পূর্ব বর্ধমান, 6 ফেব্রুয়ারি:গত ডিসেম্বর মাস থেকে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে শুরু হয়েছে টানা বৃষ্টি। অসময়ের বৃষ্টির কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ধান চাষিদের সঙ্গে আলু চাষিরাও । এই বছর দু’বার করে আলু চাষ করেছেন । ফলে চাষের খরচ যে বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷
চলতি মরশুমে পূর্ব বর্ধমানের আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে 68 হাজার হেক্টর। এর মধ্যে 9 হাজার 400 হেক্টর জমিতে পোখরাজ, এস-1 আলুর চাষ করা হচ্ছে। জ্যোতি আলু চাষ করা হচ্ছে 37 হাজার হেক্টর জমিতে। অন্যদিকে চন্দ্রমুখী কিংবা হিমালিনি জাতীয় আলুও চাষ করার জন্য আলু বীজ বসানো হয়েছে । জেলার মধ্যে জামালপুর, মেমারি, শক্তিগড়, গলসি, পূর্বস্থলী, কালনা এলাকায় ব্যাপকভাবে আলুর চাষ করা হয়।
ডিসেম্বর মাসের পর ফের জানুয়ারি মাসে পরপর তিনবার বৃষ্টি হয়েছে ৷ ফলে আলু জমিতে জল জমে গিয়েছে । এরপর আবার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া ও কুয়াশার কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আলু গাছ। যদিও কৃষি বিশেষজ্ঞরা চাষিদের পরামর্শ দিয়ে বলছেন, নাবি ধসার পাশাপাশি মাটি থেকেও আলু গাছে রোগ ছড়ায় ৷ ফলে ফিনামিডন, ম্যাঙ্কজেবের মিশ্রণ কিংবা মেটালক্সিল, ম্যাঙ্কজেবের মিশ্রণ স্প্রে করা যেতে পারে।
এই প্রসঙ্গেই আলু চাষি গৌরাঙ্গ মণ্ডল বলেন, "আমার নিজের জমি নেই। অন্যের জমিতে সামান্য চাষ করে সংসার চলে। আলুর অবস্থা খুব খারাপ। আবহাওয়ার যা অবস্থা আলুতে ধসা রোগের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এমনিতেই চলতি মরশুমে বৃষ্টির জন্য দুবার করে আলু চাষ করতে হয়েছে। তার ফলে চাষের খরচ এমনিতেই দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আবহাওয়ার কারণে রোগ পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কীটনাশকের দাম অনেক গুন বেড়ে গেছে। ফলে ছোট চাষীদের ক্ষেত্রে চাষ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।তারা ক্ষতির মুখে পড়ছে। কিন্তু সরকারের সেদিকে কোন নজর নেই। এই কারণেই চাষিরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে।"
বর্ধমানে আলু চাষের এই পরিস্থিতির কথা মেনে নিয়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কৃষি সেচ ও সমবায় কর্মাধ্যক্ষ মেহবুব মণ্ডল ৷ এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, "বৃষ্টি বেশি পরিমাণে হয়েছিল জামালপুরের দিকে। ফলে ওই এলাকার চাষিদের আলু চাষে ক্ষতি হতে পারে । জেলার অন্যান্য ব্লকে সেভাবে আলু চাষে ক্ষতি হবে না । তবে চাষিদের দু’বার করে আলু বীজ বপন করার কারণে খরচ বেড়ে গিয়েছে । এদিকে প্রকৃতির কারণে ঠান্ডা যদি চলে যায় সেক্ষেত্রে আলু চাষে ক্ষতি হতে পারে। কোথাও কোথাও ধসা রোগ দেখা দিচ্ছে। তাই আবার যদি রোদ ঝলমলে আবহাওয়া হয় ঠান্ডা যদি আবার পড়ে তাহলে আলু ফলন ভালো হবে। অন্যান্য জেলায় আলু চাষে সেভাবে ক্ষতি হয়েছে বলে জানা নেই। ফলে দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আলুর দাম ঠিক থাকলে চাষিদের হয়তো পুষিয়ে যাবে ৷"
আরও পড়ুন:
- হিমঘর কর্তৃপক্ষকে 20 জন করে সিকিউরিটি গার্ড বহালের নির্দেশ জেলা প্রশাসনের
- ওজন এক কিলোরও বেশি, কিন্তু বাজারে দাম না পেয়ে হতাশ পালিয়া প্রজাতির বেগুনের চাষিরা
- চাহিদা মেটাতে খরিফ মরশুমে একাধিক জেলায় পেঁয়াজ চাষ করবে হর্টিকালচার দফতর, জানালেন মন্ত্রী