পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

পাতালঘরের বৃত্তান্ত, জন্মের 41 বছর পর নদীর নীচে ছুটে ফের ইতিহাসের পথে কলকাতা মেট্রো - কলকাতা মেট্রো

Kolkata Metro: জন্মের 41 বছর পর আবারও ইতিহাস গড়তে চলেছে কলকাতা মেট্রো ৷ নদীর নীচ দিয়ে ছুটবে রেল ৷ একনজরে দেখে নেব কলকাতা মেট্রোর জন্ম বৃত্তান্ত ও তার নয়া সংযোজনের খুঁটিনাটি ৷

ETV BHARAT
ETV BHARAT

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 5, 2024, 7:33 PM IST

Updated : Mar 6, 2024, 10:23 AM IST

জন্মের 41 বছর পর নদীর নীচে ছুটে ফের ইতিহাসের পথে কলকাতা মেট্রো

কলকাতা, 5 মার্চ:1984 সালেমাটির নীচ দিয়ে ছুটল রেল ৷ গোটা দেশকে তাক লাগিয়ে দিয়ে পাতালঘরে বিকল্প পরিবহণের পথ দেখাল কলকাতা ৷ খুব অল্প দিনের মধ্যেই মেট্রো রেল হয়ে উঠল মহানগরীর লাইফলাইন ৷ ক্রমে ডালপালা মেলেছে কলকাতা মেট্রো ৷ তবে জন্মের 41 বছর পর সে নয়া ইতিহাসের দোরগোড়ায় ৷ এ বার আর শুধু মাটির নীচ দিয়ে নয়, নদীর বিপুল জলরাশির নীচ দিয়ে ছুটবে মেট্রো ৷ এটাও দেশে এই প্রথম ৷ বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে উদ্বোধন হতে চলেছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত অংশের ৷

শহরে মেট্রোর গোড়াপত্তন: 1984 সালের 24 অক্টোবর ৷ দেশের মধ্যে প্রথমবার কলকাতায় চলেছিল মেট্রো রেল । তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় 1949 সালে মহানগরীর পরিবহণ ব্যবস্থার আরও একটি বিকল্প পথ হিসেবে মাটির নীচ দিয়ে রেল ব্যবস্থা বা মেট্রো রেলের পরিকল্পনা করেন । এর পর গড়িয়ে যায় বেশ কয়েক বছর । 1969 সালে মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট নামে একটি প্রজেক্ট তৈরি করা হয় । এরপর বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অবশেষে পাঁচটি রুটে মেট্রো চালানো যেতে পারে, এমন একটি প্রস্তাব দেওয়া হয় । 1984 সালের 24 অক্টোবর প্রথমবার মেট্রো চলে ।

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর গোড়াপত্তন: জানা যায় যে, 1921 সালে কলকাতা ও হাওড়াকে নদীর নীচ দিয়ে টিউব রেলের মাধ্যমে যুক্ত করার কথা প্রথম ভেবেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার । কিন্তু সেই পরিকল্পনা সেখানেই থমকে যায় । এরপর 2008 সালে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয় ইউপিএ সরকার । ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয় 2009 সালে । এরপর 2013 সালে প্রথম প্রস্তাবিত রুটের পরিবর্তন করা হয় ।

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডোর: নয়া রুট হয় সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত (16.55 কিমি)৷ শহর কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী শহর হাওড়াকে মেট্রোপথে যুক্ত করবে এই করিডোর । মাটির উপর দিয়ে 5.74 কিমি এবং মাটির নীচ দিয়ে মেট্রো যাবে 10.81 কিমি । মোট থাকবে 12টি মেট্রো স্টেশন । মটির উপরে মোট ছয়টি স্টেশনের সবক'টি চালু হয়ে গিয়েছে । মাটির নীচের ছয়টি স্টেশনের দুটি চালু হয়েছে । অর্থাৎ মোট আটটি স্টেশনে বাণিজ্যিক পরিষেবা চালু হয়েছে । ডিপো সেন্ট্রাল পার্ক স্টেশনে রয়েছে ট্রেন কন্ট্রোল সিস্টেম । তবে যদি এই ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়ে তাহলে ব্যাক আপ ট্রেন কন্ট্রোল সিস্টেম থাকবে হাওড়া মেট্রো স্টেশনে । যেহেতু এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেট্রো স্টেশন, তাই এখানে যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চায় না কর্তৃপক্ষ । কমিউনিকেশন বেসড ট্রেন কন্ট্রোল বা (সিবিটিসি) সিগন্যালিং ব্যবস্থা থাকছে । পুরো রুটে প্রতিদিনের আনুমানিক যাত্রী সাত লক্ষের কাছাকাছি হবে ।

