পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

56 কোটি মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলছে ! 'মৃত্যুকুম্ভ' মন্তব্যে মমতাকে তোপ যোগীর, পালটা তৃণমূলের - YOGI ON MAHAKUMBH

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'মৃত্যুকুম্ভ' মন্তব্যের পালটা জবাব দিলেন যোগী আদিত্যনাথ ৷ তাঁর অভিযোগ আবার উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷

ETV BHARAT
'মৃত্যুকুম্ভ' মন্তব্যে মমতাকে তোপ যোগীর (নিজস্ব চিত্র)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 19, 2025, 5:42 PM IST

কলকাতা/লখনউ, 19 ফেব্রুয়ারি: পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় দাঁড়িয়ে যোগীরাজ্যের মহাকুম্ভকে 'মৃত্যুকুম্ভ'-এর আখ্যা দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর সেই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করে এবার উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা থেকে জবাব দিলেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ৷

এ প্রসঙ্গে প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভের মহিমার কথা তুলে ধরে তাঁর অভিযোগ, সনাতন ধর্ম, গঙ্গা এবং ভারত সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ তাঁর এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে বাংলার মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার সাফাই, মমতা মহাকুম্ভের বদনাম করেননি, সেখানকার অব্যবস্থার কারণে ধর্মপ্রাণ মানুষের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন ৷

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিধানসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "মহাকুম্ভের কথা আমি নাই বা বললাম ৷ ওটা এখন মৃত্যুকুম্ভ হয়ে গিয়েছে ৷ মৃত্যুকূপের মতো ৷" তিনি আরও বলেন, "আমি মহাকুম্ভকে সম্মান করি ৷ শ্রদ্ধা জানাই ৷ পবিত্র গঙ্গা মাকে আমি সম্মান জানাই ৷ কিন্তু, পরিকল্পনা না-করে এত প্রচার করা হল ! এত মানুষের মৃত্যু !" পাশাপাশি, মহাকুম্ভে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা, জল দূষিত হওয়া, সাধারণ ও ভিআইপি-র বৈষম্যের অভিযোগ তুলে সে রাজ্যের প্রশাসনের ব্যবস্থাপনার দিকে আঙুল তোলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷

তাঁর এই মন্তব্যের পর 24 ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই বুধবার উত্তরপ্রদেশের বিধানসভায় এই নিয়ে মুখ খুললেন যোগী আদিত্যনাথ ৷ তিনি বলেন, "আমরা যখন এখানে আলোচনায় অংশগ্রহণ করছি, তখন 56.25 কোটিরও বেশি ভক্ত ইতিমধ্যেই প্রয়াগরাজে তাঁদের পবিত্র স্নান করেছেন...যখন আমরা সনাতন ধর্ম, মা গঙ্গা, ভারত বা মহাকুম্ভের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছি বা ভুয়ো ভিডিয়ো ছড়িয়ে দিচ্ছি, তখন এটি 56 কোটি মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলার মতো হয়ে যাচ্ছে ৷"

কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠী মহাকুম্ভ আয়োজন করে, এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে যোগী দাবি করেন, "মহাকুম্ভ সমাজের, কোনও রাজনৈতিক সত্তার নয় ৷ কোনও নির্দিষ্ট দল বা সংগঠন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে না...এই অনুষ্ঠান সমাজের, সরকার তার দায়িত্ব পালনের জন্য একজন সেবক হিসেবে সেখানে আছে...৷ এটা আমাদের সৌভাগ্য যে আমাদের সরকার এই শতাব্দীর মহাকুম্ভের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে ৷ দেশ ও বিশ্ব এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে এবং সমস্ত মিথ্যা প্রচার উপেক্ষা করে একে সাফল্যের নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে ।"

মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনাকে দুঃখজনক বলে আখ্যা দিলেও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনা নিয়ে 'রাজনীতি করার প্রচেষ্টার' সমালোচনা করেছেন ৷ তিনি বলেন, "মহাকুম্ভের সাতদিন বাকি আছে এবং পরিসংখ্যান বলছে, আজ বিকেল পর্যন্ত 56 কোটিরও বেশি ভক্ত পবিত্র স্নান করেছেন...৷ 29 জানুয়ারি পদপিষ্ট হওয়ার শিকার সকলের প্রতি আমাদের সহানুভূতি...এবং কুম্ভ ভ্রমণের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের প্রতিও আমাদের সমবেদনা । পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমাদের সমবেদনা, সরকার তাঁদের পাশে রয়েছে ৷ সরকার তাঁদের সম্ভাব্য সব উপায়ে সাহায্য করবে, কিন্তু এটিকে রাজনীতিকরণ করা কতটা উপযুক্ত ?"

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি মহাকুম্ভের বিপর্যয় নিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি ও আরজেডি-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি ৷ সে প্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন যে, সমাজবাদী পার্টির নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল কুম্ভের বিরুদ্ধে এবং গত বিধানসভা অধিবেশনে উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনায় তারা অংশ নেয়নি ।

যোগীর কথায়, "তারা (বিরোধী দল) প্রথম দিন থেকেই মহাকুম্ভের বিরুদ্ধে ৷ গত অধিবেশনে মহাকুম্ভের আলোচনা ও প্রস্তুতি চলছিল ৷ আমরা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতাম এবং আপনাদের পরামর্শ গ্রহণ করতাম, কিন্তু আপনারা অধিবেশন চালাতে দেননি ৷ সমাজবাদী পার্টির জাতীয় সভাপতি জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, মহাকুম্ভে অর্থ ব্যয় করার কী প্রয়োজন? সমাজবাদী পার্টির সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলি এমন ভাষা ব্যবহার করেছে যা কোনও সভ্য সমাজ ব্যবহার করবে না ৷ লালু যাদব কুম্ভকে 'ফালতু' বলেছিলেন । সমাজবাদী পার্টির আরেক অংশীদার বলেন যে, মহাকুম্ভ 'মৃত্যুকুম্ভ' হয়ে উঠেছে ৷ কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি এবং টিএমসি নেতারা দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন ৷ সনাতন ধর্ম সম্পর্কিত অনুষ্ঠান আয়োজন যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমাদের সরকার সেই অপরাধ করেই যাবে ৷"

এদিকে, মহাকুম্ভকে ছোট করে দেখানোর যে অভিযোগ এদিন যোগী করেছেন, তা উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ৷ তিনি বলেন, "এরাজ্যের সরকার থেকে শুরু করে কেউই মহাকুম্ভের বদনাম করছে না । এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মহাকুম্ভের কোনও সমালোচনা করেননি । মহাকুম্ভকে কেন্দ্র করে যে অপব্যবস্থা চোখে পড়েছে, সেই অবস্থার জেরে ধর্মপ্রাণা মানুষজন যাঁরা কুম্ভে গিয়েছিলেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁদের দুর্দশার কথা বলেছেন তিনি । অপব্যবস্থার জন্যই মহাকুম্ভে এত পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়েছে । শুধু তাই নয়, যে পবিত্র গঙ্গায় পুণ্যার্থীরা ডুব দিয়ে স্নান করছেন, সেই গঙ্গায় মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গিয়েছে, যা মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক ৷ এই রিপোর্ট কি উনি অস্বীকার করতে পারেন ?"

তিনি আরও বলেন, "যে মানুষজনের মৃত্যু হল, তাঁদের লাশ কফিনবন্দি করে উনি পাঠিয়ে দিলেন এ রাজ্যে ৷ অথচ কোনও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তৈরি করলেন না । এমনকি মারা যাওয়ার কারণও পরিষ্কার করে জানালেন না । এই সমস্ত কিছু অব্যবস্থার কারণেই । এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যথেষ্ট সহনশীল মানসিকতা নিয়ে চলেন । সম্প্রীতির যে পরিবেশ তিনি এখানে তৈরি করেছেন তাঁর থেকে অনেকেরই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details