কলকাতা, 21 এপ্রিল: শহরের ত্রাহি ত্রাহি গরমে প্রাণ যায় যায় অবস্থা ৷ গরমে কয়েকদিন ঠান্ডার অনুভূতি পেতে পাহাড়ই ভরসা ৷ কিন্তু দার্জিলিং আর কতই বা যাওয়া যায় ৷ ভাবছেন অন্য কোথাও যাবেন ৷ তবে সেই অন্য কোথাও 'উটি' হলে কেমন হয় ? নীলগিরি পর্বতের গা ঘেঁষে সারি সারি চা- বাগান ৷ তার উপর পাহাড়ি ঠান্ডা একবারে জমে উঠবে ৷ ছুটি নিয়ে চিন্তা নেই ৷ এক সপ্তাহের ছুটিই যথেষ্ট ৷ 7 দিন নিজেকে সঁপে দিন উটির পাহাড়ি সৌন্দর্যের কোলে ৷
রেলপথে যেতে হলে হাওড়া থেকে তামিলনাড়ুর ট্রেন ধরতে হবে ৷ তবে উটির নিজস্ব স্টেশন আছে ৷ যেটি উটি রেলওয়ে স্টেশন নামে পরিচিত ৷ এছাড়া কোয়েম্বাটুর হয়েও যেতে পারেন উটি ৷ আইআরসিটিসি ওয়েবসাইটে গেলে ট্রেন সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য বিস্তারিত পেয়ে যাবেন ৷
আবার হাওড়া থেকে বেঙ্গালুরু-মাইসোর হয়েও পৌঁছে যেতে পারেন উটি ৷ এক্ষেত্রে মাইসোর স্টেশনে নেমে বাসে করে উটি যেতে হবে ৷ এসি ও নন-এসি, দু’রকম বাসই রয়েছে ৷ আপনার পছন্দমতো যেকোনও একটা বেছে নিতে পারেন ৷ মাইসোর থেকে বাসে উটি পৌঁছতে সর্বোচ্চ 5-6 ঘণ্টা সময় লাগে ৷ পুরো জার্নির মধ্যে 30 মিনিট বিশ্রাম দেয় বাসগুলি ৷
উটির কাছাকাছি বিমানবন্দর হল কোয়েম্বাটুর বিমানবন্দর ৷ যে কোনও রাজ্য থেকে গেলে এই বিমানবন্দরে নামতে হবে ৷ বিভিন্ন সময়ে বিমান ভাড়ায় ছাড়ের অফার থাকে ৷ সেই সময়ে বিমানের টিকিট কাটলে খরচ কম হবে ৷ টিকিট কাটার বেশ কিছু আগে থেকে নজর রাখুন টিকিটের দামে ৷
উটি যেহেতু নীলগিরি পাহাড়ের কোলে অবস্থিত তাই এখানে সবসময়ই ঠান্ডা থাকে ৷ তবে অক্টোবর থেকে জুন মাস উটি ভ্রমণের সেরা সময় ৷ যদিও মার্চ থেকে জুন-জুলাই পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে ৷ এই বছর ডিসেম্বরের শেষে এবং জানুয়ারিতে তাপমাত্রা এই বছর হিমাঙ্কের নীচে নেমে গিয়েছিল ৷ বরফেরও দেখা মিলেছিল ৷
সবুজে ঘেরা উটিতে রয়েছে একাধিক হোম-স্টে ৷ এছাড়া টু-স্টার, থ্রি-স্টার হোটেল আছে ৷ হোটেল বুকিংয়ের খরচ 1500 টাকা থেকে শুরু ৷ এছাড়াও বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি আছে যারা হোটেল বুক থেকে শুরু করে সাইডসিন করায় ৷ এর জন্য প্যাকেজও আছে ৷ চাইলে সেইরকম একটি প্যাকেজ বুক করে নিতে পারেন ৷ সেক্ষেত্রে খরচও কম হবে ৷
গরম থেকে ছুটি নিয়ে হারিয়ে যান ‘পাহাড়ের রানি’র কোলে ‘পাহাড়ের রানি’তে কী কী দেখবেন ?
