সোনারপুর, 6 জুলাই: কুকুর নিয়ে ঝামেলার জের ৷ ভোররাতে এক বিজেপি কর্মী ও তাঁর পরিবারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠল ৷ ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সোনারপুরের চৌহাটি এলাকায় ৷ পুলিশ ইতিমধ্যে অভিযুক্ত অর্চন ভট্টাচার্যকে (20) গ্রেফতার করেছে ৷ তিনি চেন্নাই আইআইটির প্রথম বর্ষের ছাত্র ৷
বিজেপি কর্মীকে কোপাল আইআইটি পড়ুয়া (ইটিভি ভারত) অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছেন বিজেপি কর্মী গোবিন্দ অধিকারী, তাঁর স্ত্রী নমিতা অধিকারী এবং ছেলে গৌরব অধিকারী ৷ আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে বাঙুর ও পরে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । তবে ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায় । সোনারপুর থানার পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে । ঘটনায় আটক করা হয়েছে আক্রান্তদের প্রতিবেশী সুভাষ দেবনাথ এবং তাঁর ছেলে সুমিত দেবনাথকে ।
প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, এটি পারিবারিক গোলমাল । কিছুদিন আগে কুকুর মারা নিয়ে এই দুই পরিবারের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ । তারপর থেকেই তাঁদের মধ্যে তিক্ততা বৃদ্ধি পায় । শনিবারের হামলার সঙ্গেও সেই ঝামেলার যোগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে । মূল অভিযুক্ত অর্চন ভট্টাচার্য পশুপ্রেমী হিসাবে পরিচিত এলাকায় ।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, কুকুরের উপর হামলার প্রতিশোধ নিতেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি । সোনারপুরে অধিকারী পরিবারের হামলার ঘটনায় ধৃত অর্চন ভট্টাচার্য সুভাসগ্রাম এলাকার বাসিন্দা । অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র । অর্চনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সুভাস দেবনাথের মেয়ে স্মৃতির । স্মৃতি সোনারপুর মহাবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ।
জানা গিয়েছে, প্রেমিক অর্চনকে অধিকারী পরিবারের লোকজনের খারাপ ব্যবহার করার বিষয়টি জানান ৷ অর্চনের কাছে এই নিয়ে কান্নাকাটি করেন স্মৃতি । বিষয়টি মানতে পারেননি অর্চন । চেন্নাই থেকে তিনি চলে আসেন সোনারপুর । এই ঘটনার আগে থেকেই স্মৃতির বাড়িতে যাতায়াত ছিল অর্চনের । ফলে এলাকা সম্পর্কে সব জানতেন তিনি ।
অর্চনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, তিনি গভীর রাতে এলাকায় আসেন । অধিকারীদের বাড়ি নির্মীয়মাণ । ফলে বাড়িতে ঢোকার ক্ষেত্রে তাঁকে কোনও বাধা পেতে হয়নি । অভিযোগ, প্রথমে বাড়িতে ঢুকে হঠাৎ গৌরব বাথরুমে বের হলে তাঁর উপর হামলা চালান অর্চন । এরপর তাঁর বাবা ও মায়ের উপরেও হামলা চালানো হয় একইভাবে বলে অভিযোগ । যেহেতু তাঁরা এক ঘরেই ছিলেন তাই আঘাত আনা হয় তাঁদের উপর ।
অন্য ঘরে বিজেপি কর্মীর মেয়ে গার্গী অধিকারী থাকায় তাঁর উপর হামলা হয়নি । তবে বাবা, মা ও ভাইয়ের চিৎকারে তিনিও ঘুম থেকে উঠে পড়েন ৷ পাশের ঘরে এসে তাঁদের জখম অবস্থায় দেখে নিজেও চিৎকার শুরু করেন । তাঁর চিৎকার শুনে সেখানে আসেন প্রতিবেশীরা । খবর দেওয়া হয় সোনারপুর থানায় । পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোবিন্দ অধিকারী গত লোকসভা নির্বাচনে 189 নম্বর বুথের বিজেপির এজেন্ট ছিলেন । স্থানীয় বিজেপি নেতা দেবনাথ চক্রবর্তীর কথায়, "ভোটের এক সপ্তাহখানেক আগে একটি কুকুর নিয়ে দুই বাড়ির মধ্যে অশান্তি হয়েছিল । বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছিল । ভোটে গোবিন্দ আমাদের দলের পোলিং এজেন্ট হয়েছিলেন । আমাদের ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়েও ছিল । যাঁরা গোবিন্দদের মেরেছেন তাঁরা তৃণমূল করেন । অশান্তির সময়ে তাঁরা হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, আমরা তৃণমূল করি, আমরা দেখে নেব । বাইরে থেকে কয়েকজন এসেও হুমকি দিয়েছিলেন ।"
যদিও এই অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছেন এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর রাজীব পুরোহিত ৷ তিনি বলেন, "কুকুর মারাকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হয়েছিল । সুভাষ দেবনাথের নামে গোবিন্দ অধিকারী মামলা করেছিল । সোনারপুর থানা বিষয়টি দেখেছে । শনিবার ভোরে আমার কাছে ফোন আসে, গোবিন্দ এবং তাঁর পরিবারকে চপার দিয়ে কোপানো হয়েছে বলে শুনি । কিন্তু এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই । আমাদের ওয়ার্ড শান্তিপূর্ণ । এখানে কোনও রাজনৈতিক ঝামেলা অতীতেও ছিল না, এখনও নেই ।"