মালদা, 6 মে: ভোট আসে, ভোট যায় ৷ তবে যে তিমিরে জীবনের এতগুলো বছর কাটিয়ে দিলেন রয়ে গিয়েছেন সেই তিমিরেই ৷ তা-ও আশা ছাড়েননি ৷ আগুনে সবকিছু পুড়ে গিয়েছে ৷ ছাই হয়ে গিয়েছে ভোটার কার্ড-আধার কার্ড-সহ অন্যান্য নথিও ৷ কিন্তু, নাম রয়েছে ভোটার তালিকায় ৷ মঙ্গলে রাজ্যে তৃতীয় দফার নির্বাচনে তাই রতুয়া-১ নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বলরামপুর বাঁধ সংলগ্ন প্রায় 70টি পরিবারের সদস্যরা যাবেন ভোট দিতে ৷ ভোট দেবেন ভালো দিনের আশায় ৷ তবে যদি নির্বাচন আধিকারিকরাও ফিরিয়ে দেন, তাহলেই বা কী করতে পারেন?
আগুনে সব হারানো মনোজকুমার মণ্ডল বলেন, "জঞ্জালিটোলায় বাড়ি ছিল ৷ নদীর ভাঙনে বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি ৷ সেটাও 11 বছর হয়ে গেল ৷ এখানে আমরা প্রায় 200 ঘর আছি ৷ বুধবারের আগুনে 50-60টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে ৷ ভাঙনে ঘর হারানোর পর সরকারি পুনর্বাসনের জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ৷ এখনও সেই জমি দেয়নি ৷ ভোটের মুখে নেতারা আসছেন, কত কথা বলছেন, কিন্তু কাজ হয়নি কিছুই ৷ আগুনে আমাদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড-সহ সব নথি পুড়ে গিয়েছে ৷ তবু ভোট দিতে যাব ৷ ভোট দিতে দিলে দেবে, নইলে ফিরে আসব ৷"
গ্রামবাসী দুলিলাল মণ্ডল জানান, গঙ্গার ভাঙনে ভিটেহারা হয়ে এখানে এসেছিলাম ৷ এখানে আগুনে সর্বস্বান্ত হলাম ৷ কিছু বাঁচেনি ৷ নথি ছাড়াই ভোট দিতে যাব ৷ দিতে দিলে দেবে, নইলে ফিরে আসব ৷ 2013 সাল থেকে সরকারি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাচ্ছি ৷ প্রতিশ্রুতি আর বাস্তব হয়নি ৷ নেতারা আসছেন, হবে হবে করে চলে যাচ্ছেন ৷ কিন্তু কবে হবে, কেউ বলতে পারছেন না ৷ পলিথিন পেয়েছি, দু’বেলা খাবারও দিচ্ছে কিন্তু ঝড় আসলেই এই পলিথিন উড়ে যাবে ৷ সরকারের উপরও আর আমাদের ভরসা নেই ৷ ভোট শেষ মানে রাজনীতি শেষ ৷ আমাদের যা হওয়ার হয়ে গেল ৷ আর কিছু হওয়ার নেই ৷ এই বিষয়ে রতুয়া-1 ব্লকের বিডিও রাকেশ টোপ্পোকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি ৷
গত বুধবার অর্থাৎ পয়লা মে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বলরামপুরে ছাই হয়ে গিয়েছিল প্রায় 70টি বাড়ি ৷ ঘরে থাকা দানাপানি, টাকা-পয়সা কিংবা আসবাবপত্র তো বটেই, ছাই হয়ে গিয়েছে ভোটার, আধার কার্ড-সহ সমস্ত নথি ৷ আগুনে পুড়ে মারা যান 71 বছরের বীণাপাণি মণ্ডল ৷ আগুনের খবর পেয়ে ভোটের মুখে ওই গ্রাম হয়ে উঠেছিল রাজনীতির আঙিনা ৷ কে আগে দুর্ভাগাদের কাছে পৌঁছোতে পারবেন, পাশে থাকার বার্তা দিয়ে সহমর্মিতার ভোট নিজের ঝুলিতে পুরতে পারবেন, তা নিয়ে প্রধান তিন দলের প্রার্থীর মধ্যে যেন অলিম্পিকের দৌড় প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল ৷ ইভিএমের বোতামে সরকারে থাকা দলের গায়ে যেন এই ঘটনার কোনও আঁচ না লাগে, তার জন্য সতর্ক ছিল প্রশাসনও ৷ যখন বন্যা কিংবা অন্য কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ পৌঁছোতে দেখা যায় কচ্ছপের চাল, তখন রকেট গতিতে বলরামপুরে পৌঁছে গিয়েছিল সরকারি সহায়তা ৷