কলকাতা/দার্জিলিং, 15 অক্টোবর: অনশনরত আরও এক জুনিয়র ডাক্তারকে ভর্তি করাতে হল হাসপাতালে ৷ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অলোক কুমার ভার্মার পর এবার সেখানকারই শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আইসিসিইউ-তে ভর্তি করাতে হয় ৷ এদিকে, উত্তরবঙ্গে আরও একজন এবং ধর্মতলায় আরও দু'জন জুনিয়র চিকিৎসক অনশনে যোগ দেন । এদিন ধর্মতলার অনশমঞ্চে গিয়ে অনশনকারীদের সঙ্গে দেখা করেন অভিনেত্রী-পরিচালক অপর্ণা সেন ও শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার ৷ তাঁরা সরকারের কাছে মানবিক হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন ৷
এদিন দেবলীনা দত্ত ও উষসী চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে ধর্মতলার অনশনমঞ্চে যান অপর্ণা সেন ৷ তিনি অনশনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন ৷ পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, "আমি সরকারকে বারবার বলছি, আপনারা এত নির্দয় হবেন না ৷ ওরা তো নিজেদের জন্য কিছু চাইছে না ৷ ওরা চাইছে স্বাস্থ্যের পরিকাঠামোর জন্য ৷ যাতে সকলের উপকার হয় ৷ মানুষের উপকার হয় ৷ আপনারা কি শুনছেন না ? আমি নিরুপায় ও অসহায় হয়ে তাকিয়ে আছি ৷ আপনাদের কি মায়া দয়া নেই, কোনও মমতা নেই আপনাদের মধ্যে ? কোনও সত্যিকারের মমতা, মায়া দয়া, কিছু নেই ? মেইল করেছি ৷ কারও কোনও কথা কানে যাচ্ছে না ৷ তাই এসেছি, আমার প্রতিবাদ জানাতে, আমার কণ্ঠস্বর জানাতে ৷"
হাসপাতালে আরও 1, অনশনে যোগ 2 জনের; সরকারকে তোপ অপর্ণা সেন ও পবিত্র সরকারের (ইটিভি ভারত) আজ অনশনমঞ্চে যান শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারও ৷ অনশনকারীদের মনোবল দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি ৷ তিনি বলেন, "ওদের মনোবল অসম্ভব ৷ মানুষের এত মনোবল থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না ৷ আমি বিশ্বাস করি ওদের উপর অন্য একটা কিছু ভর করেছে ৷ ওদের সাহস, দুর্জয় আশা ও প্রতিবাদ যেরকম, ওদের মনোবলের কোনও তুলনা দেখতে পাচ্ছি না ৷ সরকারকে তো বুঝতে হবে যে আন্দোলনকে বাধা দেওয়া যায় না ৷ আন্দোলন যখন শান্তিপূর্ণ থাকে, তার উপর এত রকম বাধা আরোপ করা সম্ভব নয় ৷ সরকার অনর্থক সময় ব্যয় করছে ৷ সরকার কেন এত হৃদয়হীন ও অমানবিক হবে ? জনগণের নির্বাচিত সরকার বলে যদি ধরে নিই, তবে তারা কেন এত অমানবিক হবে ?"
ধর্মতলার অনশনমঞ্চে পবিত্র সরকার (নিজস্ব চিত্র) মঙ্গলবার কলকাতায় অনশনে যোগ দেন জুনিয়র চিকিৎসক রুমেলিকা কুমার ও স্পন্দন চৌধুরী ৷ তাঁরা বলেন, "আমাদের কোনও রকম ভাবে সাড়া দিচ্ছে না প্রশাসন । আমাদের সহযোদ্ধারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন । সব প্রাণের দায় আমরা রাজ্য প্রশাসনের থেকে আদায় করে নেব । হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলাম । আন্দোলনের জোর কমছে না । এক এক জন অসুস্থ হলেও আন্দোলনের রেশ আরও বাড়ছে ।"
অনশনে যোগ দিলেন আরও দুই জুনিয়র ডাক্তার (নিজস্ব চিত্র) ধর্মতলার অনশন মঞ্চে লাগানো স্ক্রিনে এদিন সুপ্রিম কোর্টের শুনানির দিকে চোখ রাখেন আন্দোলনকারীরা । আজ সনাতন দিন্দার হাতে আঁকা ছবি অনশনমঞ্চে নিয়ে আসেন চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই ছবি লাগানো হয় ধর্মতলার অনশনমঞ্চে ৷
অনশনমঞ্চে আনা হল সনাতন দিন্দার আঁকা ছবি (নিজস্ব চিত্র) আরজি কর-কাণ্ডের ন্যায়বিচার-সহ 10 দফা দাবিতে ধর্মতলার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও আমরণ অনশনে বসেছিলেন দুই জুনিয়র ডাক্তার । শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেন্টাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার অলোক কুমার ভার্মা । তিনদিন আগেই অলোক ভার্মার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে তাঁকে হাইব্রিড সিসিইউতে ভর্তি করা হয় ৷ কিন্তু অনশন চালিয়ে যান আরেক জুনিয়র ডাক্তার শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় । 200 ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অনশনের পর মঙ্গলবার বিকেলে তাঁরও শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হয় । তড়িঘড়ি চিকিৎসকরা তাঁকে হাসপাতালেরই আইসিসিইউতে ভর্তি করেন । অলোক ভার্মা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তাঁর জায়গায় অনশনে বসেন আরেক জুনিয়র ডাক্তার সন্দীপ মণ্ডল ।
হাসপাতালে আরও এক অনশনকারী (নিজস্ব চিত্র) হাসপাতালে ভর্তি করা হল সৌভিককে (নিজস্ব চিত্র) অধ্যাপক চিকিৎসক পার্থসারথি সরকার বলেন, "জানি না এভাবে আর কতদিন আর কত জুনিয়র ডাক্তারকে নিজেদের জীবন বিপদে ফেলতে হবে । আমাদের দাবি খুব স্পষ্ট । কিন্তু তাতেও সরকারের ঘুম ভাঙছে না ৷ অলোক ভার্মার পর শৌভিকের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাঁকেও আইসিসিইউতে ভর্তি করা হল ।"