পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

মা হারা মেয়েকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না, নির্দেশ হাইকোর্টের - Cal High Court

Cal High Court: কারও উদাসীনতার জন্য কখনও মা হারা মেয়েকে তাঁর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না ৷ কর্মরত অবস্থায় বর্ণালী দে'র মৃত্যুর পর তাঁর যাবতীয় পাওনা মেয়েকে দিতে হবে নির্দেশ দিলেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা ৷

Etv Bharat
Etv Bharat

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 27, 2024, 8:28 PM IST

কলকাতা, 27 এপ্রিল: 15 বছর আগে পরিবার ত্যাগ করেছিলেন স্বামী। স্ত্রীর মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়ের সম্পত্তির অধিকারে ভাগ বসাতে আসরে বাবা। অবশ্য শেষ রক্ষা হল না। হাইকোর্ট রায় দিল মা হারা মেয়ের পক্ষেই। কেন্দ্রীয় সরকারের জল সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রকে কর্মরত ছিলেন বেহালার পর্ণশ্রীর বাসিন্দা বর্ণালী দে। 2009 সালে বর্ণালীদের স্বামী রাজু দে স্ত্রী এবং তাঁদের একমাত্র কন্যা অনুষ্কাকে ছেড়ে চলে যান।

ছোট অনুষ্কাকে নিয়ে বর্ণালী একাই থাকতেন তাঁদের দক্ষিণ কলকাতার বাড়িতে। কর্মরত অবস্থায় তিনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। নিজের চিকিৎসা এবং একমাত্র মেয়ের পড়াশোনা বেশ খানিকটা কঠিন করে তুলেছিল তাঁর জীবন। শেষমেশ 2023 সালের 21 মে বর্ণালীর মৃত্যু হয়। অনুষ্কার বয়স তখন 19 বছর। মায়ের মৃত্যুতে অথৈ জলে পড়ে যায় কলেজ ছাত্রী অনুষ্কা।

বর্ণালী দে যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কর্মরত ছিলেন তাই তাঁর সমস্ত মৃত্যুকালীন সরকারি ভাতা প্রাপ্য ও মাসিক পেনশনের জন্য আবেদন জানান অনুষ্কা। কারণ হিসেবে তিনি জানান, তাঁর মা মেয়ের নামেই 100 শতাংশ নমিনি করে গিয়েছিলেন। মায়ের অফিস থেকে অনুষ্কাকে বলা হয়, বর্ণালীর স্বামী অর্থাৎ অনুষ্কার বাবাও স্ত্রীর মৃত্যুকালীন সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তিনিও অংশীদার। পাশাপাশি তিনি এও জানিয়েছিলেন, তাঁর একমাত্র কন্যাকে যেন কোনও কিছুই না-দেওয়া হয়।

এই খবর শোনার পর অনুষ্কা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। মায়ের অফিস থেকে জানানো হয় 2001 সালে বর্ণালী দে তাঁর স্বামী ও মায়ের নামে 50 শতাংশ করে নমিনি করে গিয়েছিলেন। সে সময় অনুষ্কার জন্ম হয়নি ৷ 2003 সালে অনুষ্কার জন্ম হয়। এরপর 2009 সালে রাজু দে স্ত্রী এবং একমাত্র কন্যাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। সেই কারণে 2019 সালে বর্ণালী তাঁর একমাত্র মেয়েকে 100 শতাংশ নমিনি করে দেন ৷

কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে বর্ণালীর অফিস কর্তৃপক্ষ অনুষ্কাকে 100 শতাংশ নমিনি হিসেবে মানতে নারাজ। বাধ্য হয়ে অনুষ্কা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টে মামলা চলাকালীন অনুষ্কার বাবা পালটা মামলা করেন। অনুষ্কার মায়ের অফিস কর্তৃপক্ষ আদালতে হলফনামা দিয়ে জানায়, বর্ণালীর ফাইলে 100 শতাংশ নমিনি করা সংক্রান্ত কাগজ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। তবে অনুষ্কাই 100 শতাংশ নমিনি এমন আবেদন সার্ভিস বুকে লেখা হয়নি। তার জন্যই জটিলতা।

বিচারপতি রাজা শেখার মান্থার এজলাসে মামলার শুনানিতে অনুষ্কার আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরী জানান, একজন কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্ত দফতরের কর্মচারী তাঁর নমিনি পরিবর্তন করলে কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব সার্ভিস বুকে তা অন্তর্ভুক্ত করা। কিন্তু এক্ষেত্রে একটি নিরুপায় মেয়েকে তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর সরকারি ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। যদিও তাঁর মা মৃত্যুর আগেই মেয়ের নামে 100 শতাংশ নমিনির আবেদন সরকারি দফতরে জমা করেছেন। বাবা মেয়ের জন্মের পর পরিবারকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাঁর অধিকার ও প্রাপ্য বুঝে নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে অনুষ্কাকে সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

শুনানির এই পর্বে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। তাঁর প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি দফতরে অফিস ফাইলে 100 শতাংশ নমিনির পরিবর্তনের রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু অফিস কর্তৃপক্ষ সার্ভিস বুকে সেই তথ্য অন্তর্ভুক্ত করল না কেন? বিচারপতির মতে, বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে তাদের ভুল সংশোধন করে মামলাকারীকে মৃত মায়ের সমস্ত রকম প্রাপ্য ও সুযোগ-সুবিধা আগামী দু'মাসের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন বিচারপতি ৷ যদি সেই নির্দেশের অন্যথা হয় তবে আট শতাংশ সুদ-সহ তা মিটিয়ে দিতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে বলেও নির্দেশে জানান বিচারপতি।

আরও পড়ুন

কয়েকশো প্রার্থীকে প্রাথমিকে চাকরি দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মুর্শিদাবাদে রামনবমীর অশান্তির ঘটনায় এনআইএ অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোর্টের

ABOUT THE AUTHOR

...view details