সন্দেশখালি, 2 জুন: ভোটের পরদিনও শান্ত হল না সন্দেশখালি ৷ রবিবার আগারহাটি মণ্ডলপাড়ায় ঝাঁটা, লাঠি, বাঁশ হাতে ফের রাস্তায় নেমে 'রণংদেহী' মূর্তিতে গ্রামের মহিলারা ৷ পুলিশ ও ব়্যাফের সঙ্গে হাতাহাতি, ধস্তাধস্তিতে জড়ালেন গ্রামবাসীরা। তারই মধ্যে পুলিশের গাড়ি থেকে আটক হওয়া এক গ্রামবাসীকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ৷ স্বভাবত, ঘটনায় সরগরম হয়ে উঠেছে সন্দেশখালি ৷
পুলিশের সঙ্গে মহিলাদের ধস্তাধস্তি সন্দেশখালিতে (নিজস্ব প্রতিনিধি) এই অশান্তির সূত্রপাত, রবিবার গ্রামে পুলিশের অভিযান ঘিরে ৷ এদিন দুপুরের দিকে আগারহাটি মণ্ডলপাড়ায় পুলিশ, র্যাফ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালান বসিরহাট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ শুরু হয় গ্রামে ধরপাকড় ৷ সাধন রঞ্জিত নামে এক গ্রামবাসীকে তাঁর বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ ৷ সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা ৷ পুলিশি অভিযানের বিরোধিতা করে বাঁশ, গাছের ডাল হাতে নিয়ে পথে নামেন মহিলারা।গ্রামের ভিতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ ও র্যাফের সামনে রীতিমতো 'ঢাল' হিসেবে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পড়েন গ্রামের মহিলারা ৷
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুলিশ শুধুমাত্র নিরীহ বাসিন্দাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে ৷ শেষ দফা ভোটের দিন শাহজাহান বাহিনীর গুন্ডারা হামলা, তাণ্ডব চালিয়েছে। অথচ তাঁদের ধরতে কোনও তৎপরতা নেই পুলিশের ৷ এদিনও সাধন রঞ্জিত নামে এক নিরপরাধ গ্রামবাসীকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ ৷ তা আটকাতে পুলিশ ও র্যাফ-কে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা ৷ অন্যদিকে, পুলিশের অতি সক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র। পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি ৷
এদিকে পুলিশের দাবি, ভোটের দিন অশান্তি এবং কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের উপর হামলা চালানোর ঘটনায় জড়িত সাধন নামে ওই ব্যক্তি ৷ তাই অভিযুক্তের খোঁজে গ্রামে অভিযান চালানো হয়েছে ৷ ওই ঘটনায় সাধন ছাড়া আরও কয়েকজন যুক্ত বলে পুলিশ সূত্রের খবর ৷ ঘটনায় ইতিমধ্যে পাঁচ গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয়েছে ৷ বাকিদেরও গ্রেফতার করা হবে বলে সাফ জানিয়েছে পুলিশ ৷
কেন পুলিশ গ্রামে ঢুকে নিরপরাধ বাসিন্দাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলে রীতিমতো বচসা শুরু করে দেন তাঁরা ৷ চলে ধস্তাধস্তিও ৷ পরিস্থিতি ক্রমে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শেষমেশ লাঠি উঁচিয়ে, মহিলাদের সরিয়ে পুলিশ গ্রামের ভিতরে ঢুকতে পারলেও প্রতি পদে পদে তাদের বাধা পেতে হয়েছে ৷ গোটা গ্রামে পুলিশে ছয়লাপ ৷ পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির মধ্যেই আটক সাধন রঞ্জিত-কে ছিনিয়ে গ্রামের ভিতরে নিয়ে চলে যান মহিলারা। তারপর থেকে পুলিশ আর কোনও খোঁজ পাচ্ছে না সাধনের। গ্রামের মহিলাদের সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিরোধের জেরে একসময় পিছু হটতে হয় পুলিশ বাহিনীকে। পরে অবশ্য অতিরিক্ত বাহিনী নিয়ে এসে গ্রামে ঢোকেন বসিরহাট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায়।