কলকাতা, 19 জুলাই:প্রাথমিক শিক্ষা পর্যষদের বয়ানের জেরে আরও চাপ বাড়ল মানিক ভট্টাচার্যের উপর। প্রাথমিকের টেটের ওএমআর শিট নষ্ট করার দায় তাঁর উপরেই চাপাল পর্ষদ। 2014 ও 2016 সালের প্রাথমিক টেটের আসল ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়েছে ৷ আদালতে আগেই সেই তথ্য দিয়েছে পর্ষদ। এবার 2017 সালের ওএমার শিটও পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য মৌখিক নির্দেশ দিয়ে নষ্ট করিয়েছিলেন বলে দাবি পর্ষদের।
সেই ব্যাপারে 9 সেপ্টেম্বর 2022 যে নতুন অ্যাডহক কমিটি তৈরি হয়েছিল তাদেরকেও কিছু জানানো হয়নি। তারা কিছু জানতেনও না এ ব্যাপারে। এদিন আদালতে রিপোর্ট দিয়ে সেই তথ্য জানাল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। যার পালটা করে বিচারপতি অমৃতা সিনহা প্রশ্ন করেন, "আইন অনুযায়ী আসল ওএমআর নষ্ট করার আগে তার ডিজিটালাইজড ডেটা সংরক্ষণ করতে হয়। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কি সেই ডিজিটাল ডেটা সংরক্ষণ করেছে ?" পরবর্তী শুনানির দিন মামলাকারি টিনা মুখোপাধ্য়ায়ের ওএমআর সংক্রান্ত ডিজিটাল ডাটা আদালতে পেশ করতে নির্দেশ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে। 14 অগস্ট ফের শুনানি।
মামলাকারির তরফে আইনজীবী সুদীপ্ত দাসগুপ্ত ও বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আদালতে জানান, 2017 সালের টেট পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিলেন টিনা মুখোপাধ্যায়। কিন্তু অকৃতকার্য হন। পরে ওএমআর শিট দেখতে চাইলে যে মার্কশিট দেখানো হয় পর্ষদের তরফে, সেখানে দেখা যায় রোল নম্বর হাতে লেখা আছে। কিন্তু নীচে ডার্ক সার্কেল করা হয়নি। কিছু উত্তরের জায়গায় দুটো উত্তর সার্কল রয়েছে। এই ওএমার শিট তার নয় বলে আদালতে দাবি করেন মামলাকারি। সেই মামলাতেই পর্ষদ দাবি করে, আসল ওএমআর শিট প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যই নষ্ট করেছিলেন। একই সঙ্গে, যেভাবে তা নষ্ট করা হয়েছিল তা স্বাভাবিক নয় বলেও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ মেনে নিয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে আইনজীবী সুবীর স্যানাল জানান, 2017 সালের টেট পরীক্ষা 2021 সালে পরীক্ষা হয়। 2022 সালে ফলাফল প্রকাশ হয়। ওই পরীক্ষায় মাত্র এক থেকে দুই শতাংশ পরীক্ষার্থী পাশ করেছিল। মামলাকারি পরীক্ষার্থী পেয়েছিলেন মাত্র 72 । যদি ধরে নেওয়া হয় তাঁর দু-একটা প্রশ্নের উত্তরে গণ্ডগোল হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তা কেন করতে যাবে ? 82 পেলে একজন জেনারেল প্রার্থীকে উত্তীর্ণ বলে ধরা হয়। এই প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বর অনেকটাই পিছনের দিকে ৷
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবীকে বিচারপতি সিনহা প্রশ্ন করেন, "আপনি যে ফটো কপি আদালতে দিয়েছেন সেটা ওই প্রার্থীর কি না, সে ব্যাপারে আপনি তো নিশ্চিত নন ?" তার অবশ্য কোনও উত্তর দেননি আইনজীবী। মামলাকারির আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত জানান, পরীক্ষার্থী তাঁর ওএমআর শিটের রোল নম্বরে সার্কল করেছিল। কিন্তু আরটিআই করে যে মার্কশিট দেওয়া হয়েছে সেখানে রোল নম্বর সার্কল করা ছিল না। যার পালটা পর্ষদের আইনজীবীকে বিচারপতি অমৃতা সিনহা প্রশ্ন করেন, "কারও ওএমার শিটের শুরুতেই যদি রোল নম্বর লিখে ডার্ক সার্কেল না-করা হয়, তা সত্ত্বেও কি মেশিন সেই মার্কশিটের উত্তরের মুল্যায়ন করে ? প্রার্থীকে চিহ্নিত করবে কী করে ?" এই বিষয়ে তথ্যতলব করেছেন বিচারপতি। আগামী 14 অগস্ট আদালতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে রিপোর্ট দিতে হবে এই মর্মে।