পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 4, 2024, 8:17 PM IST

ETV Bharat / state

রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জুল মহম্মদ - Panchayat Deputy Chief

Panchayat Deputy Chief: আগে ছিলেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ৷ এবার জোট পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হয়েছেন ৷ এখনও কুড়নি চালিয়েই সংসার চলে রাজমিস্ত্রি জুল মহম্মদের ৷ দুর্নীতির বাজারে অন্যরকম ছবি ধরা পড়ল মালদায় ৷

Panchayat Deputy Chief
পঞ্চায়েতের কাজ সামলে নিয়মিত রাজমিস্ত্রির কাজ করেন উপপ্রধান (নিজস্ব ছবি)

মালদা, 4 সেপ্টেম্বর: এমনটাও হয় ! তাও আবার এই জমানায় ! যখন চুনোপুঁটি নেতাদের হাতেও মোটা সোনার বালা, গরু গলায় বাঁধার মতো সোনার শিকল, তখন রাজমিস্ত্রির কুড়নি চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন কোনও গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ! তেমনটাই ঘটেছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে ৷ সারাদিন রোদে পুড়ে, জলে ভিজে কুড়নি চালালে তবেই পেটে খাবার জোটে জুল মহম্মদের ৷ দুর্নীতির রাজনীতিতে তিনি যেন এক অন্য দিশার উদাহরণ ৷

রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন উপপ্রধান (ইটিভি ভারত)

ব্যতিক্রমী জুল মহম্মদের বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের মহেন্দ্রপুর গ্রামে ৷ বয়স প্রায় 50 পেরিয়েছে ৷ স্ত্রী ছাড়াও পরিবারে রয়েছে দুই ছেলে, এক মেয়ে ৷ মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তিনি ৷ অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও তিনি পাঁচ বছর পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন ৷ সেবার তৃণমূলের শিবিরে ছিলেন ৷ ঘাসফুলের টিকিটেই জিতেছিলেন ৷ তারপরেও তাঁর কোনও পেল্লাই বাড়ি নেই, চারচাকার বাহন নেই, কোনও মোটরবাইকও নেই ৷

তবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট একটা আছে বটে, কিন্তু তাতে হাজার কয়েক টাকাই তাঁর পুঁজি ৷ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করেনি তৃণমূল ৷ তিনি নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৷ তাঁর নৌকার গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি ঘাসফুল কিংবা অন্য কোনও প্রতীক ৷ তবে জেতার পর এবার আর তৃণমূলমুখো হননি জুল মহম্মদ ৷ যোগ দিয়েছেন বাম-কংগ্রেস জোটে ৷ তাঁকেই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান করেছে জোট নেতৃত্ব ৷

উপপ্রধান পেশায় রাজমিস্ত্রি (নিজস্ব ছবি)

এখনও প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন জুল ৷ হাত-মুখ ধুয়েই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন এলাকায় ৷ মানুষের কথা শোনেন ৷ কার কী অভিযোগ, কী চাহিদা, সব জেনে নেন ৷ ঘণ্টা দুয়েক পর ফিরে আসেন বাড়ি ৷ মুখে কিছু গুঁজে সাইকেল নিয়ে ছোটেন কাজে ৷ সারাদিন কুড়নি চালান ৷ দিনান্তে 500 টাকা উপার্জন ৷ তাতেই সংসার চলে তাঁর ৷ এভাবেই চলে আসছে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ৷ তাতে অবশ্য একফোঁটাও আফসোস নেই জুল মহম্মদের ৷

রাজমিস্ত্রি তথা উপপ্রধান জুল মহম্মদ বলছেন, "আমি পেশায় রাজমিস্ত্রি ৷ মানুষই আমাকে ভোটে দাঁড় করিয়েছিল ৷ আমাকে নির্দল হিসাবে ভোটে জিতিয়েছে ৷ মানুষের যখন প্রয়োজন পড়ে, তখন পঞ্চায়েত দফতরে যাই ৷ সেখানে কাজ শেষ করে ফের নিজের কাজের জায়গায় আসি ৷ 20 বছর ধরে রাজনীতি করছি ৷ এর আগেরবার তৃণমূলের টিকিটে ভোটে জিতেছিলাম ৷ পঞ্চায়েত সদস্য হিসাবে পাঁচ বছর কাটিয়েছি ৷ গত নির্বাচনে মানুষ আমাকে নির্দল হিসাবে দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে এনেছে ৷ আমার সংসারে অভাব রয়েছে ৷ তাই এই পেশা ছাড়িনি ৷ মানুষ যদি আমাকে ফের ভোটে দাঁড় করায়, আমি লড়ব ৷ আমি নিজের ইচ্ছেয় ভোটে লড়ি না ৷ মানুষের ইচ্ছেয় লড়ি ৷"

জুলের বক্তব্য, পরিশ্রম করে সংসার চালানোর মধ্যে অন্য ধরনের একটা আনন্দ রয়েছে ৷ যে আনন্দ চুরির অর্থে পাওয়া যায় না ৷ তিনি গরিব হতে পারেন ৷ রাজমিস্ত্রির কাজ করতে পারেন ৷ কিন্তু কেউ তাঁকে চোর বলতে পারে না ৷ রাজমিস্ত্রি জুলের সহকর্মী নিজামুদ্দিন ৷ তাঁর কথায়, "ওর মতো একজন লোক আমাদের সঙ্গে কাজ করে ৷ এটা ভেবেই আমরা আনন্দ পাই ৷ অনেকদিন ধরে আমরা একসঙ্গে কাজ করি ৷ পঞ্চায়েত সদস্য কিংবা উপপ্রধান হলেও জুল নিজের পেশা ছাড়েনি ৷ কাজ করতে করতে কেউ ডাক দিলেই চলে যায় ৷ পঞ্চায়েত দফতরের কাজ সামলে ফের এই কাজে যোগ দেয় ৷ ওর ব্যবহারের তুলনা নেই ৷ আমাদের কাজে কোনও ভুল হলেও ঠিক করে দেয় ৷ দিন কিংবা রাত, ওকে ডেকে কেউ সাহায্য পায়নি, এমনটা কখনও হয়নি ৷"

কুড়নি চালিয়েই সংসার চলে রাজমিস্ত্রি জুল মহম্মদের (নিজস্ব ছবি)

নিজেদের উপপ্রধানের এহেন সততায় মুগ্ধ কংগ্রেসের হরিশ্চন্দ্রপুর অঞ্চল সভাপতি আবদুস সোবহান ৷ তিনি বলেন, "জুল মহম্মদ দীর্ঘদিন ধরেই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন ৷ এর আগে তিনি তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন ৷ এবার তিনি ভোটে জিতে আমাদের সঙ্গে রয়েছেন ৷ তাঁর মতো সৎ ও স্পষ্টবাদী লোক এখন আর দেখা যায় না ৷ তাঁর জন্য আমরা গর্বিত ৷ তিনি দক্ষতার সঙ্গে দু'দিকই বজায় রেখেছেন ৷ তাঁকে সামনে রেখে আমরা তৃণমূলকে একটা বার্তা দিতে চাই, তাঁরা দেখুন জোটের প্রশাসন কীভাবে চলে ৷ আমার মনে হয়, জুল মহম্মদ বর্তমান সময়ের রাজনীতিতে এক অন্য পথের প্রদর্শক ৷"

ABOUT THE AUTHOR

...view details