কলকাতা, 10 এপ্রিল: ভূপতিনগরে আক্রন্ত হলেন এনআইএ আধিকারিক ৷ অথচ আক্রান্তের ধারা পুলিশ যুক্ত করল মূল অভিযুক্তের স্ত্রীর দায়ের করা এফআইআরে ! পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এভাবেই বিস্ময় প্রকাশ করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত । যদিও তাঁর কথায় নিরুত্তর ছিলেন রাজ্যের আইনজীবী । বিচারপতির নির্দেশ, রাজ্যকে 7 দিনের মধ্যে দুটি এফআইআর (একটি এনয়াইএ-র দায়ের করা, অন্যটি মনোব্রত জানার স্ত্রী-র দায়ের করা)-এর ব্যাপারে তাদের বক্তব্য জানাতে হবে ৷ একইসঙ্গে এনআইএ তাদের বক্তব্য জানাবে পরের এক সপ্তাহের মধ্যে । 29 এপ্রিল বেলা 2টোয় এই মামলার ফের শুনানি হবে বলে জানিয়েছে আদালত ।
হাইকোর্ট জানিয়েছে, রাজ্য যদি এনআইএ-র আধিকারিককে জিজ্ঞসাবাদ করতে চায়, তাহলে 48 ঘণ্টা আগে নোটিশ দিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে তা করতে পারে । তবে গ্রেফতার বা অন্য কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না ।
এনআইএ-র তরফে আইনজীবী অরুণ মাইতি বলেন, "2022 সালের 2 ডিসেম্বর ভূপতিনগরে একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে এনআইএ আধিকারিকরা গত শনিবার বিকেল 4.30টে নাগাদ তদন্ত করতে যায় সেখানে যান ৷ এ বিষয়ে পুলিশকে আগে থেকে জানানো সত্ত্বেও তারা ফোর্স পাঠায়নি । মনোব্রত জানা নামে এক অভিযুক্ত সকাল 6.15 নাগাদ গ্রেফতার হন । তারপর শতাধিক মহিলা আক্রমণ করে এনআইএ আধিকারিকদের উপর । পরে মনোব্রত জানার স্ত্রী উলটে এনআইএ আধিকারিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন । সেখানে তিনি শ্লীলতাহানি ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনেন । মনোব্রত জানাকেও হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় । যদিও তার কোনও প্রমাণ নেই ।
এক এনআইএ আধিকারিক আক্রান্ত হন । গাড়ি ভাঙচুর করা হয় । তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্ট রয়েছে । আদালত চাইলে পুলিশ সেই রিপোর্ট দেখতে পারে ।"
রাজ্যের আইনজীবী অমিতেষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভোর 4.15 নাগাদ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি (6 জনের এনআইএ-র একটা টিম) ভুপতিনগর থানায় যান । পৌনে পাঁচটার মধ্যে বাহিনী পাঠাতে বলা হয় ৷ এত ভোরে যে কোনও থানায় সাহায্যের জন্য গেলেও ব্যাবস্থা নিতে সময় লাগে । পরে ফোর্স রেডি হয় । 6.25 নাগাদ এনাইআইএ-র তরফ থেকে একটা ফোন কল আসে যে, জানানো হয়, তাঁরা নাড়ুয়াভিলা গ্রামে আক্রান্ত হয়েছেন । 6.45 নাগাদ তাঁরা ফিরে আসেন । সকাল 8.40-এ এফআইআর দায়ের হয় এনাইএ-র তরফে । পরে গ্রেফতার হওয়া মনোব্রত জানার স্ত্রী একটি এফআইআর দায়ের করেন । সে দিন আক্রান্ত হয়েছেন এনআইএ আধিকারিক ডিডি ছেত্রী ৷ তিনি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নিয়ে
পুলিশ জানতে চেয়ে সমন পাঠিয়েছে । তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্ট, ভাঙচুর হওয়া গাড়ি এবং সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হয়েছে ।
কেন্দ্রের তরফের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার তখন অভিযোগ করেন, বারবার বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসারদের বিভিন্ন ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে ৷ 2019 সালে কেন্দ্রীয় রাজস্ব দফতরের বেশ কয়েকজন আধিকারিক প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার তদন্তের জন্য কলকাতায় এসেছিলেন । এক আধিকারিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করে পুলিশ তাঁকে হেনস্থা করেছিল । এরপরে একাধিক ঘটনা ঘটেছে একইভাবে । কয়েকদিন আগে সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকরা আক্রান্ত হয়েছেন ৷ তার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে দেওয়া হয় । ভূপতিনগরেও একই রকমভাবে হেনস্থা করা হয়েছে । সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিক আদালত । সিবিআই তদন্ত করতে প্রস্তুত ।
বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত রাজ্যের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, মনোব্রত জানার স্ত্রী যে অভিযোগ করেছেন, সেখানে পুলিশ কীভাবে 325 ধারা যুক্ত করল ? 325 ধারা সাধারণত গুরুতর আঘাতের ক্ষেত্রে যুক্ত করা হয় । কিন্তু মনোব্রত জানার হাতে একটু আঁচড়ে গিয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে । তাঁর শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই । বিচারপতির এই প্রশ্ন শুনে রাজ্যের আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও উত্তর দিতে পারেননি ।
উল্লেখ্য, 2022 সালের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট । গত 2 এপ্রিল এনআইএ বিশেষ আদালত পাঁচজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে নির্দেশ দেয় ।