কলকাতা, 9 ফেব্রুয়ারি: আরজি কর-কাণ্ডে মৃত চিকিৎসক পড়ুয়ার আজ 32তম জন্মদিন। এই দিনটাকে স্মরণে রেখে কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে আরজি কর পর্যন্ত মৌন মিছিলে পা মেলালেন চিকিৎসক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ । রবিবার কলেজ স্কোয়ারে জমায়েতের পর শুরু হয় মিছিল । বিকেল সাড়ে তিনটের পরে কলেজ স্ট্রিট থেকে সুবিশাল মৌন মিছিল আরজি কর হাসপাতালে পৌঁছয় । বিধান সরণির একটি জায়গা থেকে নির্যাতিতার বাবা-মা এই মিছিলে অংশগ্রহণ করেন । পরে শ্যামবাজার পাঁচ মাথা থেকে তাঁরা ফিরে যান ।
এদিকে মিছিল আরজি করের দিকে এগোতে থাকে । মিছিল আরজি করে পৌঁছনোর পরও হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি । পুলিশ বাধা দেয় । জুনিয়র ডাক্তার এবং অভয়া মঞ্চের তরফে পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু হয় । বেশ কিছুক্ষণ এই বচসা হওয়ার পর পুলিশ এবং আন্দোলনকারীদের সমঝোতা হয় । যদিও শেষ পর্যন্ত পুলিশের দাবি মেনে মিছিলের ডাক দেওয়া অভয়া মঞ্চের একটি প্রতিনিধি দল হাসপাতালে প্রবেশ করে। চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ এবং চিকিৎসক মনীষা আদক আরজি কর হাসপাতালে থাকা নির্যাতিতার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন ।
নির্যাতিতার 32তম জন্মদিনে বিচারের দাবিতে শহরে দীর্ঘ মৌন মিছিল (ইটিভি ভারত) চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "মাধ্যমিক পরীক্ষার কারণে মিছিলে মাইক ব্যবহার করা হয়নি। তোলা হয়নি স্লোগানও। কিন্তু যতদিন না সঠিক বিচার পাওয়া যাচ্ছে ততদিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আজকের মিছিলে যাঁরা আসতে পারলেন না, তাঁদের কাছে অনুরোধ অন্তত যে যেখানেই থাকুন, সেখান থেকে মোমবাতি জ্বালিয়ে নির্যাতিতার বিচারের জন্য প্রতিবাদের সরব হোন ।"
আরজি করের নির্যাতিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন (নিজস্ব ছবি) জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে অনিকেত মাহাতোর দাবি, "এই ঘটনায় এখনও অনেকে জড়িত রয়েছে। তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্য কেন সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিচ্ছে না সিবিআই ? ফাঁসি না কারাদণ্ড এই বাইনারিতে আমরা যেতে চাই না । যতদিন না বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে ততদিন আন্দোলন চলবে ।"
আরজি করের সামনে মিছিল আটকালো পুলিশ (নিজস্ব ছবি) অভয়া মঞ্চের তরফে সিনিয়র চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ বলেন, "মাধ্যমিক পরীক্ষার কারণে শান্তিপূর্ণভাবে মৌন মিছিল করে আমরা আরজি করে পৌঁছই । আমাদের মেয়ে, বাংলার মেয়ের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে তার বিচারের দাবি জানাতে এসেছিলাম । কিন্তু হাসপাতালের গেটের সামনে কলকাতা পুলিশের তরফে আমাদের আটকানো হয় । অনেক বলার পর আমাদের বলা হয়, 10-20 বা 30 জন করে দলে দলে ভিতরে ঢুকুন । কিন্তু যে বিক্ষোভ আন্দোলনের জন্য আমরা এসেছি, তাতে এভাবে হাসপাতালে প্রবেশ করা সম্ভব নয় । তাই অভয়া মঞ্চের তরফে আমি এবং ডঃ মনীষা আদক মাল্যদান করে অভয়ার বিচারের দাবি জানালাম ।"
ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ (নিজস্ব ছবি) তাঁর কথায়, "দলমত নির্বিশেষে যদি আমরা এক হয়ে আন্দোলন চালিয়ে না যাই, তাহলে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না। তাই রাজনৈতিক মতাদর্শ ও রাজনৈতিক দলাদলি ঊর্ধ্বে উঠে অন্তত এক্ষেত্রে সকলের দাবি এবং মতামত এক রেখে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।" আন্দোলনের পরবর্তী রূপরেখার বিষয়ে জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার বলেন, "ন্যায় বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আন্দোলনের রূপরেখা কী হবে তা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আলোচনা করে জানানো হবে ।"
অন্যদিকে নির্যাতিতার বাবা-মা বলেন, "আমাদের ডাকে এত মানুষ এই মিছিলে সামিল হয়েছেন বলে আমরা খুশি ৷ যতদিন না বিচার পাচ্ছি ততদিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব ৷ আশা করি এই বিপুল সংখ্যক মানুষ আগামিদিনেও আমাদের পাশে থাকবেন ৷"
মৌন মিছিলে পা মেলালেন চিকিৎসক থেকে সাধারণ মানুষ (নিজস্ব ছবি) উল্লেখ্য, এদিনের মিছিলে সিপিএম সিপিআই লিবারেশন-সহ একাধিক বামপন্থী গণসংগঠনের নেতৃত্বকে অংশ নিতে দেখা যায় । ছিলেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরাও। যদিও কারও সঙ্গে দলীয় পতাকা ছিল না। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আগেই জানিয়েছিলেন যে, তাঁদের তরফে আজকের সমাবেশে এবং মিছিলে সমস্ত সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন ৷