কলকাতা, 15 সেপ্টেম্বর: বৃষ্টিস্নাত শহর সাক্ষী থাকল জুনিয়র ডাক্তারদের মহামিছিলের ৷ রবিবার কার্যত নাগরিক মিছিলের চেহারা নিল তাঁদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি । জনপ্লাবনে ভাসল গোটা করুণাময়ী । এদিন সেন্ট্রাল পার্কের এক প্রান্ত থেকে নার্স ও সিস্টারদের বিরাট মিছিল শুরু হয় ৷ অপর প্রান্তে যেতে সেখানেই জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে যুক্ত হয় মিছিল । 'আর্জি নয় দাবি কর', এই বার্তাকে সামনে রেখে এগিয়ে চলে মিছিল ৷ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজপথ ৷
জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিলে জনপ্লাবন (ইটিভি ভারত) বিরাট মিছিল যতই এগোতে থাকে তার আরে বহরে জনতার ঢল বাড়তে থাকে । মিছিল আর কেবল জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না ৷ এই মিছিলে সিনিয়র চিকিৎসক থেকে শুরু করে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হাঁটতে দেখা গিয়েছে ৷ প্রায় প্রতিটা মোড়ে মোড়ে 200 থেকে 300 করে লোক স্লোগান মুখর হয়ে মিছিলে পা মিলিয়েছেন । মিছিলের আগে যেন আরও একটা মিছিলের জন্ম দিয়েছে এ দিন করুণাময়ীর পথ । কার্যত হাজার খানেক মানুষের মিছিল বাড়তে বাড়তে প্রায় কয়েক হাজারে পরিণত হয়েছে ।
জুনিয়র ডাক্তারদের স্বাস্থ্যভবন অভিযান (নিজস্ব ছবি) মিছিল চলাকালীন কোনও মোড়ে দেখা গিয়েছে শঙ্খ বাজিয়ে আরজি করের বিচারের দাবিতে স্লোগান তুলে প্রতিবাদকে স্বাগত জানিয়েছেন মানুষজন ৷ আবার কোনও মোড়ে স্লোগান দিতে দিতে মিছিলে ঢুকতে দেখা গিয়েছে আপামোর জনগণকে । 9 থেকে 90 বৃষ্টি মাথায় নিয়েই জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকে এই স্বাস্থ্যভবন অভিযান সফল করতে পা মিলিয়েছেন তাঁদের মিছিলে ।
নানা স্লোগানে মুখরিত হল এ দিনের মিছিল । জুনিয়র ডাক্তারদের মূল মিছিল যখন স্বাস্থ্যভবনের কাছাকাছি, আগেই কয়েক হাজার মানুষের জমায়েত স্বাস্থ্যভবনের সামনে বড় কালো পিচ রাস্তার দখল নিয়েছে । মিছিল ঢুকতেই স্লোগানে স্লোগানে আলাদা পরিবেশ তৈরি হয়েছে স্বাস্থ্যভবনের সামনে গোটা চত্বরে । সেখানেই শেষ হল মিছিল ৷
স্লোগানে মুখরিত হল মিছিল (নিজস্ব ছবি) জুনিয়র ডাক্তার অনুষ্ঠিত মুখোপাধ্যায় বলেন, "আজ থেকে ঠিক এক মাস আগে 14 অগস্ট রাতে আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল ৷ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল আমাদের আন্দোলন মঞ্চ ৷ তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্য যেখানে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছিল সেই জায়গাকে ভাঙচুর করার চেষ্টা করা হয় ৷ সেই ঘটনার একমাস পূরণে আমরা তার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছি ৷ গতকাল টালা থানার ওসি গ্রেফতার হয়েছেন ৷ এর থেকে আরও একবার মান্যতা পেল যে পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের আমাদের দাবি যথার্থ ৷ আমাদের পাঁচ দফা দাবি লোকজনকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই আজকের এই মিছিল ৷"
সিনিয়র চিকিৎসক মানস গুমটার কথায়,"35 দিন ঝড় জলের মধ্যে জুনিয়র ডাক্তাররা ধরনায় বসে আছেন ৷ আমাদের অনেক আশা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কোনও সুরাহা হবে ৷ কিন্তু কিছুই হয়নি ৷ তাতে আমরা হতাশ ৷ জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিগুলি নিয়ে যদি সরকার আলোচনার প্রতিশ্রুতি না দেয়, তবে রাজ্যে অচলাবস্থা কাটবে না ৷"
আরজি কর-কাণ্ডের বিচার চেয়ে পাঁচ দফা দাবি সামনে রেখে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোটনা করতে কালীঘাটে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা ৷ তবে শনিবার আলোচনা ভেস্তে গিয়েছে আলোচনা। চোখে জল নিয়ে ফিরেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দল । আর তারপরেই আজ ফের স্বাস্থ্যভবন অভিযানে সামিল হলেন তাঁরা ।