উটির ট্যুরপ্ল্যানের মধ্যে অবশ্যই রোজ গার্ডেন রাখতে হবে ৷ এই গার্ডেনে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ ৷ 4 হেক্টর জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছে গোলাপ বাগান ৷ 20 হাজারেরও বেশি প্রজাতির গোলাপ রয়েছে এই বাগানে ৷ গোলাপের মাঝে একটা ছবি তুলতেই পারেন ৷ এখন আবার রিলসের যুগ ৷ তাই গোলাপের সঙ্গে একটা রিলস না-করলে হয় নাকি ? গোলাপ বাগানের টিকিটের প্রবেশমূল্য মাথাপিছু 40 টাকা (বাড়তেও পারে) ৷
উটির দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম হল উটি লেক ৷ এটি কৃত্রিম হ্রদ ৷ অতীতে মাছ ধরার জন্য এই হ্রদ তৈরি হলেও এখন তা হয় না ৷ বর্তমানে এই হ্রদে নৌকা ভ্রমণ হয় ৷ এই লেকের কাছে একটি বোটিং হাইজ আছে ৷ যেগুলি ভাড়া নিয়ে হ্রদে চালাতে পারেন ৷ ঘণ্টা পিছু ভাড়া নেওয়া হয় ৷ হানিমুনে গিয়ে ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে নৌ-বিহার করতে চাইলে অবশ্যই উটি লেকে যেতে হবে ৷
এটি একটি সরকারি স্থাপত্য ৷ এটি সাধারাণত তামিলনাড়ুর হর্টিকালচার দ্বারা পরিচালিত ৷ প্রায় 1 হাজার প্রজাতির গাছ আছে এই বোটানিক্যাল গার্ডেনে ৷ যার মধ্যে আছে গুল্ম প্রজাতি, বিদেশি ও দেশীয় গাছ ৷ প্রায় 55 একর জায়গা জুড়ে রয়েছে এই গার্ডেন ৷ ছবি তোলার জন্য অত্যন্ত সুন্দর জায়গা এটি ৷ সপ্তাহে প্রতিদিনই খোলা থাকে এটি ৷ প্রবেশমূল্য মাথাপিছু 30 টাকা ৷
উটি ঘুরতে গিয়ে পাইকারা ফলস না-ঘুরলে মনে হবে অর্ধেক ট্যুর অসমাপ্ত থেকে গিয়েছে ৷ সারিসারি পাইন আর চা-গাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে ৷ সেই দৃশ্য দেখতে দেখতে সফর শুরু হবে ৷ তারমধ্যে অন্যতম এই পাইকারা ফলস এবং লেকের দৃশ্য কোনওভাবেই মিস করা যাবে না ৷ এছাড়াও এখানে রয়েছে একটি বোট হাউস ৷ যেটি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ৷
উটি সফরকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে বান্দিপুর ফরেস্ট সাফারি যেন কোনওভাবেই বাদ না-পড়ে ৷ সফর শেষ বা সফর শুরুর আগেও যেতে পারেন এই বান্দিপুর ফরেস্ট সাফারিতে ৷ উটি থেকে মাইসোর অথবা মাইসোর থেকে উটি যাওয়ার রাস্তায় পড়বে বান্দিপুর ৷ সড়কপথে যেতে গেলে ভোর 5টায় বেরিয়ে পড়তে হবে ৷ জঙ্গল সাফারি তাড়াতাড়ি শুরু করাই ভালো ৷ ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যে পৌঁছে যাবেন বান্দিপুর জঙ্গলে ৷ সেখানে টিকিট কেটে সাফারি শুরু করতে পারবেন ৷ বন্যপরিবেশে ময়ূর, হাতি, হরিণ আপনাকে স্বাগত জানাবে ৷
কুন্নুরের স্লিপিং লেডি ভিউ পয়েন্ট উটিতে আর কী কী দেখবেন ?
দোদাবেত্তা, অ্যাভালঞ্চ লেক, ওয়েনলক হিল যেন কোনওভাবেই মিস না হয় ৷ এই নৈস্বর্গিক সৌর্ন্দর্য সৃষ্টিকর্তা ঢেলে সাজিয়েছেন ৷ এছাড়াও আছে একাধিক সিমেনার শ্যুটিং স্পষ্ট ৷ সেগুলিও দেখতে পারেন ৷ উটি মার্কেটে, চকোলেট ফ্যাক্টরি, চা-ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখতে পারেন ৷ উটি মার্কেটে সাধ্যে মধ্যে পেয়ে যাবেন সুন্দর শীত পোশাক ৷
আরও পড়ুন:
- মেঘেদের হাতে নিয়ে খেলা করার ইচ্ছে ? আপনার অপেক্ষায় মাহালদিরাম
- বছর শুরুতেই মন উড়ুউ়ড়ু ? আপনার ঠিকানা হোক রাজ্যের শেষ সীমানা সাঙ্গসেরে গ্রাম