পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

কৃষ্ণনগরে হাইভোল্টেজ লড়াই, মহুয়া কি পারবেন কুর্সি ধরে রাখতে ? - Lok Sabha Election 2024

Krishnanagar Constituency West Bengal Lok Sabha Election 2024 Party Wise Candidates: পশ্চিমবঙ্গের 42টি লোকসভা আসনের মধ্যে যে ক’টি আসনে হাইভোল্টেজ লড়াই চলছে, তার মধ্যে অন্যতম কৃষ্ণনগর ৷ সেই লড়াইয়ের একদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র ৷ অন্যদিকে বিজেপির অমৃতা রায় ৷ আর রয়েছেন সিপিএম প্রার্থী এসএম সাদি ৷ এই তিন জনের লড়াইয়ের শেষে কৃষ্ণনগরের কুর্সি কার কাছে থাকবে সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ৷ সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজল ইটিভি ভারত ৷

Krishnanagar Constituency West Bengal
কৃষ্ণনগর লোকসভা (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : May 10, 2024, 10:55 AM IST

কৃষ্ণনগরের কুর্সি কি ধরে রাখতে পারবেন মহুয়া (ইটিভি ভারত)

কৃষ্ণনগর, 10 মে: আগামী 13 মে চতুর্থ দফার ভোটে কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনের ভোটাররা নিজেদের রায় ইভিএম বন্দি করবেন ৷ এবার সেখানে দ্বিতীয়বার জয়ের লক্ষ্যে লড়াইয়ে নেমেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র ৷ যিনি 2019 সালে এই কেন্দ্র থেকে প্রথমবার জিতেছিলেন ৷

2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগরে মহুয়া মৈত্র 63 হাজার 218 ভোটে জিতেছিলেন ৷ তিনি পেয়েছিলেন 6 লক্ষ 14 হাজার 882 ভোট ৷ তাঁর নিকটতম প্রার্থী বিজেপির কল্যাণ চৌবে 5 লক্ষ 51 হাজার 654 ভোট পেয়েছিলেন ৷ সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝা'র প্রাপ্য ভোট ছিল 1 লক্ষ 20 হাজার 222 । কংগ্রেস প্রার্থী ইন্তাজ আলি শাহ পেয়েছিলেন 38 হাজার 305 ।

ভোটে জেতার পরবর্তী সময়ে মহুয়া মৈত্রকে বারবার সংসদের ভিতরে ও বাইরে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছে ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও তিনি বহুবার সরাসরি আক্রমণ করেছেন ৷ যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগ উঠেছে ৷ লোকসভার এথিক্স কমিটির সুপারিশে তাঁকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয় কয়েকমাস আগে ৷ এখনও সিবিআই তদন্ত চলছে ওই ঘটনা নিয়ে ৷

কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী (ইটিভি ভারত)

যদিও ওই ঘটনার প্রভাব যে কৃষ্ণনগরের ভোটে পড়বে না, তা মহুয়া মৈত্রের বক্তব্যেই স্পষ্ট ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি জেতার বিষয়ে 200 শতাংশ আশাবাদী । গত পাঁচ বছরে আমি প্রায় 99 শতাংশ কাজ করেছি । সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছি । বিরোধীরা বিরোধীদের মতো প্রচার করুক । কিন্তু সবশেষে মানুষ তো ভোট দেবে । আমি পুনরায় জয়লাভ করব । আমার এই লোকসভা কেন্দ্রে 81টা গ্রাম পঞ্চায়েত এবং একটি মাত্র পৌরসভা রয়েছে । আমি প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি । যাতে সাধারণ মানুষ না বলতে পারে প্রার্থী আমাদের এলাকায় এলেন না ।’’

মহুয়ার বিরুদ্ধে এবার বিজেপির বাজি কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের সদস্য অমৃতা রায় ৷ তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে গেরুয়া শিবিরের তরফে ৷ তাঁর জনসভা করে গিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ ভোট ঘোষণার আগেও তিনি কৃষ্ণনগরে একটি জনসভা করেন ৷ অমৃতা রায়ের নাম ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ফোনও করেন ৷ অমিত শাহও এসেছিলেন তাঁর প্রচারে ৷

তাই জয় নিয়ে নিশ্চিত অমৃতা রায় ৷ তিনি বলেন, ‘‘মানুষ যা আন্তরিকতা দেখাচ্ছে, তাতে আমার মনে হচ্ছে আমি ইতিমধ্যে জিতে গিয়েছি । মানুষ প্রচুর সমর্থন করছে এবারের জয় আমার হবে ।’’ পাশাপাশি তিনি মহুয়া মৈত্র প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কে আমার বিরুদ্ধে দাঁড়ালো, তাতে আমার কিছু আসে যায় না । আমার লক্ষ্য মানুষের হয়ে কাজ করা, আমি সেটাই করে যাব ।’’

