চুঁচুড়া,28 নভেম্বর: ত্রিকোণ প্রেমের জেরে যুবককে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত আটজনের মধ্যে সাতজনকে ফাঁসির সাজা দিল হুগলি জেলা আদালত ৷ দোষী সাব্যস্ত একজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৷ বৃহস্পতিবার হুগলি জেলা আদালতের ফার্স্ট ফাস্ট ট্রাক কোর্টের বিচারক শিবশঙ্কর ঘোষ এই সাজা ঘোষণা করেন ৷
এই ঘটনায় আট অভিযুক্তকে চলতি মাসের 25 তারিখ দোষী সাব্যস্ত করেছিল চুঁচুড়া আদালত । চার বছর আগে চুঁচুড়ার যুবক বিষ্ণু মালকে নৃশংস ভাবে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল কুখ্যাত দুষ্কৃতী বিশাল দাস ও তার সাত সঙ্গীর বিরুদ্ধে । সেই ঘটনায় ধড়-মুন্ডু আলাদা করে দেহ 6 টুকরো করা হয়েছিল ৷ ঘটনার পর বিশাল ও তার সঙ্গী-সাথীদের গ্রেফতার করে চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ । দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলার পর হুগলি জেলা আদালতের ফার্স্ট ফাস্ট ট্রাক কোর্টের বিচারক গত সোমবার অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করেন ।
যুবক খুনে কুখ্যাত দুষ্কৃতী-সহ 7 জনের ফাঁসি (নিজস্ব ভিডিয়ো) এদিন আদালতের সামনে বিষ্ণুর হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির দাবি করে পোস্টার হাতে স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছে অনেককে । ত্রিকোণ প্রেমের জেরে 2020 সালের 11 অক্টোবর ঘটে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ৷ চুঁচুড়া শহরের জনবহুল এলাকা রায়ের-বেড়ে বছর তেইশের যুবক বিষ্ণু মালকে বাড়ির সামনে থেকে মোটরবাইকে করে তুলে নিয়ে যায় হুগলির কুখ্যাত দুষ্কৃতী বিশাল দাস ও তার সাগরেদরা । জানা গিয়েছে, বিষ্ণুর প্রেমিকাকে বিশালের পছন্দ ছিল ৷ সেই কারণেই বিষ্ণুকে হুমকি দিচ্ছিল বিশাল ৷
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে যে, বিশাল যেদিন বিষ্ণুকে তুলে নিয়ে যায়, সেই রাতেই চাঁপদানি এলাকায় একটি বাড়িতে তাঁকে নৃশংসভাবে খুন করা হয় । ধড়-মুন্ডু আলাদা করে দেহ ছয় টুকরো করে দেওয়া হয় । খুন করে দেহ টুকরো করার ছবি মোবাইলে তুলে রাখে হত্যাকারীরা । পরে দেহাংশগুলি প্যাকেটে ভরে শেওড়াফুলি ও বৈদ্যবাটির বিভিন্ন জায়গায় জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হয় ।
ফাঁসির দাবিতে আদালতের বাইরে ভিড় (নিজস্ব চিত্র) এই ঘটনার পর থেকেই ফেরার ছিল বিশাল । পরে ক্যানিংয়ের জীবনতলা থানা এলাকায় 3 নভেম্বর কয়েকজনের উদ্দেশে গুলি চালিয়ে সে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে । চন্দননগর পুলিশ তাকে নিয়ে আসে চুঁচুড়া থানায় । বিশালকে জেরার পরই খুনের সঙ্গে যুক্ত বাকি অপরাধীদেরও গ্রেফতার করে পুলিশ । বিশালকে ধরার পরই বিষ্ণুর কাটা মুন্ডুর সন্ধান মেলে । বিশালের বয়ান অনুযায়ী বৈদ্যবাটি খালের ধার থেকে প্লাস্টিকে মোড়া অবস্থায় মুন্ডু উদ্ধার করে পুলিশ । তখনই মেলে বিষ্ণুর হাতেরও একটি টুকরো, যেখানে তাঁর প্রেমিকার নামে ট্যাটু করা ছিল ৷ সেই দেখেই পুলিশ বিষ্ণুকে শনাক্ত করে বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় ৷
এই মামলায় শেখ মিন্টু রাজসাক্ষী ছিল । তাকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছে আদালত । আজ বিচারক শিবশঙ্কর ঘোষ বিশাল দাস, রামকৃষ্ণ মণ্ডল, রথীন সিংহ, রাজকুমার প্রামাণিক, রতন ব্যাপারী, বিনোদ দাস ও বিপ্লব বিশ্বাস - এই সাতজনকে ফাঁসির সাজা শোনান ৷ আরেক দোষী সাব্যস্ত মান্তু ঘোষের সাত বছরের কারাদণ্ড হয় ।
এই মামলার সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, "প্রায় সাড়ে তিন বছরের লড়াই । ফার্স্ট ফাস্ট ট্রাক কোর্টে একটি বিরলের মধ্যে বিরলতম খুনের মামলা ছিল । আদালতকে মামলার পৈশাচিকতা বোঝাতে পেরেছি । তাই সাতজনের ফাঁসির রায় দিয়েছেন বিচারক ।"
বিষ্ণুর মা কুন্তী মাল বলেন, "এই মাসেই আমার ছেলের জন্ম মাস । আর এই মাসেই আদালত তার খুনে সাজা দিয়েছে । এতে আমাদের আইনের উপর ভরসা পেয়েছি ।"
চন্দননগর পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি বলেন, "এই কেসের অফিসার ছিলেন তমাল মোহান্তি । তিনি এই মামলায় ভালো কাজ করেছেন । প্রথমে বিষ্ণুর বান্ধবী পরিবারকে খবর দেয় যে বিশাল বিষ্ণুকে তুলে নিয়ে গিয়েছে । এরপর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু হয় । চুঁচুড়া থানার পুলিশ ও কমিশনারেটের পুলিশ একসঙ্গে ভালো কাজ করেছে ।"