সোদপুর, 9 ফেব্রুয়ারি: আর জন্মদিনে হবে না গুড়ের পায়েস, কেক কেটে পালন ৷ ন্যায় বিচার মিললে সেটাই হবে জন্মদিনের প্রকৃত উপহার ৷ মেয়ের জন্মদিনে বললেন আরজি করের নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা । দিনভর কর্মসূচির মাঝেই নাগরিক সমাজের মিছিল হল সোদপুরে ।
আরজি করে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ছ'মাস ৷ আরজি কর-কাণ্ডে এখনও অধরা ন্যায় বিচার ৷ তারই মধ্যে স্মৃতি আগলে আজ জন্মদিন পালন আরজি করে নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার । বেঁচে থাকলে এ বছর 32 বছরে পা দিতেন নির্যাতিতা ছাত্রী । তবে জন্মদিনে আর ঘরে ফিরবেন না একমাত্র মেয়ে । তাই তাঁর স্মৃতি আঁকড়ে নিঃসঙ্গ জীবন কাটছে নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার বাবা-মার ।
মেয়ের জন্মদিনে ন্যায়বিচারের দাবি বাবা-মার (ইটিভি ভারত) শুধু এ বছর নয়, এবার থেকে প্রতিটি বছরই তাঁদের নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে হবে । কারণ, আজ থেকে ছ'মাস আগে 9 অগস্ট কর্মরত অবস্থায় রাজ্যের অন্যতম মেডিক্যাল কলেজে নারকীয় ঘটনার শিকার হতে হয়েছিল ওই চিকিৎসক পড়ুয়াকে । তাঁকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছিল । সেই নারকীয় ঘটনার ছ'টা মাস কেটে যাওয়ার পরেও ন্যায়বিচার মেলেনি ।
এরই মধ্যে গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে কত জল ! ন্যায় বিচারের দাবিতে এখনও পথে নেমে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন নির্যাতিতার পরিবার থেকে জুনিয়র চিকিৎসকেরা । মেয়ের জন্মদিনে নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা-মা'র স্মৃতিতে ভেসে আসছে একের পর এক ছবি ৷ সেসব কথা মনে পড়লে মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে তাঁদের ।
চোয়াল শক্ত রেখেই জন্মদিনে আরজি করে নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার মা বলেন, "মেয়ে নতুন গুড়ের পায়েস খেতে ভালোবাসত । তাই, প্রতিবছর জন্মদিনে মেয়ের জন্য গুড়ের পায়েস তৈরি করতাম । জন্মদিনটা ও'র কর্মস্থলে পালিত হলেও রাতে মেয়ে বাড়িতে ফিরলে কেক কেটে জন্মদিন পালন করতাম আমরা । ও'র বাবা কেক এনে রাখত । গত বছর জন্মদিনে 22 হাজার টাকা দিয়ে মেয়েকে নতুন ঘড়ি কিনে দিয়েছিলাম । সেই ঘড়ি পেয়ে মেয়ে খুব খুশি হয়েছিল । মাত্র দু'দিন ঘড়িটা পড়েছিল । সেই ঘড়ি পড়ে রয়েছে । ঘড়ি পড়ার মানুষটাই আর নেই ! আর মেয়ে ফিরে আসবে না ঘরে ।সেসব কথা আর মনে করতে চাই না । জন্মদিনের আগের রাতেও মেয়ের কথা ভেবে ঘুমাতে পারিনি । সারারাত জেগে ছিলাম ।"
আরজি করের নির্যাতিতার জন্মদিনে মৌন মিছিল পানিহাটিতে (নিজস্ব ছবি) নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা বলেন, "ন্যায়বিচার মিললে সেটাই হবে মেয়ের জন্মদিনের প্রকৃত উপহার । তাই সকলকে বলব, আন্দোলনে পাশে থাকুন আমাদের । ন্যায়বিচার পেতে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলুন । যাতে রাজ্য সরকার বুঝতে পারে, নাগরিক সমাজ পাশে রয়েছে পরিবারের ।"
এদিকে, জন্মদিনে আরজি করের নির্যাতিতা ছাত্রীকে স্মরণ করে সোদপুরে মৌন মিছিল করে নাগরিক সমাজ । তাতে পা মেলান সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ । মিছিল শেষে সুবিচারের দাবিতে সরব হন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা । যদিও এই মিছিলে তৃণমূলের স্থানীয় কোনও জনপ্রতিনিধির উপস্থিতি দেখা যায়নি । যা ঘিরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে নাগরিক সমাজের একাংশের মধ্যে ।
নাগরিক সমাজের মিছিলে পা মেলালেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ (নিজস্ব ছবি) এনিয়ে নির্যাতিতার বাবা বলেন, "13 আগস্টের দুপুরের পর থেকে পানিহাটির কোনও তৃণমূল নেতাকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেখা যায়নি ।আমার বাড়ির দরজা এখনও ওনাদের জন্য খোলা রয়েছে । ওনারা চাইলে আসতেই পারেন ।"
অন্যদিকে, ন্যায়বিচারের দাবিতে আরএসএস প্রধান মোহন ভগবতের সঙ্গে দেখা করে আশ্বস্ত হওয়ার পর মেয়ের মৃত্যুর সুবিচার পাবেন বলে আশা করছেন নির্যাতিতার বাবা-মা । তবে আন্দোলন থেকে এখনই তাঁরা সরে আসছেন না । বরং মেয়ের জন্মদিনে আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে চলেছেন নির্যাতিতার বাবা-মা । পথে নামার পাশাপাশি সোদপুরে এদিন জুনিয়র চিকিৎসকদের আয়োজিত অভয়া ক্লিনিকেও যাবেন তাঁরা ।
বসে নেই জুনিয়র চিকিৎসকরাও । তাঁরাও নির্যাতিতার জন্মদিনে আরও একবার পথে নামতে চলেছেন । দুপুর 3টেয় কলেজ স্কোয়ার থেকে আরজি কর পর্যন্ত রয়েছে তাঁদের মৌন মিছিল । তারপর আরজি কর হাসপাতালে হবে বৈঠক । শুধু জুনিয়র ডাক্তাররাই নয়, নির্যাতিতার জন্মদিনে পা মেলাবেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও । এদিন সন্ধ্যায় নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা-মার সঙ্গে দেখা করবেন তিনি । পাশাপাশি, তাঁদের বাড়ির সামনেই পালন করবেন নির্যাতিতার জন্মদিনও ।