2019 লোকসভা ভোটের ফলাফল (ইটিভি ভারত)

উন্নয়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি সাংসদ হওয়ার পর আমরা বেশ কয়েকটি কাজ করার খুব আগ্রহ রয়েছে । যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে আমাকে 100 দিনের কাজের কথাটি মাথায় রাখতে বলেছেন । কৃষ্ণনগর বেলেডাঙ্গায় একটি রেললাইনের উপর দিয়ে ওভারব্রিজ করার প্রয়োজন রয়েছে । তার কারণ সেখানে দীর্ঘক্ষণ প্রচণ্ড যানজট লেগে থাকে ৷ কৃষ্ণনগরের অঞ্জনা নদী ও জলঙ্গি নদী, এই দুটি নদীকেই সংস্কার করব ৷ আরও একটি প্রধান কাজ হল কৃষ্ণনগর থেকে করিমপুর রেল চলাচল ।’’

তিনি কি পারবেন ? নির্বাচনী পরিসংখ্যান কী বলছে ? লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান যদি বিচার করা হয়, তাহলে দেখা যাবে 2009 সাল থেকে 2019, দশ বছরে বিজেপি এখানে প্রায় 24 শতাংশ ভোট বৃদ্ধি করেছে ৷ গতবার পাঁচ শতাংশের কিছু কম ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন বিজেপির কল্যাণ চৌবে ৷ যদিও 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগরের অন্তর্গত ছ’টি বিধানসভায় বিজেপিকে হারতে হয় ৷ একটি মাত্র জয় আসে কৃষ্ণনগর উত্তরে ৷ সেখানে জিতেছিলেন মুকুল রায় ৷ পরে তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে চলে যান ৷

তবে বিজেপি জিততে পারুক বা না পারুক, তৃণমূলের সঙ্গে মূল লড়াই তাদেরই হবে ৷ যদিও হাল ছাড়তে নারাজ সিপিএম প্রার্থী এসএম সাদিও ৷ তিনি বলেন, ‘‘কৃষ্ণনগর কেন্দ্র এবার বামেদের দখলে আসবে । মানুষের সমর্থন দেখে আমি সেটা প্রথম থেকেই বলে আসছি । 2011 সালের পর থেকে তৃণমূল এ রাজ্যে এবং 2014 সালের পর থেকে বিজেপি পুরো দেশটাকে কর্পোরেটে পরিণত করেছে । বিজেপি প্রতিটি দ্রব্য বিদেশ থেকে আমদানি করার চেষ্টা করছে । লকডাউনের পর থেকে আদানি-আম্বানিদের সম্পত্তি বেড়ে গিয়েছে । আর যারা দেশের ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ী, তাঁরা সর্বশান্ত হয়ে গিয়েছেন ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘অন্যদিকে তৃণমূল দলটা আগাগোড়া দুর্নীতিতে যুক্ত । কৃষ্ণনগরের যিনি সাংসদ ছিলেন কী কারণে বহিষ্কৃত হয়েছেন সেটা সকলেই জানেন । আমি তাঁর এই দুর্নীতিকে কালীঘাটের দুর্নীতি বলে মনে করি । তাছাড়া বিজেপি এবং তৃণমূল যেভাবে মানুষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করছে, তাতে করে আগামিদিনে সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে যাবে । সেই কারণেই আমরা বলছি, যারা বিজেপি ও তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই একজোট হোন ।’’

কিন্তু 2009 থেকে 2019, এই দশ বছরের নির্বাচনী পরিসংখ্যান বিচার করলে দেখা যাবে যে সিপিএমের ভোট কমেছে প্রায় 27 শতাংশ ৷ তাই তাঁর আশা কতটা পূরণ হবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে ৷ এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী 4 জুন লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন ৷

আরও পড়ুন:

  1. অনুব্রতহীন বোলপুর! বাম-রাম-ঘাসফুলের জমজমাট লড়াইয়ে ফায়দা তুলবে কে ?
  2. অনুব্রতর গড়ে ত্রিমুখী লড়াই, বীরভূমে শতাব্দীর কুর্সি দখলে মরিয়া বিজেপি-কংগ্রেস
  3. উপনির্বাচনের ফলের পুনরাবৃত্তি নাকি বিজেপি ঘরে ফেরাবে আসানসোল, সমীক্ষা কী বলছে ?

ABOUT THE AUTHOR

...view details