কলকাতা, 1 সেপ্টেম্বর: আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে দেশজুড়ে । সমাজের প্রায় সমস্ত অংশের মানুষ পথে নেমেছেন । এরকম পরিস্থিতিতে নৈতিক জাগরণের লক্ষ্যে দেশজুড়ে সেপ্টেম্বর মাসভর কর্মসূচি নিল জামাআতে ইসলামী হিন্দের মহিলা শাখা ।
'জুমার নামাযে খুতবায় নৈতিকতার পাঠ'-সহ সিম্পোজিয়াম, সেমিনার, জনসভা, পথসভা, কর্নার মিটিং, গেট-টুগেদার, সম্মেলন, চা পার্টি, গ্রুপ মিটিং ইত্যাদির আয়োজন করা হবে । বিভিন্ন ভাষায় বই-পত্র, পুস্তিকা, হ্যান্ডবিল, ফোল্ডার, ব্যানার সাধারণ মানুষের কাছে বিতরণ করা হবে ।
শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে জামাআতে ইসলামী হিন্দ সংগঠনের জাতীয় সেক্রেটারি রহমতুন্নিসা বলেন, "স্বাধীনতা মানেই আমি যা খুশি তাই করতে পারি না । অন্যের ক্ষতি হবে এমন কাজ কখনওই করা যায় না । যৌন সহিংসতা বৃদ্ধি এবং নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় দেশের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা । জামাআতে ইসলামী হিন্দ, পশ্চিমবঙ্গ মহিলা শাখা সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী দেশজুড়ে প্রচার অভিযান পরিচালনার কর্মসূচি নিয়েছে । যার থিম 'নৈতিকতাই স্বাধীনতার ভিত্তি।' এই শিরোনামে ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য হল, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা কী এবং স্বাধীনতা কীভাবে নৈতিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত – সে সম্পর্কে দেশবাসীকে অবহিত করা । তাছাড়া মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ না-থাকলে পুলিশ প্রশাসনের একার পক্ষে এধরনের অনৈতিক কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব নয় ।"
আরজি করের ঘটনায় তাঁরা দোষীদের দ্রুত নজিরবিহীন শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য আর্জি জানিয়েছেন । এই ঘটনায় বঙ্গ বিজেপির ভূমিকা নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন । রহমতুন্নিসা বলেন, "নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে কোনও রাজনৈতিক দল আন্দোলন করলে অসুবিধার কিছু নেই । কিন্তু, সিলেক্টিভ হবে কেন ? 2002 সালে গুজরাত দাঙ্গা চলাকালে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় একজনকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল । তাঁর তিন বছরের কন্যাশিশুকে আছাড় মেরে এবং পরিবারের আরও 6 জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল । 22 বছর পরেও বিলকিস পূর্ণাঙ্গ ইনসাফ পায়নি । দোষীরা জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ফুল মালা পরানো হচ্ছে । অন্যান্য রাজ্যেও এই ধরনের ঘটনায় তারা কী পদক্ষেপ করছে ?"
জামাআতে ইসলামী হিন্দ পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি মসিহুর রহমান বলেন, "দেশে তরুণী ও নারীদের উপর যৌন সহিংসতা ও হত্যার ঘটনা উত্তরোত্তর বাড়ছে । সামাজিক বৈষম্য, নিরাপত্তায় গাফিলতি এবং নারী জাতির প্রতি লিঙ্গবৈষম্য পুরো বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে । কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা, বিহারের গোপালপুরে 14 বছরের দলিত কন্যাকে গণধর্ষণ করে হত্যা, উত্তরাখণ্ডের উধমসিং নগরে মুসলিম নার্সকে ধর্ষণ করে খুন, মহারাষ্ট্রের বদলাপুরে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মধ্যে দুই কন্যাশিশুকে যৌন নির্যাতন, অসমের ধিং এলাকায় 17 বছরের ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনাবলী প্রমাণ করছে যে, আমাদের দেশে নারীদের প্রতি মানসিকতা ও আচরণে থাকতে হবে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের প্রতিফলন । সময়ের দাবি মেনে এটা জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন ।"
জামাআতে ইসলামী হিন্দ পশ্চিমবঙ্গের সেক্রেটারি মঞ্জুরা খাতুন বলেন, "যৌনতা বাহিত বা সংক্রমিত মারণরোগ, গর্ভপাত, যৌন সহিংসতা এবং ধর্ষণের বাড়বাড়ন্ত, সেই সঙ্গে পারিবারিক বন্ধন শিথিল ও পারিবারিক কাঠামো ভেঙে যাওয়া এবং পর্নোগ্রাফি ও অশ্লীলতার সহজলভ্যতা, সমাজের নৈতিক মূল্যবোধকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে । সর্বোপরি জাতপাত ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ক্রমবর্ধমান প্রভাব, নির্দিষ্ট সম্প্রদায় ও জাতিকে নিকৃষ্ট হিসেবে দেখা এবং আধিপত্যবাদ বজায় রাখার আকাঙ্ক্ষা সার্বিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে ।"
এই প্রচারাভিযান চলাকালে শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, সুশীল সমাজ, ধর্মীয় পণ্ডিতদের সহযোগিতায় জাতীয়, রাজ্য, জেলা, ব্লক এবং স্থানীয় স্তরে সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করা হবে । ছাত্র ও যুবকদের প্রকৃত স্বাধীনতা ও নৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে শিক্ষাঙ্গণ বা ক্যাম্পাসে বিশেষ কর্মসূচি পরিচালিত হবে । সভা-সমিতির বক্তব্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দিতে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতাদেরকে সম্পৃক্ত করে বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করা হবে ।"