বারাসত, 19 জুলাই: দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ছেলের অথচ বাবা-মাকে না জানিয়েই তাঁর দেহ মর্গে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে এসে ছেলের মৃত্যুর কারণ জানতে গিয়ে জুটল পুলিশের হেনস্থা এবং মারধরও। অমানবিক ঘটনার সাক্ষী বারাসত মেডিক্যাল কলেজে। শুধু তাই নয়, দুর্ঘটনার পর গুরুতর জখম ছাত্রকে নিকটবর্তী হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে দূরের বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। পুলিশের এই অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন নিহত ছাত্রের পরিবারের সদস্যরা। যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ উভয়ই ৷ ময়নাতদন্তের পর শুক্রবার অবশ্য নিহত ছাত্রের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনায় নিহত ওই ছাত্রের নাম অঙ্গীকার দাশগুপ্ত। সে সল্টলেকের সিএস স্কুলের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। বাড়ি তেঘরিয়া এলাকায়।প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবারও অঙ্গীকার স্কুল শেষে বাড়ি ফিরছিলেন বাসে। ভিআইপি রোডের তেঘরিয়ার কাছে চলন্ত বাস থেকে নামতে গিয়ে পা পিছলে রাস্তার পড়ে গিয়ে বাসের পিছনের চাকায় পিষ্ট হয় ওই ছাত্র। এরপর পুলিশই তাকে উদ্ধার করে বারাসত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এদিকে, ছেলে সময়মতো বাড়িতে না ফেরায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যান ছাত্রের বাবা-মা। ফোন করেও ছেলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করে উঠতে পারেননি তাঁরা। তারই মধ্যে স্থানীয় এক রিকশা চালকের কাছ থেকে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, ওই ছাত্রকে গুরুতর জখম অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বারাসত মেডিক্য়াল কলেজ হাসপাতালে। সবমলিয়ে ছাত্রের পরিবারের সদস্যদের হাসপাতালে পৌঁছাতে রাত হয়ে যায়। ততক্ষণে ছাত্রের মৃতদেহ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরিবারের অভিযোগ, জরুরি বিভাগে মৃত ছেলের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনও সহযোগিতা করেননি কর্তব্যরত চিকিৎসক ৷ উলটে তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়।
এনিয়ে দু'পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি থেকে উত্তেজনা ছড়ালে ছুটে আসেন কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা। অভিযোগ, পুলিশ এসে সন্তানহারা শোকার্ত মা-বাবাকে সহযোগিতা করার বদলে উলটে হেনস্থা করে। এমনকী, পরিবারের সদস্যদের মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। নিহত ছাত্রের বাবা অঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, "কোনও কারণ ছাড়াই পুলিশ আমার স্ত্রী, শ্বশুর এবং আমাকে মারধর করেছে। টানতে টানতে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় বারাসত থানায়। ছেলের মৃত্যুর কারণ জানতে চেয়ে কী অপরাধই করে ফেলেছি আমরা ! পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও সহযোগিতাও পাইনি ।"
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, "একাদশ শ্রেণীর ওই ছাত্রকে মৃত অবস্থাতেই হাসপতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাই, মৃতদেহ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের অনুমতি ছাড়া কাউকেই হাসপাতালের মর্গে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এক্ষেত্রেও সেটাই করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা হাসপাতালের বিষয় নয়।"