হাড়োয়া, 8 নভেম্বর:'যে যত বেশি ভোটে লিড দেবে, সেখানে তত বেশি উন্নয়ন হবে'। উন্নয়নের বরাদ্দের টাকাও মিলবে সব থেকে বেশি। নির্বাচনী সভা থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে এমনই মন্তব্য করলেন উত্তর 24 পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী।তাঁর এই মন্তব্যের জেরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে রাজনীতির অন্দরে ৷ একে নির্বাচনী 'টোপ' হিসেবে দেখছে বিরোধী শিবির ৷
হাড়োয়া-সহ রাজ্যের বাকি পাঁচ বিধানসভার উপনির্বাচনে ইতিমধ্যে কমিশনের বিধি বলবৎ হয়ে গিয়েছে ৷ তারপরও কীভাবে শাসক শিবিরের একজন দায়িত্বশীল পদাধিকারী এমন মন্তব্য করেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী শিবির ৷ জেলা পরিষদের সভাধিপতির এই বিতর্কিত মন্তব্যে নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হয়েছে বলে মনে করছেন বিরোধীরা । যদিও দলীয় নেতা-কর্মীদের উৎসাহিত করতেই তিনি এই ধরনের মন্তব্য করেছেন বলে দাবি অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীর ৷ এর মধ্যে বিতর্কেরও কিছু দেখছেন না তিনি ৷ বরং, রাজনীতিতে সবসময় সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকা উচিত বলেই মনে করেন তিনি।
বিতর্কিত মন্তব্য তৃণমূল বিধায়কের (ইটিভি ভারত) হাড়োয়া বিধানসভার উপনির্বাচনে এবার তৃণমূলের প্রার্থী প্রয়াত সাংসদ হাজি নুরুল ইসলামের মেজো ছেলে শেখ রবিউল ইসলাম ৷ তাঁর জয় নিশ্চিত করতে প্রায় প্রতিদিনই হাড়োয়া বিধানসভা এলাকায় নির্বাচনী প্রচার সারছেন তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা থেকে মন্ত্রীরা ৷ দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে বৃহস্পতিবার বিকেলে সেরকমই একটি নির্বাচনী সভাতে হাজির ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী। হাড়োয়া বিধানসভার অন্তর্গত ফলতি-বেলিয়াঘাটা অঞ্চলের ওই সভাতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, টলিউড অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। সভামঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এদিন মন্ত্রী রথীন ঘোষ এবং দলীয় নেতৃত্বের সামনেই নারায়ণ গোস্বামী বলেন, "আগামী 13 নভেম্বর ভোটের দিন সকলেই সকাল সকাল ভোট দিন। সেই সঙ্গে ভোট দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোনীত প্রার্থী শেখ রবিউল ইসলামের জয় সুনিশ্চিত করুন।"
এর পরেই মঞ্চে উপস্থিত অঞ্চল নেতাদের নাম ধরে নারায়ণ বলেন, "এখানে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সকলের সঙ্গেই আমার সম্পর্ক রয়েছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি হিসেবে আমি বলতে চাই, যে এলাকা থেকে তৃণমূল প্রার্থী বেশি ভোট পাবে। সেখানে উন্নয়ন বেশি হবে জেলা পরিষদের টাকায়।যে যত বেশি লিড দেবে, সেখানে উন্নয়নের টাকাও বরাদ্দ হবে বেশি। বছরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা পরিষদ-কে 700 কোটি পাঠায় জেলার উন্নয়নের জন্য ৷ পাশের ত্রিপুরা রাজ্যের মোট বাজেটের থেকেও উত্তর 24 পরগনা জেলা পরিষদের বাজেট বেশি ৷ তাই, আপনারা তৃণমূল প্রার্থীকে বেশি করে ভোট দিন ৷ যাতে তাঁর জয় সুনিশ্চিত করা যায়।"
এদিকে, জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামীর এই মন্তব্যের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে ৷ এ নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্নও তুলতে শুরু করেছে ৷ এভাবে কী তিনি উন্নয়নের মাপকাঠি ঠিক করে দিতে পারেন ? নির্বাচনে যেখানে ভোট কম পাবে তৃণমূল, সেখানে কী তাহলে থমকে থাকবে উন্নয়ন ? সেক্ষেত্রে তো বঞ্চিত হবেন সাধারণ মানুষই ? এ নিয়ে যখন জোরচর্চা শুরু হয়েছে রাজনীতির অন্দরে ৷ তখন কিন্তু ভোটের হার কম হলে কী হবে ? সে নিয়ে অবশ্য রহস্য জিইয়ে রাখলেন খোদ জেলা পরিষদের সভাধিপতিই।