কলকাতা, 3 মার্চ: বিচারব্যবস্থা ধারক বাহকের আসনে বসে বিচার ব্যবস্থাকে রাজনীতিকরণ করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এটা ক্ষমাহীন অপরাধ। রবিবার হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজনীতিতে যোগদানের ইঙ্গিত সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে এভাবেই তাঁকে সমালোচনা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র শান্তনু সেন। প্রসঙ্গত এদিনই বিচারপতির পদে ইস্তফা দিয়ে বৃহত্তর স্বার্থে নতুন ইনিংস শুরু করার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিচারপতি। এক্ষেত্রে শাসকদলের পরামর্শ মেনে তিনি যে রাজনীতিতেই আসতে চলেছেন এমন ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। বিচারপতির রাজনীতিতে যোগদান সম্পর্কে বিশেষ কোনো উৎসাহ না দেখালেও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে যে বিচার ব্যবস্থায় রাজনীতিকরণ হয়েছে সে কথা সোজাভাবেই বললেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র শান্তনু সেন।
এদিন ইটিভি ভারতকে শান্তনু সেন জানিয়েছেন, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে যোগদানে বিশেষ ভাবিত নন তিনি। তিনি বলেন, "অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজনীতিতে যোগদান নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন তিনি রাজনৈতিক নেতাদের মতো আচরণ করছিলেন। তাঁর এই কাজটা দু-তিনদিন পরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজকে জানানোর পেছনেও একটা নির্দিষ্ট কারণ আছে। কারণ বিজেপি আসানসোলের প্রার্থী পবন সিংকে নিয়ে যে বড় ধাক্কা খেয়েছে সেটা কাটানোর জন্যই এই ইস্যুটাকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজনীতিতে আসার খবর সামনে এনে আসলে এই ইস্যুটিকে ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।" তিনি আরও বলেন, "অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিচার ব্যবস্থার ধারক ও বাহক হয়েও বহুদিন ধরেই প্রকাশ্যে রাজনীতিবিদদের মত আচরণ করছিলেন। রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা রাজ্যের শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা, মুখপাত্রদের আক্রমণ করা ঢাকি-সহ বিসর্জনের কথা তিনি বহুবার বলেছেন। তিনি রাজনৈতিক জীবনে আসুন তাতে কোনও আপত্তি নেই। বিগত দুবছর তিনি বিচার ব্যবস্থার ভারত বাহকের আসনে বসে সেখানে রাজনীতিকরণ করে বিচারব্যবস্থাকে কলুষিত করেছেন এটা অত্যন্ত লজ্জার এবং এটা ক্ষমাহীন অপরাধ।"
প্রসঙ্গত, এর আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় টুইট করে বিচারপতিকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। একই সঙ্গে তুলেছেন প্রশ্নও। এদিন এক্স হ্যান্ডেলে কুণাল ঘোষ লিখেছেন, "বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, নতুন ইনিংসের শুভেচ্ছা। এধরণের মানুষ রাজনীতিতে এলে ভালো।" এর সঙ্গেই দুটি প্রশ্নও তুলে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা। এদিন তিনি প্রশ্ন করেছেন, "যে দলেই যান, তাতে আপনার আগের রায়, সংলাপের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে। আপনি তৃণমূল বিরোধী হিসেবেই ওসব বলেছেন, প্রমাণ হবে।" দ্বিতীয় প্রশ্ন আরও সরাসরি। বিচারপতির উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, "যে দলেই যান, সেখানে দুর্নীতি বা অন্য কোনও অভিযোগ থাকবেই। সেগুলো তখন মেনে নিতে পারবেন তো ?"
এদিন বীরভূমের পাঁড়ুইয়ে 'জনগর্জন' সভা করেন রাজ্যের পৌর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বিজেপির অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গড় তমলুক লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি টিকিটে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ৷ সেই প্রসঙ্গে ফিরহাদ হাকিম বলেন, "আমরা বার বার বলতাম ওই চেয়ারে বসে উনি যে মন্তব্যগুলো করতেন তা করা যায় না। এবার যদি উনি কোনও রাজনৈতিক দলে যান তাহলে রাজনৈতিক লড়াই হবে ৷ আমি জানি না শুভেন্দু কতটা পারবে ৷ কিন্তু, তমলুকে তৃণমূল-কংগ্রেসই জিতবে ৷ তাই উনি জাস্টিসের সিট ছেড়ে দিয়ে হারবেন এটাতে আমাদেরও খুব খারাপ লাগবে।"