আহমেদাবাদ, 26 নভেম্বর: শুরুটা হয়েছিল 1919 সালে ৷ গুজরাতের নবজীবন ট্রাস্টে (Navjivan Trust) আজও রয়েছেন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ ৷ হিন্দি, গুজরাতি ও অন্যান্য বেশকিছু ভাষায় 'নবজীবন' কথাটির অর্থ হল নয়া জীবন (Independence Special)৷
1919 সালের 7 সেপ্টেম্বর নবজীবন সাপ্তাহিক পত্রিকার (Navjivan Weekly) সম্পাদক হয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধি (Navjivan Trust founder Mahatma Gandhi)৷ এর পরপরই 1930-র দশকে স্বাধীনতা আন্দোলনে নয়া বাতাস এনে তিনি এই ট্রাস্ট তৈরি করেন ৷ তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল তাঁর অহিংস নীতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আদর্শ দেশবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া ৷
এখনও পর্যন্ত এই ট্রাস্ট গান্ধিজির সাহিত্য ও আদর্শের জ্ঞানভাণ্ডার (Gandhian principles) হিসেবে বিবেচিত হয় ৷ দশকের পর দশক ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ইংরাজি ছাড়াও 18টি ভারতীয় ভাষায় 1000-এরও বেশি বই প্রকাশ করেছে এই ট্রাস্ট ৷
বহু মেশিন ও টাইপরাইটারও সংরক্ষণ করেছে নবজীবন ট্রাস্ট (Gandhi's Navjivan Trust)৷ ব্রিটিশদের দাসত্ব থেকে মুক্তি ও ভারতের স্বাধীনতা আদায় করে নেওয়ার জন্য গান্ধিজির নবজীবন ও ইয়ং ইন্ডিয়ায় যে লেখাগুলি প্রকাশিত হত, তা ছাপা হত সেই সব মেশিন দিয়ে ৷ দিল্লির সংবাদপত্র কমরেড যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন তার মালিক মৌলানা মহম্মদ আলি নবজীবনকে সেই প্রিন্টিং প্রেসগুলি দান করেছিলেন ৷
প্রাথমিক ভাবে নবজীবন পত্রিকা প্রতি মাসে প্রকাশিত হত ৷ তবে গান্ধিজি এই পত্রিকার সম্পাদক হওয়ার পর থেকে পত্রিকাটি সাপ্তাহিক হয়ে যায় ৷ এর পাঠকের সংখ্যাও যথেষ্ট বাড়ে ৷ তার জন্য নতুন প্রিন্টিং প্রেসে যেতে হয় গান্ধিজিকে ৷ 1922 সালের 11 ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু হয় নবজীবন মুদ্রণালয়ের (Navjivan Mudranalaya)৷ ক্রমবর্ধমান পাঠকের কথা মাথায় রেখে সারখিগাড়া ওয়াড়িতে 400 টাকা দিয়ে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে তৈরি হয় এই ছাপাখানা ৷
তবে নবজীবন ট্রাস্টের নথিগুলি নথিভুক্ত হয় তার আরও অনেক পরে, 1929 সালের 27 নভেম্বর ৷ ট্রাস্টের প্রথম সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ৷
প্রতিষ্ঠার সময়ই নবজীবন ট্রাস্টের তরফে বলা হয়েছিল যে, শান্তিপূর্ণ কোন পদ্ধতিতে 'স্বরাজ' (Swaraj) আসবে, সে বিষয়ে মানুষকে আলোকিত ও শিক্ষিত করাই হবে ট্রাস্টের প্রধান উদ্দেশ্য ৷
আরও পড়ুন : Independence Special : আজও শহিদ ক্ষুদিরামের স্মৃতিতে বুঁদ মুজফ্ফরপুর
চরকা, খাদি, মহিলাদের ক্ষমতায়ন, বিধবা বিবাহ, মহিলাদের শিক্ষা, হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে ঐক্যে বিশেষ জোর দিয়েছিল এই ট্রাস্ট ৷ পাশাপাশি অস্পৃশ্যতা, বাল্য বিবাহ রোধেও সরব ছিল নবজীবন ট্রাস্ট ৷ গোরুদের সুরক্ষা দিতে ডেয়ারি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দিশাও দেয় তারা ৷
ইংরেজি ভাষাকে অযাচিত ভাবে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়ার বিরোধিতাও করেছে নবজীবন ট্রাস্ট ৷ পরিবর্তে হিন্দি ও হিন্দুস্থানকে আরও বেশি করে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার উপর জোর দেয় তারা ৷
এ ছাড়াও ধর্মীয়, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বই প্রকাশেও বিশেষ গুরুত্ব দিত ট্রাস্ট ৷ তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের কোনও বিজ্ঞাপন প্রকাশ করত না ৷ প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম বিবৃতি দিয়ে তুলে ধরত ও প্রশাসনিক বছর শেষের তিন মাসের মধ্যে নিজেদের অ্যাকাউন্ট তুলে ধরত ৷
আরও পড়ুন : Independence Day : মাস্টারদা'র সহযোগী অনুরূপ চন্দ্র সেনকে ভুলতে বসেছে বুড়ুল গ্রাম
পত্রিকা ও বইয়ের মাধ্যমে গান্ধিজির ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরাও অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল নবজীবন ট্রাস্টের ৷ আত্মনির্ভরতায় বিশ্বাসী গান্ধিজি বিভিন্ন প্রকাশনার ও মুদ্রণের কাজের মাধ্যমে নবজীবন ট্রাস্টকেও আত্মনির্ভর (Atmanirbhar Navjivan Trust) করে তুলেছিলেন ৷ সেই প্রকাশনা ও মুদ্রণ আজও চলছে ৷ যার ফলে আজ পর্যন্ত কোনও অনুদান বা দান গ্রহণ করেনি এই ট্রাস্ট ৷