কলকাতা, 12 ফেব্রুয়ারি: বুধবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পেশ হয় 2025-26 আর্থিক বছরের বাজেট ৷ রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বাজেট বক্তৃতা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই এই নিয়ে সমালোচনায় সরব হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ বাজেট পেশ হওয়ার পর বিধানসভার বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শুভেন্দু ৷ সেখানে তিনি এই বাজেটকে ‘যুবক-যুবতীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে উল্লেখ করেন ৷
আগামী অর্থবর্ষের জন্য তৈরি করা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের এই বাজেটের সমালোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বঙ্গ-বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও ৷ এদিন হুগলির ত্রিবেণীতে কুম্ভস্নানের পর এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেন তিনি ৷ সুকান্তর দাবি, এই বাজেটের মাধ্যমে রাজ্যবাসীকে ভাঁওতা দিয়েছে মমতার সরকার ৷
মমতার সরকারের বাজেটের সমালোচনায় একসুর শুভেন্দু-সুকান্ত-মীনাক্ষীদের (ইটিভি ভারত)
বাজেটের সমালোচনা করেছে সিপিএম এবং কংগ্রেসও ৷ সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন যে এমনই বাজেট যে হবে, তা তিনি আগেই অনুমান করেছিলেন ৷ কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচ রায়ের মতে, এই বাজেট অন্তঃসারশূন্য ৷
শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য: বিরোধী দলনেতা জানান, এই বাজেট দিশাহীন । রাজ্য সরকার যে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে, তা বাজেট বইয়ের ছত্রে ছত্রে প্রমাণিত । এই বাজেট বেকার বিরোধী বাজেট । 2 কোটি 15 লক্ষ বেকার যুবক-যুবতীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মাত্র চার শতাংশ ডিএ বাড়িয়ে কার্যত এই দুর্মূল্যের বাজারে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছেব সরকার ৷
একই সঙ্গে এই বাজেটকে উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল ও সুন্দরবন বিরোধী বলেও কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলনেতা । উত্তরের উন্নয়ন নিয়ে বাজেটে কিছু নেই বলে দাবি করেছেন তিনি ৷ শুভেন্দুর আরও দাবি, এই বাজেটে কৃষকদের, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্পের জন্যও কিছু নেই ৷ এবারের বাজেটে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য অর্থবরাদ্দ করা হয়েছে, সেটাও বাস্তবায়িত হবে না বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী ৷
বিশ্বকর্মা যোজনা, আয়ুষ্মান ভারত-এর মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিকে কেন রাজ্য সরকার গ্রহণ করছে না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি ৷ পাশাপাশি বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিলে কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি । আইএসডিএস ও আশা কর্মীদের স্মার্ট ফোন দেওয়ার জন্য যে অর্থ বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে, তা কেন্দ্র তিন বছর আগেই দিয়েছিল ৷ লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্পগুলিতে কেন অর্থ বৃদ্ধি করা হল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিরোধী দলনেতা ৷
বাজেট নিয়ে অশোক লাহিড়ির বক্তব্য:বিজেপির এই বর্ষীয়ান বিধায়ক জানিয়েছেন,এই বাজেট দেখতেও ভালো না ৷ ভেতরেও ভালো না । 123 পাতার বিশাল বাজেট হয়েছে । চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য একশো পাতা পর্যন্ত পড়লেন । বাকিটা ভরিয়ে দেওয়ার জন্য । তাই এই বাজেট আবার প্রমাণ করল যে তৃণমূল কংগ্রেস ঘোষণার সরকার । তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘বাংলাতেও শুধু গত 15 বছর ধরে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে ৷ কিন্তু কিছুই বাস্তবায়িত হচ্ছে না । আর এই ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতির খেলা করবেন না ।’’
বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ি (নিজস্ব ছবি)
তিনি বলেন, ‘‘যেমন আজ বলা হয়েছে যে নারী ও কন্যাদের উপর অর্ধের উপর ব্যয় করা হচ্ছে । তা তো হবেই, কারণ বাকি টাকা তো অনুদানেই চলে গিয়েছে । বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে না ।’’ তিনি উত্তরবঙ্গ নিয়েও সরব হয়েছেন ৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমি উত্তরবঙ্গের বিধায়ক । কী অবস্থা উত্তরবঙ্গে একবার দেখে আসুন । ওখানে উন্নয়ন প্রয়োজন । কিন্তু তার কিছুই হচ্ছে না ।"
সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য:বঙ্গ-বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি,নির্বাচনকে সামনে রেখে মিথ্যার বাজেট এটা । পে কমিশন ঘোষণার দরকার সেখানে ডিএ দিচ্ছে তাও চার শতাংশ । একই সঙ্গে তাঁর প্রতিশ্রুতি, বিজেপি ক্ষমতায় এলে চার শতাংশর ভিক্ষা নয়, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া হবে । শিল্প নিয়ে ঘোষণা নেই কেন সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি ৷
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (নিজস্ব ছবি)
এদিন হুগলির বাঁশবেড়িয়া ত্রিবেণীর কুম্ভ মেলায় স্নান করেন তিনি ৷ তার পরই বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেন তিনি ৷ ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান ও অঙ্গনওয়াড়ি-আশাকর্মীদের মোবাইল দেওয়া নিয়েও রাজ্যকে তোপ দেগেছেন সুকান্ত মজুমদার ৷
বাজেট নিয়ে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া:এদিনজলপাইগুড়ি থেকে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার যে বাজেটে কাজের বিষয়ে কিছুই থাকবে না আগেই বলেছিলাম । জিনিসপত্রের দাম কমানো তো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল । সেটা কী সরকার ভুলে যাচ্ছে ? বাজেটের পেশের পর সরকার কী ভুলে যাচ্ছে ?’’
সৌম্য আইচ রায়ের বক্তব্য:কংগ্রেসের এই নেতা রাজ্য সরকারের এই বাজেটকে পর্বতের মুষিকপ্রসব বলে মনে করছেন ৷ তাঁর কথায়, রাজ্যে কোনও বিনিয়োগ নেই ৷ শিল্প নেই ৷ রোজগার বলতে শুধু আবগারী বিভাগ ৷ তাই এই বাজেট অন্তঃসারশূন্য ছাড়া আর কিছু নয় ৷