প্রকল্পের খরচ ও জরুরি তথ্য: এই প্রকল্পের জন্য মোট খরচ হয়েছে 10,442 কোটি টাকা ৷ এ বার জেনে নেব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি তথ্য,

* হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেডের মধ্যে চারটি স্টেশন: এসপ্ল্যানেড, মহাকরণ, হাওড়া স্টেশন মেট্রো স্টেশন এবং হাওড়া ময়দান ।

*ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডোরের সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদা পর্যন্ত চালু হয়ে গিয়েছে । (9.3 কিমি)

*হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত দূরত্ব 4.80 কিমি ।

*বাকি এসপ্ল্যানেড থেকে শিয়ালদা পর্যন্ত দূরত্ব 2.45 কিমি ।

হাওড়া মেট্রো স্টেশন: ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডোরের সবচেয়ে গভীরতম এবং ব্যস্ততম মেট্রো স্টেশন হবে হাওড়া মেট্রো স্টেশন । একটি 10 তলা বাড়ির সমান এই স্টেশনটি । ব্যস্ততায় ও গভীরতায় এর থেকে উপরে রয়েছে দিল্লির হজ খাস মেট্রো স্টেশন । এখানে মাটির উপর দিয়ে চলবে ট্রেন আর নীচ দিয়ে চলবে মেট্রো রেল । হাওড়া মেট্রো স্টেশনটি পাঁচটি স্তরে তৈরি হয়েছে । চারটি কনকোর্স এবং প্ল্যাটফর্ম । স্টেশনটি 54,000 বর্গকিমি জুড়ে তৈরি করা হয়েছে ।

হুগলি নদীর নীচের অংশ: দেশের প্রথম নদীর নিচ দিয়ে মেট্রো পরিষেবা হতে চলেছে এটি । এই অংশটিকে সাবেকুইয়াস টানেল বলা হচ্ছে । সুড়ঙ্গটি 66 দিনের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে । এই দুটি সুড়ঙ্গ আর্থ প্রেশার ব্যালান্সিং টানেল বোরিং মেশিনের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে । নদীর নীচের সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য হল 520 মিটার । নদিবক্ষের 16 মিটার নীচে অবস্থিত এই সুড়ঙ্গ । সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় 80 কিলোমিটার বেগে দৌড়বে মেট্রো । নদীর নিচের অংশ পারাপার করতে সময় লাগবে 45 সেকেন্ড । দিনের ব্যস্ততম সময়ে নদীর নীচের অংশে যাত্রী ভিড় হতে পারে আনুমানিক 30 হাজার ।

আপদকালীন পরিস্থিতির জন্য ব্যবস্থা: সুড়ঙ্গের মধ্যে যদি কোনওরকম আপদকালীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং যদি ট্রেন খালি করে দিতে হয়, তাহলে সুড়ঙ্গের ভেতরের ওয়াকওয়ে দিয়ে হেঁটে গিয়ে যাত্রীরা ভেন্টিলেশন সাফট দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবেন । আর কোনও মেট্রো স্টেশনে এই ওয়াকওয়ে নেই । এই স্টেশনের প্রত্যেক 240 মিটার অন্তর একটি করে ক্রস-প্যাসেজ রয়েছে ৷ প্রয়োজনে এই ক্রস-প্যাসেজ ব্যবহার করে যাত্রীরা বেরিয়ে যেতে পারবেন । পুরো সুড়ঙ্গে এ রকম আটটি ক্রস-প্যাসেজ রয়েছে । ক্রস প্যাসেজের আরেকটি কার্যকারিতা হল যে, পাশাপাশি দুটি সুড়ঙ্গকে ক্রস প্যাসেজ যুক্ত করে । অর্থাৎ কোনও একটি সুরঙ্গ থেকে আরেক সুড়ঙ্গে যেতে হলে ক্রস-প্যাসেজ দিয়ে যেতে হবে ।

আরও পড়ুন:

  1. গঙ্গার নীচে মেট্রোসফর হয়ে উঠবে আরও সুন্দর, ঘন নীল আলোয় সাজছে যাত্রাপথ
  2. 6 মার্চ তিন মেট্রো রুটের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী, গঙ্গার নীচে টানেল সফর মোদির
  3. দেশে প্রথম নদীর নীচে মেট্রো চলবে শহরে, মার্চের গোড়ায় উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী মোদি
Last Updated : Mar 6, 2024, 10:23 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details