কলকাতা, 12 এপ্রিল:বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফে বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অভিযোগে দু'জনকে গ্রেফতার করল ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা এনআইএ ৷ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সোশাল মিডিয়ায় জানিয়েছে, রামেশ্বরম ক্যাফে বিস্ফোরণ কাণ্ডে জড়িত দুই সন্দেহভাজনকে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷
অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা এবং এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়ার সময় রাজ্য পুলিশের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক শীর্ষকর্তা বলেন, "জঙ্গিদের গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দা দফতরের সঙ্গে সেন্ট্রাল এজেন্সিগুলির কথাবার্তা হয় ৷ এটা নতুন কোনও তথ্য বা কথা নয় ৷ কিন্তু এই রামেশ্বরম ক্যাফে বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্তরা যে পূর্ব মেদিনীপুরে রয়েছে, তার ইনপুট রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ পেয়েছিল ৷ তা পরে আমরা সেন্ট্রাল আইবিকে জানিয়েছিলাম ৷ এরপর এই ঘটনায় এনআইএকেও আমরা সাহায্য করি ৷"
ধৃত দু'জন আবদুল মাথিন ত্বাহা ওরফে সুমিত এবং মুসাভির হুসেন সজীব ৷ গত 29 মার্চ তাদের সন্ধানে 10 লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে এনআইএ ৷ এনআইএ সূত্রে খবর, সজীবই ক্যাফেতে আইইডি ডিভাইস রেখেছিল ৷ আর আবদুল এই বিস্ফোরণকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড বলে জানা গিয়েছে ৷ বিস্ফোরণের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ঘটনার পর কোন পথে কীভাবে পালিয়ে যেতে হবে, সে সবই ঠিক করেছিল এই আবদুল ৷ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে এনআইএ তাদের অবস্থান চিহ্নিত করে ৷ তারা মিথ্যে পরিচয় দিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছিল ৷ কলকাতার কাছ থেকেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ এই তল্লাশি অভিযানে এনআইএ-র সঙ্গে সহযোগিতা করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এবং পশ্চিমবঙ্গ, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক এবং কেরল পুলিশের এজেন্সি ৷
গত 1 মার্চ, শুক্রবারের ব্য়স্ত দুপুরে 12.50 মিনিট নাগাদ বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফেতে বিস্ফোরণ হয় ৷ সেই সময় বেঙ্গালুরুর ব্রুকফিল্ড এলাকার জনপ্রিয় এই খাবারের দোকানে যথেষ্ট ভিড় ছিল ৷ ক্যাফের হাত ধোয়ার জায়গায় বিস্ফোরণ হয় ৷ তবে বিস্ফোরণের তীব্রতা কম থাকায় কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি ৷ এই ঘটনায় বেঙ্গালুরু পুলিশ বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন এবং বিস্ফোরক পদার্থ আইনের অধীনে একটি মামলা দায়ের করে ৷
ক্যাফে ও এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে প্রথমে এক সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করে পুলিশ ৷ ওই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ক্যাফেতে একটি ব্যাগ রাখতে দেখা গিয়েছিল ৷ জানা যায়, বিস্ফোরণ ঘটাতে টাইমার-সহ আইইডি ডিভাইসও ব্যবহার করা হয় ৷
রামেশ্বরম ক্যাফে বিস্ফোরণের তদন্ত: গত 5 মার্চ এনআইএ কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুর পারাপ্পানা অগ্রহারা জেল-সহ দেশের 18টি কারাগারে অভিযান চালায় ৷ এই সময়ে অগ্রহারা জেল থেকে মাজ মুনিরকে আট দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল ৷ প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত জিজ্ঞাসাবাদে কোনও তথ্য না দিলেও তারই দেওয়া কিছু তথ্যের ভিত্তিতে এনআইএ আধিকারিকরা চিকমাগালুরের মুজামিল শরিফকেও গ্রেফতার করে ৷ মুজামিল জেরায় মাজ মুনিরের কার্যকলাপ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার পরই মাজ মুনিরকে গ্রেফতার করা হয় ৷
তদন্তে এনআইএ আরও জানতে পারে, বেঙ্গালুরুর পারাপ্পানা অগ্রহারা জেলে বসে এই বিস্ফোরণের ছক কষা হয়েছিল ৷ পরিকল্পনাটি ছিল মাজ মুনিরের ৷ সে আবার শিবমোগা ট্রায়াল বিস্ফোরণ এবং ম্যাঙ্গালুরু গ্র্যাফিটি মামলার সন্দেহভাজন ৷ এপ্রিলের শুরুতেই তাকে অগ্রহারা জেল থেকে গ্রেফতার করে এনআইএ ৷ এবার দুই মূল অভিযুক্ত আবদুল মাথিন ত্বাহা ওরফে সুমিত এবং মুসাভির হুসেন শাজীবকেও গ্রেফতার করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা যৌথ অভিযানে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে ৷