পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

হয়তো এবারই শেষ পুজো, বোধনের আগেই বিসর্জনের সুর জয়ন্তীতে - Durga Puja in Jayanti

Durga Puja in Jayanti: জঙ্গলের গভীর থেকে স্থানান্তর করার কাজ চলছে জয়ন্তীর মতো বন্যগ্রামগুলোকে ৷ তাই জয়ন্তী ছেড়ে চলে যেতে হতে পারে বাসিন্দাদের ৷ পরের বছর আর এখানে হয়তো হবে না পুজো ৷ দেবী দুর্গার আগমনের আগেই বিষাদের সুর তাই এই পর্যটনস্থলে ৷

Durga Puja in Jayanti
জয়ন্তীর দুর্গাপুজো (নিজস্ব ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 28, 2024, 2:49 PM IST

আলিপুরদুয়ার, 28 সেপ্টেম্বর:পরের বছর আর হবে না দুর্গাপুজো ৷ হয়তো এ বছরই চলে যেতে হবে গ্রাম ছেড়ে ৷ তাই জয়ন্তীর বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এটাই হয়তো তাঁদের শেষ দুর্গাপুজো । মা দুর্গা এখনও কৈলাস থেকে মর্ত্যে এসে পৌঁছাননি ৷ কিন্তু তার আগেই তাই পুজোর আয়োজকদের মনে বিষাদের চোরাস্রোত বইছে । স্বাধীনতার আগে 1942 সালে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল জয়ন্তীতে ৷ এবারই হয়তো শেষবারের মতো পুজোর আয়োজন করছেন পাহাড় জঙ্গল ঘেরা ডুয়ার্সের পর্যটনের রানি জয়ন্তীতে বসবাসকারীরা । তাই উৎসবের প্রস্তুতির মধ্যেও তাঁদের ভাবাচ্ছে আগামীর চিন্তা ৷

বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের গভীরে থাকা অন্যতম একটি বন্যগ্রাম জয়ন্তী । বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধীনে জয়ন্তীর জঙ্গল ৷ বাঘেদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তুলতে জয়ন্তীর মতো বন্যগ্রামগুলোকে জঙ্গলের গভীর থেকে স্থানান্তর করার কাজ চলছে । ইতিমধ্যেই ভুটিয়াবস্তি ও গাঙ্গুটিয়া বনবস্তিকে স্থানান্তর করার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে । এবার পালা জয়ন্তীর ।

বোধনের আগেই বিসর্জনের সুর জয়ন্তীতে (ইটিভি ভারত)

বন দফতরের দাবি অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই জয়ন্তীর বেশিরভাগ বাসিন্দা গ্রাম স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় রাজি হয়েছেন । যে সামান্য কিছু পরিবার সহমত প্রদান করেনি, তাদেরকে বোঝানোর পালা চলছে সরকারি তরফে । তাই এখানকার বাসিন্দাদের মনে আশঙ্কা যে, আগামী বছর পুজো আসবার আগেই হয়তো তাদেরকে জয়ন্তী ছেড়ে চলে যেতে হবে । তাই এবারের পুজোর আয়োজনই হয়ত জয়ন্তীতে শেষবারের মতো হতে চলেছে । সেই কারণেই এবারের পুজোকে স্মরণীয় করে রাখতে সমস্ত ব্যবস্থাই করছেন উদ্যোক্তারা ।

জয়ন্তীর বাসিন্দা প্রদীপ দে বলেন, "আমরা এখানে খুব আনন্দ করে থাকি । বক্সা, লেপচাখা-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে এখানে পুজো দেখতে আসেন মানুষজন । পর্যটকরাও পুজো উপভোগ করেন । এ বছর হয়তো আমাদের এখানে শেষ পুজো হবে । স্থানান্তর হয়ে গেলে এই জায়গায় আর পুজো করতে পারব না । মন খারাপ তো আছেই । এখন দেখা যাক কী হয় ।"

জয়ন্তীর মতো বন্যগ্রামগুলো স্থানান্তর হয়ে যাবে (নিজস্ব ছবি)

পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ অয়ন নাইডুর কথায়, "এটা আমাদের মিলন ক্ষেত্র । জয়ন্তীর পুজো আবেগের বিষয় । এই পুজো স্বাধীনতার আগের পুজো । এই বছর 83তম বর্ষ । আমাদের স্থানান্তরের বিষয় চলছে । সার্ভে করছে । এখনও ঠিক কনফার্ম নই । অনিশ্চয়তার মধ্যেই পুজো করছি । যেখানেই যাব সেখানেই আমরা এই পুজো নিয়ে যাব । আমরা জয়ন্তীতে ছোট থেকে বড় হয়েছি । এখান থেকে চলে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখের ।"

পুজো দেখতে ভিড় জমান পর্যটকরাও (নিজস্ব ছবি)

পুজো কমিটির সম্পাদক রাজীব লামা বলেন, "এটাই শেষ পুজো কি না সেটা সময় বলবে । এখান থেকে চলে যেতে আমরা বন দফতরের আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে । নানা সমস্যার কারণে চলে যেতে হবে । আমাদের পুজো হয়তো আয়োজনের প্রাচুর্যতায় শহরের পুজোগুলোর থেকে অনেক পিছিয়ে থাকবে ৷ কিন্তু বক্সা বাঘ বনের ভেতরে থাকা অনেকগুলি গ্রামের মানুষের আবেগ, ভালোবাসা আর সকল সম্প্রদায়ের সমাহারে সৃষ্টি হওয়া সার্বজনীনতায় এই পুজো টেক্কা দেয় শহরের তাবড় তাবড় পুজোগুলোকে ।"

স্বাধীনতার আগে থেকে এখানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে (নিজস্ব ছবি)

স্থানীয় শিক্ষক অরুণ শর্মা জানান, পুজোর ছুটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকরাও জয়ন্তীর এই পুজোতে অংশ নিয়ে আনন্দ উৎসবে মাতেন । তবে জয়ন্তীবাসীদের সকলেই একমত যে, তারা যেখানেই নতুন বসতী স্থাপন করবেন, সেখানেই মা দুর্গাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন এবং বিগত সময়ের মতোই মায়ের আরাধনায় মাতবেন ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details