই প্রথম গাড়িটিকে দেখেন ৷ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় 1নং গেটে গিয়ে দ্রুত প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেন ৷ বেরনোর পথ না পেয়ে জঙ্গিরা কমলেশ কুমারি যাদবকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে ৷ জানা গিয়েছিল, তাঁর শরীরে মোট 11টি গুলি লেগেছিল ৷ ঘটনাস্থলেই কর্তব্যরত অবস্থায় প্রাণ হারান তিনি ৷
তবে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতায় প্রায় 40 মিনিটের চেষ্টায় 5 জঙ্গিকে নিকেশ করা সম্ভব হয়েছিল ৷ সেই সময় দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ছিলেন অশোক চন্দ ৷ তিনি জানান, সেই সময় তিনি স্পেশাল সেলের দফতরে ছিলেন ৷ যখনই হামলার খবর পান, তিনি নিজে ফোর্স নিয়ে সংসদের উদ্দেশ্য রওনা দেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘সেই সময় পরিস্থিতি মোটেও স্বাভাবিক ছিল না ৷ পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল ৷ জঙ্গিদের সঙ্গে তাঁর দলের সংঘর্ষের মাঝেই স্পেশাল সেলের আরও একটি দল সেখানে উপস্থিত হয় ৷ আর তার কয়েক মিনিটের মধ্যে সিআরপিএফ’র জওয়ানরা সেখানে চলে আসে ৷ আর দ্রুত ওই 5 জঙ্গিকে খতম করা হয় ৷ তিনি এও জানান, আধাসেনার যে দলটি সেই সময় সংসদে পৌঁছেছিল ৷ তাঁরা সবেমাত্র জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ফিরেছিলেন ৷’’