মালদা, 30 অগস্ট: হবিবপুরে আদিবাসী নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় এবার রাজনৈতিক রং ! আজ ওই আদিবাসী পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে কলকাতা থেকে পৌঁছে গেলেন রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত বন প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা ৷ নির্যাতিতার বাড়ি গিয়েছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মালতিপুরের বিধায়ক আবদুর রহিম বকসিও ৷ এদিন সেখানে পৌঁছে যান, এলাকার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ৷
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল বলছে, আরজি কর ইস্যুতে এই মুহূর্তে ব্যাকফুটে রাজ্যের শাসকদল ৷ চিকিৎসক পড়ুয়ার মর্মান্তিক পরিণতিতে বেনজিরভাবে সংবাদমাধ্যমে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ৷ বুধবারই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরজি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদের ঝড়ের পিছনে বিজেপির হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ৷
ঠিক সেদিনই মালদা ও দক্ষিণ দিনাজপুরে দুই আদিবাসী নাবালিকার যৌন নির্যাতনের ঘটনা সামনে এসেছে ৷ এই ঘটনা যে প্রতিবাদের ভাষাকে যে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছে তৃণমূলের থিংক ট্যাংক ৷ সেই কারণেই তড়িঘড়ি হবিবপুরে নির্যাতিতার বাড়িতে খোদ বন প্রতিমন্ত্রীকে পাঠানো হয়েছে ৷ কিন্তু, তাতেও রয়েছে বিতর্ক ৷
বিজেপির সাংসদ খগেন মুর্মুর অভিযোগ, “মেয়েটির বাবা-মা’র সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলাম ৷ তার দাদা-বউদির সঙ্গে কথা হল ৷ আমরা গ্রামে আসার কিছুক্ষণ আগেই জেলা তৃণমূলের সভাপতি এবং ব্লক সভাপতি এসে মেয়েটির বাবা-মাকে তুলে নিয়ে চলে গিয়েছে ৷ অভিযুক্ত চিকিৎসক মেয়েটিকে নাকি ডাক্তারি শেখাচ্ছিলেন, সেটাই শুনলাম ৷ মেয়েটির বাবা এখনও ঘটনার আকস্মিকতা থেকে বেরতে পারেননি ৷ আজ সকালেও মেয়েটির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে ৷ তাঁরা বিচার চাইছেন ৷ আর তাঁদের তুলে নিয়ে চলে গেল ? তৃণমূল টাকা দিয়ে এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে ৷"
খগেনের হুঁশিয়ারি, "কিন্তু এই ঘটনা কখনও ধামাচাপা দেওয়া যাবে না ৷ গ্রামের মানুষজন থানা ঘেরাও করতে চাইছেন ৷ প্রয়োজনে আমি তাঁদের সঙ্গে থাকব ৷ সারা রাজ্যেই এখন মহিলাদের সঙ্গে যৌন নির্যাতন চলছে ৷ নির্যাতিতারা বিচার পাচ্ছেন না ৷ আমরা চাই, অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি হোক ৷ আর তৃণমূল টাকা দিয়ে সবাইকে কিনতে চায় ৷ কিন্তু, টাকা দিয়ে কি একজন নির্যাতিতকে কেনা যায় !”
শুক্রবার সকালে নির্যাতিতার বাড়ি যান আবদুর রহিম বকসিও ৷ তিনি বলেন, “অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা ৷ 53 বছরের এক ব্যক্তি এই নাবালিকাকে নিজের বাড়িতে ডেকে নির্যাতন করে ৷ ইতিমধ্যে, তৎপরতার সঙ্গে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করেছে ৷ বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আজই মেয়েটিকে মালদা জেলা আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ৷ বাবা-মা তাঁর সঙ্গেই রয়েছেন ৷ আমরা নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়েছিলাম ৷ এই ঘটনা নিয়ে আমরা কোনও রাজনীতি করতে চাই না ৷ এই ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ ৷ এলাকায় উত্তেজনাও রয়েছে ৷ দোষীর যাতে ফাঁসি হয়, সেই দাবি আমরাও রাখছি ৷"
তিনি বলেন, "ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন ৷ সেই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা ৷ তাঁরাও নির্যাতিতার বাড়ি যাবেন ৷ নাবালিকার সঙ্গে যে ব্যক্তি নির্যাতন করেছেন, তিনি আগে সিপিআইএম করতেন ৷ এখন বিজেপি করেন ৷ সেখানকার সাংসদ বলছেন, আমরা নাকি মেয়েটির বাবা-মাকে কোথাও লুকিয়ে রেখেছি ৷ সাংসদ একজন মূর্খ ৷ ওই মূর্খের জানা উচিত, আদালতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশ মেয়েটিকে বাড়ি থেকে তুলে এনে একটি হোমে রেখেছে ৷ বাবা-মা তার সঙ্গেই রয়েছেন ৷ এসব বিজেপির সস্তার রাজনীতি ৷ পুলিশ গোটা বিষয়টি দেখছে ৷”
এনিয়ে বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা জানাচ্ছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই আজ আমরা এখানে এসেছি ৷ আমি নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে চাই ৷ তাঁদের সঙ্গে কথাও বলব ৷ আমি শুনেছি, যে এই ঘটনাটা ঘটিয়েছে, সে বিজেপি করে ৷ আমি এই ঘটনায় কোনও রাজনীতির রং লাগাতে চাইছি না ৷ আমি চাই, মেয়েটি যেন ভবিষ্যতে সুস্থভাবে বাঁচতে পারে এবং দোষী ব্যক্তির যেন কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হয় ৷ আগামী 2 সেপ্টেম্বর বিধানসভা বসছে ৷ সেখানে ধর্ষণ সংক্রান্ত একটি বিল আনা হচ্ছে বলে ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ আমি চাই, যারা এধরনের কাজ করবে, তাদের কঠোরতম শাস্তি হোক ৷ যে শাস্তি দেখে মানুষ যাতে এমন কাজ করতে ভয় পায় ৷ আগামীতে এমন কাজ যেন বন্ধ হয় ৷”