মালদা, 19 সেপ্টেম্বর: অর্থের অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেননি ৷ স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডও কাজে আসেনি ৷ ওই কার্ডে ছেলের চিকিৎসা করাতে রাজি হয়নি কোনও হাসপাতাল ৷ এগিয়ে আসেনি প্রশাসন, এগোননি কোনও জনপ্রতিনিধি ৷ তাই 20 বছর ধরে শিকলবন্দি 37 বছর বয়সি সফিকুল আলম ৷ অমানবিক এই ছবি ধরা পড়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের মালিওর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তিওরপাড়া গ্রামে ৷
20 বছর বাড়িতেই শিকলবন্দি মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক (নিজস্ব ভিডিয়ো) সফিকুলের বাবা গুল মহাজনের বয়স হয়েছে ৷ সরকারি খাস জমিতে বাড়ি ৷ বাড়ির সামনে একটি ছোট্ট পান-সিগারেটের দোকান দিয়েছেন ৷ দোকান থেকে যা আয় হয়, তা দিয়েই সংসার চলে ৷ প্রথম স্ত্রী মারা গিয়েছেন অনেক আগেই ৷ শেষ বয়সে কে তাঁকে দেখাশোনা করবে, সেই চিন্তা করে বছর কয়েক আগে তিনি আরেকটি বিয়ে করেন ৷ সেই স্ত্রী'র এক সন্তানও রয়েছে ৷ সফিকুল-সহ পরিবারে এখন চারজন সদস্য ৷
জন্মের পর থেকে সফিকুল আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই বেড়ে উঠেছিলেন ৷ পড়াশোনা, খেলাধুলো, সবই চলছিল ৷ বয়স যখন 17 বছর, তখনই তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীনতা ধরা পড়ে ৷ গুল মহাজন জানাচ্ছেন, "ছোটতে ছেলেটা ভালোই ছিল ৷ মাঠে গোরু-বাছুর চড়াত ৷ স্কুল যেত ৷ হঠাৎ করে কী যে হয়ে গেল বোঝা গেল না ৷ মাথাটাই ওর খারাপ হয়ে গেল ৷ 17 বছর বয়সে ওর প্রথম পাগলামি ধরা পড়ে ৷ আমি গরিব মানুষ ৷ অত টাকা-পয়সা খরচ করে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারিনি ৷ তাই 20 বছর ধরে ছেলেকে শিকলে বেঁধে রেখেছি ৷ ছাড়া থাকলে ও পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ৷ গ্রামবাসীদের বিরক্তও করে ৷ তাই ওকে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয়েছি ৷ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি, যেন ছেলেটার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় ৷"
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের বিডিও তাপস পাল বলেন, "গতকাল সন্ধেয় ঘটনাটি কানে এসেছে ৷ এক জনপ্রতিনিধি বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন ৷ খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খোঁজখবর নিয়েছি ৷ ওই পরিবারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে কি না সেটাও জেনে নিয়েছি ৷ পরিবারটির সব নথিই রয়েছে ৷ প্রশাসন পরিবারটির পাশে রয়েছে ৷ ওই যুবকের যাতে চিকিৎসা হয়, কোথাও যদি তাঁকে পাঠাতে হয়, প্রশাসনের তরফে আমরা তার সব ব্যবস্থা করব ৷ যেভাবে তাঁকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে তা খুবই অমানবিক ৷ হয়তো ওই পরিবারটি নিজেদের অসহায় মনে করে এই কাজ করেছে ৷ বিষয়টি যখন আমার কানে এসেছে তখন এটা আর হতে দেওয়া যাবে না ৷ আমরা আজই সেটা দেখছি ৷ অসুস্থ ওই যুবকের সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থাও করব ৷"
এলাকার বিধায়ক তজমুল হোসেন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য ৷ তাঁর দাবি, "সফিকুল দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন ৷ আমরা তাকে চিনি ৷ ওদের বাড়িতে বহুবার গিয়েছি ৷ চিকিৎসার জন্য আমরা অনেকবার বহরমপুরে ওকে নিয়ে গিয়েছি ৷ চিকিৎসা করিয়েছি ৷ কিন্তু সে ঠিক হয়নি ৷ ও যাতে কোথাও পালিয়ে না যায়, তার জন্য শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে ৷ আমরা তার পাশে আছি ৷ সরকারও ওদের পাশে আছে ৷ আর মানসিক চিকিৎসায় স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের প্রয়োজনীয়তা নেই ৷ ওই কার্ডে পাগলের চিকিৎসা হয় না ৷"