আলিপুরদুয়ার, 28 অগস্ট: উদ্ধার হয়েছিল নদীতে ভেসে আসা চার মাসের হস্তিশাবক ৷ তার সঙ্গে চার মাস রাত্রিবাস করতে হয়েছিল জলদাপাড়ার বনকর্মীকেও । উদ্দেশ্য, তাকে বাঁচানো ৷ এখন দিব্য সুস্থ-সবল বীর । বীরের বীরত্ব এখন মাতিয়ে রেখেছে জলদাপাড়াকে । তোর্ষার স্রোতে ভেসে যাওয়া হস্তীশাবককে বাঁচিয়ে-বড় করে খুশি জলদাপাড়াও ৷
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা তোর্সা নদীতে ভেসে যাওয়া এক হস্তিশাবককে চার বছর আগে উদ্ধার করেছিলেন জাতীয় উদ্যানের কর্মীরা । চার বছর পর হস্তিশাবক ‘বীর’কে বাঁচিয়ে তোলার গল্প ইটিভি ভারতের সঙ্গে ভাগ করলেন জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বিভাগীয় বন আধিকারিক প্রবীণ কাসোয়ান।
জলদপাড়ার অন্য ছবি ! (ইটিভি ভারত) তাঁর কথায়, "2020 সালের সেপ্টেম্বর মাসে বর্ষা শেষ হওয়ার পর তখনও তোর্সা নদীতে প্রবল স্রোত ৷ তেমনই একটি দিনে, জাতীয় উদ্যানের কোদাল বস্তি রেঞ্জের বনকর্মীরা মাত্র কয়েকদিনের একটি হস্তিশাবককে নদীতে ভেসে যেতে দেখেন ৷ এই ঘটনা নজরে পড়তেই নিজেদের জীবন বাজি রেখে প্রবল স্রোতের মধ্যেই তোর্সাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন শাবকটিকে উদ্ধার করতে ৷ "
বেশ কয়েক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় শাবকটিকে খুব দুর্বল অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হন । যদিও শাবকটির আশেপাশে সে সময় মা হাতির কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি ৷ এরপর ওই শাবকের স্থান হয় জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের পিলখানায় । চার বছর ধরে শাবকটিকে প্রায় মানব শিশুর মতো মতো চিকিৎসা ও যত্ন করে বড় করা হয় । প্রথম দিকে শাবকটিকে ল্যাকটোজেন দুধ এবং ফল খাওয়ানো হত । পরে ধীরে ধীরে ঘাসপাতা-সহ অন্যান্য খাবার দেওয়া শুরু করা হয় ৷
এই শাবকটিকে ভালোবেসে বড় করার পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি, তিনি হলেন চেরন সুব্বা ৷ তিনি শাবকটিকে উদ্ধার করার দিন থেকে প্রথম চারমাস শাবকটির যত্ন নিতে পিলখানাতেই ঘুমোতেন । তবে বর্তমানে সেটির দেখাশোনা করছেন রোহিত ইসলাম ৷
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বিভাগীয় বনাধিকারিক প্রবীণ কাসোয়ান জানান, জলদাপাড়া পাতাওয়ালার একটা ইতিহাস আছে ৷ এখানে ভালো মাহুত পাতাওয়ালা আছে । নদী থেকে 7-10 দিনের বাচ্চাকে উদ্ধার করা হয়েছিল । ছোট হাতিকে দুধ খাওয়াতে হয় ৷ ল্যাকটোজেন খাওয়ানো হয়েছিল ৷ চারমাস যাবৎ চেরন সুব্বা বাচ্চাটি সঙ্গেই রাতে ঘুমাতো । বর্তমানে জাতীয় উদ্যানে এমন উদ্ধার হওয়া চারটি হস্তিশাবক আছে ৷ সবগুলোর মধ্যে এই ‘বীর’ সবচেয়ে সুস্থ ও সক্রিয় হস্তিশাবক ।