পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ট্রে থেকে ব্যাগ, কচুরিপানার জিনিসের কদর বাড়ছে বঙ্গের বাইরেও - Water Hyacinth

Water Hyacinth Handicraft Products: শাড়ির পর এবার ট্রে থেকে ব্যাগ ৷ কচুরিপানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানান রকমারি ঘর সাজানো ও নিত্যদিনে ব্যবহারের জিনিস ৷ রাজ্যে শুধু নয়, কচুরিপানা থেকে তৈরি জিনিসের চাহিদা বাড়ছে বঙ্গের বাইরেও ৷ বিদেশে রফতানি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ৷

Water Hyacinth
মেলায় বিকচ্ছে কচুরিপানার জিনিস (নিজস্ব ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jun 25, 2024, 7:52 PM IST

ব্যান্ডেল, 25 জুন: আর ফেলনা নয়, এদিক ওদিক জলাশয়ে গজিয়ে ওঠা কচুরিপানা ৷ এই কচুরিপানা থেকেই এবার তৈরি হচ্ছে নানান তাক লাগানো ঘর সাজানোর সৌখিন জিনিসপত্র থেকে ব্যাগ, ফাইল আরও কত কী ৷ নাবার্ডের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে এগুলি বানাচ্ছেন মহিলারাই ৷ সরকারের তরফে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছেন ওইসব শিল্পীরা । এরপরেই তাঁরা কচুরিপানা দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করছেন ৷ বর্তমানে 60 জন মহিলা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ৷

জমা বদ্ধ জলে গজিয়ে ওঠা কচুরিপানা দিয়ে তৈরি হরেকরকম শিল্পকর্ম (ইটিভি ভারত)

শিল্পী কল্পনা দেবনাথের কথায়, "জলাশয় থেকে প্রথমে কচুরিপানাগুলি সংগ্রহ করা হয় ৷ এরপর সেগুলি বাড়ির ছাদে বা উঠোনে শুকিয়ে নেওয়া হয় । পরে শুকনো কচুরিপানাগুলি থেকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে রকমারি জিনিস তৈরি করা হচ্ছে ৷" তিনি বলেন, "প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলারাই কচুরিপানা থেকে বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি করে থাকেন । যার মধ্যে রয়েছে গোল এবং ওভাল ট্রে, কোস্টার, যোগাম্যাট, বিভিন্ন রকমের ব্যাগ ও মানিব্যাগ । এই সব জিনিস তৈরি করতে এক থেকে তিন দিন সময় লাগে একজন শিল্পীর । আমাদের মহিলা শিল্পীরা এই কাজ করে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করেন । অভিজ্ঞতা বাড়লে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসে রোজগার করা সম্ভব এখান থেকে ।"

কচুরিপানা দিয়ে তৈরি সাজের জিনিস রাখার বাক্স (নিজস্ব ছবি)

কচুরিপানা বঙ্গের মানুষের কাছে যেন আতঙ্ক ৷ কারণ বাংলার আনাচে কানাচে যেখানেই জলাশয় পায় দখল করে বসে থাকে এই বহু বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ ৷ সেগুলিকে জল থেকে পরিষ্কার করা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ৷ খরচও হয় অনেক টাকা ৷ সেই কচুরিপানাকেই এবার কাজে লাগাচ্ছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ৷

কচুরিপানা দিয়ে তৈরি হরেকরকম হস্তশিল্প (নিজস্ব ছবি)

ইতিমধ্যে বিভিন্ন কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকারি মেলাগুলিতে অংশগ্রহণ করে কচুরিপানার জিনিস তুলে ধরছেন শিল্পীরা । এছাড়াও বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে সৌখিন জিনিসপত্রের স্টল তৈরি করা হয়েছে । সেখানেও যথেষ্ট চাহিদা বাড়ছে এই কচুরিপানা দিয়ে তৈরি জিনিসের । দুর্গাপুজো ও শীতকালীন মেলায়ও এই সব কচুরিপানা থেকে তৈরি জিনিসের চাহিদা থাকে । সেই কথা মাথায় রেখে এখন থেকে জোরকদমে কাজ চলছে ।

মহিলারা তৈরি করছেন কচুরিপানার জিনিস (নিজস্ব ছবি)

বিদেশে বায়ো-ডিগ্রেডেবল (দ্রুত পচনশীল) জিনিসের চাহিদা বেশি । তাই বিদেশেও কচুরিপানার জিনিস রফতানি করতে চায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি ৷ ইতিমধ্যে আমেরিকায় নমুনা পাঠানো হয়েছে । এছাড়াও জাপান ও ইন্দোনেশিয়ার বেশ কিছু সংস্থার সঙ্গে কথা চলছে বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার তাপসকুমার বৈদ্য ।

কচুরিপানা দিয়ে তৈরি ব্যাগ (নিজস্ব ছবি)

তিনি বলেন, "আমাদের এখানে সরস্বতী নদী আছে । সেই নদী থেকেই আমরা সংগ্রহ করি কচুরিপানা । সেগুলি শুকিয়ে সেখান থেকে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে আর্দ্রতা মুক্ত জিনিস তৈরি করতে পারি । কচুরিপানা দিয়ে পরিবেশবান্ধব ব্যবহারযোগ্য জিনিস তৈরি হয় । নাবার্ডের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষকর্মী তৈরি করেছি আমরা ৷ তাঁরাই এই কাজ করেন ৷"

কচুরিপানা দিয়ে তৈরি ব্যাগ (নিজস্ব ছবি)

তাঁর বক্তব্য, "আগামি দিনে আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে এই পরিবেশবান্ধব জিনিসপত্রগুলিকে রফতানি করার । এটা শুধু ভারত নয়, বিদেশেও এই জিনিসগুলিকে পাঠানো যায় সেই চিন্তাভাবনা করছি । জাপান ও ইন্দোনেশিয়ায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি । বছরে পনেরো থেকে কুড়ি লক্ষ টাকার লেনদেন হচ্ছে এই হস্তশিল্পের । আগামিদিনে সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য পেলে বেশি পরিমাণে কচুরিপানার জিনিস রফতানি করার ব্যবস্থা করা যায় । তাতে মহিলাদের আরও বেশি করে কর্মসংস্থান করা সম্ভব ।"

কচুরিপানা দিয়ে তৈরি সাজের জিনিস রাখার বাক্স (নিজস্ব ছবি)

ABOUT THE AUTHOR

...view details