কলকাতা, 6 ফেব্রুয়ারি:পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার মূলত দেয় পরিকাঠামো খাতে খরচের জন্য । সেই টাকা বেআইনিভাবে অন্য খাতে খরচ করছে রাজ্য সরকার । মঙ্গলবার এমনই গুরুতর অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি ৷
মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি বলেন, "গতকাল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের দেওয়া টাকা অপব্যবহারের অভিযোগ জানিয়েছিলাম । তিনি লিখিত অভিযোগ চেয়েছিলেন । আজ মেল করে লিখিত অভিযোগ করেছি ।"
শুভেন্দুর অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা থেকে 330.36 কোটি টাকা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিল দিতে খরচ করেছে । তিনি যে তথ্য দিয়েছেন তাতে তাঁর অভিযোগ, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা থেকে মোট 21টি ক্ষেত্রের বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হয়েছে । বিরোধী দলনেতার দেওয়া তথ্য অনুসারে বাঁকুড়ার জন্য খরচ করেছে 48 কোটি টাকা, বীরভূমের জন্য 38 কোটি টাকা, বর্ধমানের জন্য 60 কোটি টাকা, হুগলির জন্য 20 কোটি টাকা ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জন্য 56 কোটি টাকা খরচ হয়েছে ।
একইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন, একাধিক পৌরসভায় কর্মীদের বোনাস দিতে মৌখিক আদেশের ভিত্তিতে ফিন্যান্স কমিশনের টাকা নিয়ে খরচ করা হয়েছে । বিরোধী দলনেতার মতে, গোটা বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে বেআইনি । শুভেন্দু বলেন, "কত বড় প্রতারণা, গ্রামের উন্নয়নের রাস্তাঘাট, শৌচাগার, নিকাশি ব্যবস্থার জন্য ভারত সরকারের দেওয়া টাকা দিয়ে রাজ্য সরকার ইলেকট্রিক বিল পেমেন্ট করে দিয়েছে । এই অর্থ পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নিজস্ব ফান্ড বা রাজস্ব থেকেই খরচ করতে হয় । পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা থেকে প্রায় 400 কোটি টাকা দিয়ে ইলেকট্রিকের বিল মেটানো হয়েছে ৷ এটা তাঁরা করতে পারেন না ।"
এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, "গত উৎসবের মরশুমে অর্থাৎ পুজোর সময় রাজ্য সরকার ক্যাজুয়াল কর্মীদের বেতন এবং বোনাস দিতে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচ করেছে । এক্ষেত্রে তারা এই অর্থ খরচ করতেই পারেন, কিন্তু নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ এক মাসের মধ্যে তা আবার ফিরিয়ে দিতে হয় । এখনও পর্যন্ত সেই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি ৷"
বিরোধী দলনেতার এই অভিযোগের পরে এই নিয়ে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে সাংবাদিকদের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয় । তিনি এই নিয়ে কোনও জবাব দেননি তিনি । বরং এটা অর্থ দফতরের বিষয় বলে তিনি গোটা বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন । এই নিয়ে অর্থ দফতরেরও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি । ফলে এই অভিযোগ নিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কী বলা হয় সেটাই দেখার । শুভেন্দু অধিকারী এই নিয়ে শুধু অভিযোগই করেননি, তিনি দাবি করেছেন রাজ্যের এই পদক্ষেপের জন্য আগামী দিনে অর্থ কমিশনের থেকে রাজ্যের প্রাপ্তিও প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে । এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, তার উত্তর দেবে সময় ৷
আরও পড়ুন:
- মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর-এর দাবি নিয়ে 9 ফেব্রুয়ারি রাজ্যপালের দ্বারস্থ হবে বিজেপি
- শুভেন্দুর ইন্ধনেই বাংলাজুড়ে ইডির হানা, অভিযোগ শশী পাঁজার
- রাহুল গান্ধিকে 'অশ্লীল' ভাষায় আক্রমণের অভিযোগ, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে একাধিক এফআইআর