কলকাতা, 24 জানুয়ারি: বিজ্ঞান আর নয় কঠিন ৷ এবার গল্পের মাধ্যমে মহাকাশ বিজ্ঞানের খুঁটিনাঁটি শিখছে পড়ুয়ারা । এর জন্য বুধবার 'স্পেস-টাকুলার সায়েন্স শো'র আয়োজন করা হয় বিড়লা শিল্প ও কারিগরি সংগ্রহশালায় (বিআইটিএম) ।
সেখানে হাতে কলমে পডু়য়ারা জানতে পারে, কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আকাশে রকেট উড়ে যায়? কেমনভাবে সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল মানুষকে রক্ষা করে? রান্নার গ্যাসের পাইপ কেন ফাটে না? শ্বাসগ্রহণের সময় আমরা কি শুধুই অক্সিজেন গ্রহণ করি? চাপ ও গতি সম্পর্ক কী?
রকেট ওড়ে কীভাবে, কেন রান্নার গ্যাসের পাইপ ফাটে না, সায়েন্স শো-তে শিখল পড়ুয়ারা (ইটিভি ভারত) 'স্পেস-টাকুলার সায়েন্স শো'-তে অংশ নিতে পেরে বেজায় খুশি পডুয়ারাও ৷ যারা বিজ্ঞানের ক্লাসে চুপ করে থাকে, তারাও আকাশে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করছে । কেউ আবার বলছে চাঁদে যেতে চাই । এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসেছিল হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের খিলা গার্লস স্কুলের দশম শ্রেণির পড়ুয়া অনুস্মিতা মণ্ডল ৷ সে বলে, "আজকে আমরা বিজ্ঞানের শো থেকে অনেক কিছু শিখেছি ৷ বেশ ভালো লাগছে জেলা থেকে কলকাতায় এসে এত কিছু শিখতে পেরে ৷ শিক্ষকেরা খুব ভালোভাবে বিষয়টি আমাদের বুঝিয়েছেন ৷ বিজ্ঞান খুব মজাদার এই শো দেখে জানতে পারলাম ৷"
গল্পের মাধ্যমে মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা (নিজস্ব ছবি) বিআইটিএমের টেকনিক্যাল অফিসার তরুণ দাস বলেন, "মজার ছলে যত সহজে বিজ্ঞান শেখানো হবে, তত আগ্রহ বাড়বে পড়ুয়াদের মধ্যে। আমি সেই চেষ্টায় করি। বই পড়ে যতটা মনে থাকবে, হাতে কলমে বিজ্ঞান শিখলে সারাজীবনে মনে থাকবে পড়ুয়াদের। কিন্তু, সেই সুযোগ প্রান্তিক স্তরে নেই।"
টেলিস্কোপে চোখ রাখছেন উৎসাহীরা (নিজস্ব ছবি) একই সুর শোনা গেল খিলা গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা নীলাঞ্জনা মুখোপাধ্যায়ের গলায় । তিনি বলেন, "সত্যিই জেলার ছেলে মেয়েরা সহজে এসব জায়গায় আসতে পারে না । সব জেলাতে এরকম হাতে কলমে বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা নেই । এরকম সুযোগ সব জায়গায় প্রয়োজন ।"
ন্যাশনাল সায়েন্স কাউন্সিলের উদ্যোগে গত 21 জানুয়ারি থেকে বালিগঞ্জের বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামে একটি প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়েছে । পাশাপাশি বিকেল 5টা বাজলেই বিআইটিএমের ছাদে শক্তিশালী টেলিস্কোপে চোখ রাখছেন উৎসাহীরা । তবে মেঘ থাকলে সেই দৃশ্য আর দেখা যাচ্ছে না । খানিক হতাশই হচ্ছেন মহাকাশপ্রেমীরা ।
'স্পেস-টাকুলার সায়েন্স শো'তে অংশ নিল পড়ুয়ারা (নিজস্ব ছবি) বিআইটিএম কর্তারা জানান, 'প্ল্যানেটারি প্যারেড' নামঙ্কিত অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার বক্তব্য রাখেন ইন্ডিয়ান অ্যাসোশিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্সের অধ্যাপক ড. পার্থসারথী মজুমদার । তিনি ব্ল্যাক হোল বা অন্ধকূপের বিচিত্র কাহিনি নিয়ে বক্তব্য রাখেন । বুধবার ছিল সায়েন্স শো । আর বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে আকাশ দেখানো হয় ।
স্পেস-টাকুলার সায়েন্স শো (নিজস্ব ছবি) এখন কী কী দেখা যাচ্ছে আকাশে?
বিআইটিএমের বিজ্ঞানের শিক্ষকরা জানান, গত 21 তারিখ থেকে প্রদক্ষিণ করতে করতে প্রায় একই সরলরেখায় চলে এসেছে মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, নেপচুন ও ইউরেনাস । বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামী 25 তারিখ পর্যন্ত এই ছয় গ্রহের অবস্থান প্রায় একই সরলরেখায় থাকবে । এর মধ্যে নেপচুন ও ইউরেনাস ছাড়া বাকি গ্রহগুলি খালি চোখেই দেখা যায় । নেপচুন ও ইউরেনাস দেখতে গেলে শক্তিশালী টেলিস্কোপ ও বাইনকুলারের প্রয়োজন । লালচে মঙ্গল পূর্ব দিগন্তে রয়েছে । আর বৃহস্পতি তার একটু উপরে । হলদেটে শনি ও শুক্র গ্রহ খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে । কিন্তু আকাশ মেঘলা থাকলেই সমস্যা ।
হাতেনাতে মহাকাশ বিজ্ঞানের খুঁটিনাঁটি শিখছে পড়ুয়ারা (নিজস্ব ছবি) বিআইটিএমের ডিরেক্টর অর্ণব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমরা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সকলকে বিজ্ঞান মনষ্ক করার চেষ্টা করছি । সায়েন্স শো নিয়ে বাচ্চাদের মধ্যে খুবই উৎসাহ রয়েছে । প্রতিনিয়ত নতুন কিছু করার চেষ্টা করছি আমরা । জেলাতে গিয়ে হাতে কলমে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ রয়েছে । মোবাইল ভ্যানে গিয়ে আমাদের তরফে শেখানো হয় । কিন্তু, পরিকাঠামোর অভাবে স্থায়ী ব্যবস্থা বা ব্লক স্কুলে সেই ব্যবস্থা এই মুহূর্তে সম্ভব নয় ।"