বোলপুর, 3 অগস্ট:সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ক্রেন দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছিল ভ্লাদিমির লেনিনের মূর্তি ৷ পরে প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরাতেও ক্ষমতা বদলের পর একই ছবি দেখা গিয়েছে ৷ খাস কলকাতাতেও আছে এমন নজির ৷ ভাঙা পড়েছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ৷ এবার রবীন্দ্রনাথ ! কবিগুরুর বিশ্বভারতীর 100 মিটারের মধ্যে থেকে ক্রেনে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হল কবিগুরুর মূর্তি ৷
ক্রেন দিয়ে উপড়ে ফেলা হল রবীন্দ্রমূর্তি (ইটিভি ভারত) জানা গিয়েছে, মূর্তিটি বসিয়েছিল বোলপুর পুরসভা ৷ আর সেখানেই আপত্তি তোলে বিশ্বভারতী ৷ আর বিশ্বভারতীর আপত্তির জেরে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' বাফার জোন থেকে রবীন্দ্রমূর্তি সরাল বোলপুর পুরসভা ৷ এর আগে শান্তিনিকেতনের কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটে প্রায় 15 ফুটের রবীন্দ্রমূর্তি বসিয়েছিল বোলপুর পুরসভা ৷ বিশ্বভারতীর বাফার জোনের 100 মিটারের মধ্যে কীভাবে বসল মূর্তি ? প্রশ্ন তুলেছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল ৷ এরপরেই ক্রেন এনে দীর্ঘ প্রচেষ্টায় সেই মূর্তি সরিয়ে নেওয়া হল ৷
শনিবার, 15 ফুটের সেই রবীন্দ্রমূর্তিটি সরিয়ে নেওয়া হল ৷ গ্যাস কাটার দিয়ে রড ও ঢাল কেটে ক্রেন দিয়ে সাবধানতার সঙ্গে মূর্তিটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৷ জানা গিয়েছে, বোলপুরের মুলুকে এই রবীন্দ্রমূর্তিটি প্রতিস্থাপন করা হবে ৷ যদিও, এই মর্মে বোলপুর পুরসভার তরফে আর কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি ৷ তবে, মূর্তি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বোলপুর পুরসভাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, "ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। রবীন্দ্রমূর্তি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বোলপুর পুরসভাকে ধন্যবাদ জানাই।"
2023 সালের 17 সেপ্টেম্বর ইউনেসকো গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনকে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' তকমা দিয়েছে। পরেই ইউনেসকোর প্রতিনিধিরা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে বিশ্ব ঐতিহ্যের সীমানা চিহৃিত করেন ৷ সদ্য এই হেরিটেজ তকমা ধরে রাখতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্বভারতীও। এর মধ্যেই দেখা যায় শান্তিনিকেতনের কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটে প্রায় 15 ফুটের একটি সাদা রবীন্দ্রমূর্তি বসিয়েছে বোলপুর পুরসভা ৷ যা নিয়ে আপত্তি তোলে বিশ্বভারতী। প্রশ্ন ওঠে কীভাবে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' শান্তিনিকেতনের বাফার জোনের 100 মিটারের মধ্যে মূর্তি বসানো হল ? বিশ্বভারতীর আরও প্রশ্ন, শান্তিনিকেতন ব্রহ্ম আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ৷ আর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেছেন স্বয়ং গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বিশ্বভারতীর দাবি, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও প্রকাশ্যে মহর্ষি এবং গুরুদেবের মূর্তি নেই ৷ কারণ, নিরাকার ব্রহ্ম আশ্রম শান্তিনিকেতন। তার উপর নিজের মূর্তি নিয়ে আপত্তি ছিল গুরুদেবের। এই বিতর্ক হতেই তড়িঘড়ি মূর্তির উন্মোচন অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিল বোলপুর পুরসভা ৷ 28 জুলাই রাজ্যের ক্ষুদ্র-মাঝারি ও কুটির শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার এই মূর্তি উন্মোচন করার কথা ছিল ৷ সেই মর্মে আমন্ত্রণ পত্রও ছাপানো হয়েছিল ৷ তবে সংবাদে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষর আপত্তি প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসে পৌরসভা।