হাওড়া, 18 নভেম্বর:ট্রেন লেটের জেরে অনেকেই অনেক কিছু খুইয়েছেন ৷ ভেস্তে গিয়েছে অনেক পরিকল্পনা ৷ এবার ভেস্তে যাচ্ছিল বিয়ে ! কিন্তু, বরের কাতর অনুরোধে সাড়া দিল রেল কর্তৃপক্ষ ৷রেলের তৎপরতায় বিয়ে মণ্ডপে পৌঁছল যাত্রী ৷ রেলের তৎপরতাকে কুর্নিশ বরযাত্রীদের।
বিভিন্ন সময় ট্রেন, বাস মিস করার অভিজ্ঞতা সকলেরই কম-বেশি আছে। অনেক সময়ে নিজের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট বাস অথবা ট্রেনকে চোখের সামনে বেরিয়ে যেতে আফসোস করতে হয়েছে অনেক মানুষকেই। তবে সেই অভিজ্ঞতা যদি বিয়ে করতে গিয়ে হয় ! তাহলে সত্যি চিন্তার বিষয়। ঠিক এমনটাই ঘটেছে শুক্রবার ৷ আর সেই ঘটনার সাক্ষী থাকল হাওড়া স্টেশন। একবার সরাইঘাট মিস হলেই ভেস্তে যেত বিয়ে ৷ বরের আবেদনে তাদের জন্য করিডর করে হাওড়ায় ট্রেন থামাল রেল।
রেল সূত্রে খবর, শুক্রবার মুম্বই থেকে আসা 34 জনের বরযাত্রীর দল যারা হাওড়া স্টেশনে পৌঁছনোর আগে দেখতে পান সরাইঘাটের ছেড়ে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। এদিকে ওই দলে ছিলেন বেশ কয়েকজন বৃদ্ধ-বাচ্চাও। তাই গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস হাওড়ায় ঢুকলেও দৌড়ে 12345 আপ সরাইঘাটে ওঠা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক সেই পরিস্থিতিতে বরের সঙ্গে থাকা আত্মীয় চন্দ্রশেখর ওয়াঘ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে এক্স হ্যান্ডেলে তাদের অসহায়তার কথা উল্লেখ করে রেলকে আবেদন করেন চন্দ্রশেখর বাগ। ট্যাগ করেন রেলমন্ত্রীকেও। এরপরে অবিশ্বাস্য ঘটনাটি ঘটে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তৎপর হন রেলকর্তারাও।
মুম্বই থেকে গুয়াহাটি যাচ্ছিল বর যাত্রীদের দল। প্রথমে তাঁরা ধরেছিলেন গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনে চড়ে হাওড়া। তারপর সেখান থেকে সরাইঘাট এক্সপ্রেস। পরিকল্পনা ছিল এমনটাই। কিন্তু, মাঝরাস্তায় প্রায় তিন ঘণ্টা দেরি করে গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস। তাতেই বিপত্তি! মুম্বই-হাওড়া গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস, যেটি হাওড়ায় দুপুর 1টা 05 মিনিটে পৌঁছনোর কথা ছিল ৷ তারা আশঙ্কা করেছিলেন, হাওড়া-গুয়াহাটি সরাইঘাট এক্সপ্রেস ধরতে পারবেন না ৷ কারণ, বিকেল 4টের দিকে ওই ট্রেনের অসমের উদ্দেশে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। বরযাত্রী-সহ বর স্টেশনের কাছাকাছি এসে গেলেও একটুর জন্য বেরিয়ে যাচ্ছিল ট্রেন। শেষে মাঠে নামলেন রেলকর্তারা। তাতেই শেষ পর্যন্ত মুশকিল আসান হল।
হাওড়ার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার এবং সিনিয়র ডিসিএম হাওড়ার নির্দেশে হাওড়া স্টেশনে মুহূর্তের মধ্যে তৈরি হয়ে যায় বিশেষ করিডর। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও বেশ কিছু সময়ের জন্য হাওড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে সরাইঘাট এক্সপ্রেস। অন্যদিকে, পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করা হয় গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসের চালককেও। দ্রুত তাঁকে ট্রেন নিয়ে হাওড়া স্টেশনে ঢুকতে বলা হয়।
রেল সূত্রে জানা যাচ্ছে, 21 নম্বরে ঢোকার কথা গীতাঞ্জলির, 9 নম্বরে দাঁড়িয়ে সরাইঘাট। ততক্ষণে বরযাত্রীদের সঙ্গে থাকা জিনসপত্র দ্রুত 9 নম্বর প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যাওয়ার জন্য হাওড়া স্টেশনে তৎপর হয়ে ওটেন রেলকর্মীরা। গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসের ঢোকা মাত্রই দ্রুত বরযাত্রীদের সরাইঘাটে তুলে দেন রেল কর্মীরা। অবশেষে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন বরযাত্রীরা। রেলের এই উদ্যোগে আল্পুত সকলেই। খুশি রেল কর্তারাও। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, “রেল সব সময়ই মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, কিছু ক্ষেত্রে আমরা আমাদের ক্ষমতার বাইরে গিয়েও মানুষের জন্য কাজ করি। বরকে তাঁর নতুন জীবনের জন্য শুভেচ্ছা জানাই।”