সমালোচনার তোয়াক্কা না করা এক আকাশ সাহসের নাম 'আসমা' দাদপুর,08 মার্চ: বাংলা তথা ভারতের বহু প্রত্যন্ত অঞ্চলে আজও কন্যাসন্তান জন্মালে, তাকে পরিবারের বোঝা হিসেবে ধরে নেওয়া হয় ৷ প্রথমে তাকে বড় করা ও পরে বিয়ে দেওয়া ৷ কিন্তু, একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে মেয়েরা শুধুই পরিবারের বোঝা নয় ৷ তা অতীতে অনেকেই প্রমাণ করেছেন ৷ হুগলির দাদপুরের রসুলপুরের প্ৰত্যন্ত গ্রামের আসমা তারা খাতুন (26), তা আরও একবার প্রমাণ করলেন ৷ সঙ্গে তাঁর পরিবার ৷ দারিদ্রতা ও পারিপার্শ্বিক নানান সমালোচনাকে জয় করে আজ তিনি ভারতীয় রেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো পাইলট ৷
তাঁর এই উত্থানের পিছনে থাকা কঠিন লড়াইয়ের কাহিনী শুনল ইটিভি ভারত ৷ মহম্মদ জাকির হোসেন ও নুরজাহান বেগমের বড় মেয়ে আসমা তারা খাতুন ৷ বড় মেয়ে আসমা ছাড়াও, এক মেয়ে ও ছেলে রয়েছে ৷ পাঁচজনের সংসারে সম্বল বলতে দু’ বিঘা চাষের জমি ও কয়েকটি গবাদি পশু ৷ কিন্তু, সেই রোজগারে সংসার ও তিনসন্তানের পড়াশোনা চালানো ছিল খুবই কঠিন ৷ কিন্তু, তা সত্ত্বেও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন আসমার বাবা-মা ৷ সমস্যা হলেও, দুই মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন ৷
আসমা ধনিয়াখালী ব্লকের মহামায়া বিদ্যমন্দির স্কুলের ছাত্রী ছিলেন ৷ সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে দুর্গাপুর বেঙ্গল কলেজ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা ৷ যার খরচ কম ছিল না ৷ আসমার স্কলারশিপের টাকা সেই খরচে সাহায্য করলেও, শুরুর দিকে আসমার মায়ে সোনার গয়না বন্ধক রাখতে হয় ৷ এসব দেখে আত্মীয়স্বজন ও আশেপাশের লোকজন অনেক কথাই বলেছিল ৷ এমনকি চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার সময় একের পর এক ব্যর্থতা যখন তাঁকে দেখতে হয়েছে, তখন অনেকরকম মন্তব্যও করেছে লোকজন ৷ কিন্তু, সেগুলি তাঁর এগিয়ে চলার জেদ বাড়িয়ে দিয়েছিল ৷
আসমা বলেন, "বহুবার বিফলতা এসেছে ৷ কিন্তু, হাল ছাড়িনি ৷ নিজের লক্ষ্য স্থির রেখে পড়াশোনা করে গিয়েছি ৷ অৰ্থের অভাবে উচ্চশিক্ষার জন্য কোচিং নিতে পারিনি ৷ অনলাইন (ইউটিউব)প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পড়াশোনা করে প্রথমে ব্যাঙ্কের পরীক্ষা ও পরে রেলের পরীক্ষা দিয়ে পাশ করি ৷ আগামী দিনে রেলের লোকো পাইলট হিসেবে নিজের সেরাটা দিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করব ৷"
আসমা তারা খাতুনের মা নুরজাহান বেগম বলেন, "আমাদের দারিদ্রতার মধ্যে দিয়ে গেছে তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে ৷ মাত্র দু’বিঘা জমি ও গরু প্রতিপালন করে সংসার চালিয়েছি ৷ মেয়ে পড়াশোনায় ভালো ছিল ৷ তাই আগাগোড়াই ইচ্ছে ছিল ভালো জায়গায় নিয়ে যাব ৷ আমাদের ভালো টিউশন দেওয়া মতো ক্ষমতা ছিল না ৷ গয়না বিক্রি করে সায়েন্স বিভাগে পড়াশোনা করিয়েছি ৷ এখন আমার দুই মেয়ে চাকরি করছে ৷ ছোট ছেলের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছে আমার বড় মেয়ে ৷ সকল মায়েদের কাছে আবেদন মেয়েদের বিয়ে না দিয়ে, স্বনির্ভর হওয়ার জন্য সমর্থন করুন ৷"
প্রায় একবছর হয়ে গিয়েছে ভারতীয় রেলের খড়গপুর ডিভিশনে অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো পাইলট হিসেবে চাকরি করছেন ৷ সঙ্গে পড়াশোনা করে চলেছেন, আরও উঁচুস্তরে যাওয়ার জন্য ৷ আসমার বোনও বর্তমানে চাকরি করেন ৷ তিনি পেশায় নার্স, বাইরে থাকেন ৷ আসমা বর্তমানে আন্দুলে পোস্টিং ৷ বাড়ির দায়িত্বের পাশাপাশি, ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচও জোগান তিনি ৷ শত প্রতিকূলতাকে জয় করে আজ আসমা একজন সফল নারী ৷ তাঁর বাবা-মার ভরসা ৷ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ইটিভি ভারতের আশা, আসমা তারা খাতুন সমাজের সকল মেয়েদের কাছে আদর্শ হয়ে উঠুক ৷
আরও পড়ুন:
- মিথ ভাঙলেন রাধা, দাবাং দিল্লি কবাডি দলের একমাত্র মহিলা কর্ণধার
- যৌন হেনস্থার শিকার শিশুদের প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষার লড়াইয়ে ভদ্রেশ্বরের পায়েল
- ঈশ্বরের সুন্দর সৃষ্টি, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নিজের খেয়াল রাখুন এইভাবে